রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন

668

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে রাশিয়ার সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা রাশিয়ার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে।

এক বছরে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের যে ব্যয়, তার চেয়েও বেশি ব্যয় হবে এক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নেই। বিশাল এই ব্যয় মেটাতে রাশিয়ার কাছ থেকে চার শতাংশ হারে এ ঋণ নেওয়া হচ্ছে। ২০ বছর মেয়াদি এই ঋণের প্রথম ১০ বছর রেয়াত পাওয়া যাবে। আর প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।

বিশাল ব্যয়ের এই প্রকল্পে যাওয়ার পেছনে যুক্তি হিসেবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে খরচ বেশি হলেও বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কম হবে।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে এটি আমাদের ড্রিম প্ল্যান্ট। রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যখন জীবিত ছিলেন, তিনি নিজে রাশিয়ায় গিয়ে এই প্রকল্পটি উপস্থাপন করেছিলেন। তাদের রাজি করিয়েছিলেন, তারা অর্থায়ন করবে।’

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ান ফেডারেশন এবং বাংলাদেশের পক্ষে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত চারটি চুক্তির আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারের ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যার মধ্যে মোট সরবরাহে ১০ শতাংশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে সরকারের। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দুটি ইউনিটে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে, যাকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

মোস্তফা কামাল বলেন, ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের খরচ প্রথম দিকে বেশি। কিন্তু লং টার্ম পারসপেকটিভ যদি হিসাব করি, এটার খরচ কম। ১৩২০ মেগাওয়াট একটা প্ল্যান্টে এক বছরের কয়লা কিনতে লাগবে ১০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট ২৪ মেগাওয়াট চালাতে গেলে এক হাজার কোটি টাকা বেশি আমাদের বার্ষিক খরচ নেই। এতে করে লং টার্ম বেসিসে, এটার লাইফটাইম অনেক বেশি—প্রায় ৬০ বছর এটা ব্যবহার করা যাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে।’

একনেক বৈঠকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ছাড়া ১১টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে চীনের অর্থসহায়তায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পও রয়েছে। এর আওতায় ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণসহ বেশ কিছু উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। বৈঠকে অনুমোদিত ১২টি উন্নয়ন প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৫২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম একনেক সভায় একসঙ্গে বিশাল ব্যয়ের এসব উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলো।