রাজশাহী-বরিশালে এগিয়ে আওয়ামী লীগ, সিলেটে বিএনপি

589

কেন্দ্র দখল, ব্যালট সিল মারাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের মধ্য দিয়ে রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল আসতে শুরু করেছে। বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, রাজশাহী ও বরিশালে আওয়ামী লীগ এগিয়ে রয়েছে। আর সিলেটে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি।

৩০ জুলাই, সোমবার সকাল ৮টার দিকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় গণনা।

ফলাফল

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীতে ১৩৮ কেন্দ্রের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন পেয়েছেন এক লাখ ৬৬ হাজার ৩৯৪ ভোট ও বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৪৯২ ভোট।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১২৩ কেন্দ্রের মধ্যে ১০৭টি কেন্দ্রের ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ পেয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৮০৩ ভোট ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার পেয়েছেন ১৩ হাজার ৪১ ভোট।

আর সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রের ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী পেয়েছেন ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বদরউদ্দীন আহমদ কামরান পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। কামরান পিছিয়ে রয়েছে ৪ হাজার ৬২৬ ভোটে।

অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জন

তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর হামলা, গ্রেফতার ও কেন্দ্র থেকে নিজেদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি, বাসদ, ইসলামী আন্দোলন ও মেয়র পদে লড়াই করা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

বরিশালের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া ও সিল মারার প্রতিবাদ করায় নৌকার সমর্থকরা চড়াও হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী।

বরিশালে বিএনপি, বাসদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোট বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছে। প্রথমে বেলা ১১টার দিকে নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ওবাইদুর রহমান। পরে দুপুর ১২টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি ও বাসদ।

সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের ঘোষণার পরে বিএনপি ও বাসদের নেতাকর্মীরা সদর রোডে মিছিল বের করেন। সে সময় তারা প্রহসনের নির্বাচনের নিন্দা জানিয়ে স্লোগান দেন।

প্রথমে সিলেট সিটি নির্বাচনের ভোট বাতিলের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) মনোনীত প্রার্থী মো. আবু জাফর। পরে আরিফুল হক ভোট প্রত্যাখ্যান করেন। এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে নাগরিক ফোরামের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সরকার দলের জঘন্য কর্মকাণ্ডে সিলেটবাসী হতবাক। এর মাধ্যমে সিলেটের সৌহার্দ্য-সম্প্রীতিমূলক রাজনীতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।’

কারচুপির অভিযোগ এনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভোট প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন থেকে বুলবুল এ দাবি জানান।

মেয়র পদপ্রার্থী বুলবুল অভিযোগ করেন, ‘গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পরে মানুষ ইয়াহিয়া খানকে দেখেছে, তারপরে ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে বিপন্ন গণতন্ত্র দেখল।’

রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রত্যাহার দাবি করে বুলবুল বলেন, ‘এবার প্রিজাইডিং অফিসার ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করা হয়েছে। ভালো নির্বাচনের জন্য তত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন।’

বুলবুল আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কাছে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। তাই তামাশা, ষড়যন্ত্র ও ধোঁকা দেওয়ার নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করছে বিএনপি। এই সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’

ইসলামী আন্দোলনের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান

কেন্দ্র দখল ও অন্যান্য অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগে তিন সিটির নির্বাচন বর্জন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আজ সোমবার বেলা ৩টার দিকে এই রাজনৈতিক দলটি তিন সিটিতে নির্বাচন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘খুলনা-গাজীপুরের চেয়েও জঘন্য নির্বাচন হয়েছে। বরিশালে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা ছিল। সিলেটে অন্তত ৭০টি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে। জাল ভোট, জোর করে নৌকা প্রতীকে সিল মারাসহ এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।’

নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য

তিন সিটি করপোরেশন- রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে সার্বিকভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

নুরুল হুদা বলেন, ‘রাজশাহীর ১৩৮টি ভোটকেন্দ্রের সবগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিলেটে ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে দুটি বাদে বাকিগুলোও শান্তিপূর্ণ ছিল। সেই সাথে বরিশালে সকালে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সার্বিকভাবে শান্তিপূর্ণ ছিল।’

সোমবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনে নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সিইসি এসব কথা বলেন।

তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্ট কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি খুশি।’

সার্বিক নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে নুরুল হুদা বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বরিশালে কিছু সমস্যা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অনিয়মের সংবাদ পেয়ে আমরা ১৫টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করেছি।’

এ ছাড়া অনিয়মের কারণে বরিশালের আরেক কেন্দ্রে নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে বলে জানান সিইসি।

সিইসি বলেন, ‘অনিয়মের ব্যাপারে তদন্ত করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’ নির্বাচন কমিশন সিটি নির্বাচনে এমন অনিয়ম প্রত্যাশা করেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নুরুল হুদা দাবি করেন, রাজশাহীতে অনিয়ম হয়নি। তাই সেখানে কোনো কেন্দ্র স্থগিত করা হয়নি।

নির্বাচনি লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেছেন যারা

চলমান নির্বাচনে রাজশাহীতে মেয়র পদে লড়ছেন পাঁচজন। আর বরিশাল এবং সিলেটে সাত জন করে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মেয়র পদপ্রার্থীদের মধ্যে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বরিশালে আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদেক আবদুল্লাহ ও বিএনপির মুজিবুর রহমান সারওয়ার এবং সিলেটে আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন কামরান ও বিএনপির আরিফুল হক সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন।

তিন সিটির ১৫টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারের পরিবর্তে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে বরিশালে ১১টি কেন্দ্রে এবং রাজশাহী ও সিলেটে ২টি করে কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়।

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ পাঁচজন মেয়র পদে এবং ৩০টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬০ জন ও নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০টি কাউন্সিলর পদে ৫২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বরিশালে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও বিএনপির মজিবর রহমান সরওয়ারসহ সাতজন। ৩০টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯৫ জন ও নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০টি কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন নির্বাচনি দৌঁড়ে সামিল হয়েছেন।

সিলেটে আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরীসহ সাতজন মেয়র পদে এবং ২৭টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২৭ জন ও সংরক্ষিত ৯টি কাউন্সিলর পদ ৬৬ জন নারী নির্বাচন করছেন।

গত ২৯ মে নির্বাচন কমিশন এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।