যৌন হয়রানি: অভিযুক্ত শিক্ষক যা বললেন

717

সহকর্মী তিন নারী শিক্ষককে যৌন হয়রানির অভিযোগে ময়মনসিংহে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রুহুল আমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ১৮ জুলাই তাকে বরখাস্ত করা হয়। সেসময় সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রুহুল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি কাউকে কোনো ধরনের যৌন হয়রানি করিনি। আমাদের বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের চূড়ান্ত পরীক্ষার মৌখিক পর্বে নয়জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) এ নিয়ে আমাদের একটি সভা হয়। ওই সময় আমার সঙ্গে অভিযোগকারী তিনজনসহ একাধিক শিক্ষকের মতবিরোধ হয়। এর জের ধরে তাঁরা আমার নামে বানোয়াট অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়ে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।’

এ বিষয়ে সম্প্রতি তিনি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তার বক্তব্য পরিষ্কার করেছেন। নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলোঃ

২০১১ সালের জানুয়ারী মাসের ১৮/১৯ তারিখে বর্তমান থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগে (তৎকালীন নাট্যকলা বিভাগ) প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি। তারপর মাস ছয়েক পর বর্তমান বিভাগীয় প্রধান ইসমত আরা ইলা খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

উল্লেখ্য তখন ইলা সহ আমরা আরও তিনজন পুরুষ সহকর্মী অবিবাহিত ছিলাম। বিভাগের তৃতীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তখন দায়িত্ত্ব পালন করছিলাম। তারপর সম্ভবত মাস ছয়/সাত পর ইলার বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা আমরা জানি এবং আমারও একই বছর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। আমাদেের সবার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল খুবই ভালো।

তারপর সময়ের আবর্তনে বিভাগে ব্যাচ বাড়ে এবং সেই সাথে শিক্ষকও বাড়তে থাকে। ইতিমধ্যে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির প্রথম নির্বাচিত কমিটিতে আমি সভাপতি হিসেবে জয়লাভ করি। একই বছর বিশ্বব্যাংকের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরী কমিশন হতে প্রকল্প জমা দিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ৬৬ লক্ষ টাকারও বেশি অনুদান লাভ করি। এটি ছিল আমার জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি! বিভাগ একেবারেই অত্যাধুনিক রূপ লাভ করে। যা বাংলাদেশের নাট্যশিক্ষায় প্রথম। একাধারে বিভাগ উন্নয়ন, একাডেমিক কাজ সহ শিক্ষক পরিবার তথা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে যাই। একের পর এক কাজের সংশ্লষ্টিতায় অনেকের সাথে যেমন সুসম্পর্ক তৈরী করে আবার অনেকের সাথে দুরত্বও তৈরী হয়। ইতিমধ্যে সমিতির নেতৃত্ব, বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পরম্পরার মতোই পরিবর্তিত হয়। আবার সহকারী প্রক্টর, পরবর্তীতে একমাত্র ছাত্র হলের প্রভোষ্ট এর মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ত্ব গ্রহণও করতে হয়।

বেড়ে যায় শিক্ষার্থীদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ এখানেও আমার সর্বোচ্চ মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করি। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সাথে একরকম বাধ্যতামূলক যোগাযোগ আমাকে আরও অভিজ্ঞ করে তোলে। হলের প্রভোষ্ট মেয়াদকালীন যেখানে হলে কোন আবাসিক ছাত্র ছিলনা, সেখানে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় অনেক শিক্ষার্থীর হুমকি মাথায় নিয়ে থানায় ডায়েরী করে নিরাপত্তা প্রহরী বেষ্টিত দিনরাত যাপন করতে হয়েছে। বুঝলাম, বন্ধু এবং শত্রু সমানভাবে তৈরী হচ্ছে।

পরম্পরায় ভিসি মহোদয়গণ পরিবর্তিত হোন ৷ আমাদেরও সময় ভালো কাটে, মন্দ কাটে। বুঝলাম, আমি আর সাধারন শিক্ষক নই। আমার সাথে জড়িয়ে গেছেন অনেকজন! আমি ভালো থাকলে তারাও ভালো থাকেন, আমার খারাপ গেলে হয়তো তাদেরও দিন রাত খারাপ যায়! নিজেকে আবিস্কার করলাম। দেখি, এখন আমি একজন রাজনৈতিক শিক্ষক হয়ে গেছি। যদিও এমনটি কোনদিনই চাইনি! ছাত্র রাজনীতি আর শিক্ষক রাজনীতি কখনোই এক নয়। আর একটি নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমার মনে হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে বেশিরভাগ শিক্ষক রাজনীতি করেন। বিষয়টা নিজের কাছে চিন্তার খোরাক হয়ে গেল!

ইতিমধ্যে নিজেদের মাঝে একাধিক বিভাজন, ব্যক্তি স্বার্থ, লাভ ক্ষতি দলীয় আদর্শকে চরমভাবে ব্যহত করছে এবংকি আমাকেও!!

সে যাই হোক, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের যথাযথ উত্তর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মেনেই দিব। কিন্তু এতোবড় অভিযোগের খন্ডন- বক্তব্য মিডয়াকে বা কাউকে এক কথায় দেয়া যাবেনা। অন্ততঃ আমি পারছিনা! যেহেতু জাতির কম বেশি অনেকেই জানেন আমি একজন স্পর্শকাতর বিষয়ে অপরাধী !

সুতরাং, একটু করে হলেও স্পর্শকাতরভাবেই (ঠিক উত্তর নয় বরং এটাকে ভাব সংকোচন বলাটাই বোধকরি ভালো!) দেয়ার চেষ্টা করছি মাত্র:-

“যখন চল্লিশোর্ধ বিবাহিত কোন শিক্ষিত ব্যক্তিকে (সেখানে যদি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক!) আরেকজন বিবাহিত শিক্ষিত ব্যক্তি/সহকর্মীনি যৌণ নিপীড়নের মতো গুরুতর বিষয় দিয়ে অভিযুক্ত করেন সেটা শুধুমাত্র অভিযোগ নয় বরং জাতির জন্য কলংকও বটে! তখন মনে করা উচিত এখানে আলো ছিল, মায়া ছিল… তাই কলঙ্ক হয়েছে! তাই, আগে আলো দেখুন তারপর দেখবেন কলঙ্ক নিজগুনেই বের হয়ে আসছে।”

তারপর বলুন, কে অপরাধী?

ধন্যবাদ।।

উল্লেখ্য, ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগে জানা যায়, শিক্ষক রুহুল আমিন বিভাগের ওই তিন শিক্ষককে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করে আসছিলেন। সহকর্মী বলে বিষয়টি নিজেদের মধ্যে চেপে রেখেছিলেন ভুক্তভোগীরা। সংযত হওয়ার জন্য অনেকবার রুহুল আমিনকে বুঝিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভা শেষে কয়েক শিক্ষকের সামনে আবার যৌন হয়রানির শিকার হয়ে বিষয়টি আর চাপা রাখতে পারেননি তারা। পরে ওইদিন বিকেলেই ভুক্তভোগী তিন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।