যে উদ্যোগ মানবিকতা শেখায়

1415

ঘটনাটি রোজার। রাজধানীতে রোজাদারদের ইফতার সেবা দিয়ে মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ‘এসইএল চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন’। রাজধানীর পান্থপথে এসইএল সেন্টারের সামনে প্রতিদিন ইফতারের পসরা সাজিয়ে তারা অপেক্ষা করতো রোজাদারদের জন্য। আজান পড়লেই যাতে পথচারী রোজাদাররা হাতের কাছে ইফতার পেয়ে রোজা ভাঙতে পারেন, সে জন্যই এমন উদ্যোগ। এর পেছনে কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য যে নেই, সেটা স্পষ্ট হয়ে গেছে আয়োজকদের আন্তরিকতা আর সেবার নমুনা দেখেই।33207309_10209357351209426_7983860340838367232_n

প্রতিদিন গড়ে ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ রোজাদার এ সেবা গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক ইবনুল সাইদ রানা। তিনি বলেন, আমরা মূলত পথচারি রোজাদারদের কথা মাথায় রেখে এ আয়োজন করেছি। এতো বেশি মানুষের সাড়া পেয়েছি, যা অবিশ্বাস্য। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা যেমন নিরন্তর সেবা দিয়ে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করেছে, তেমনি মানুষও আমাদের এ কাজে সন্তুষ্ট হয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস। প্রতিদিন এতো মানুষকে ইফতার সেবা দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।’

এ ইফতার সেবা সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করেছে নিম্ন আয়ের মানুষজনই। ইফতারেই আগে রীতিমতো ভীড় লেগে যেতো এসইএল সেন্টারের সামনে। রিকশা চালকরা তাদের রিকশা থামিয়ে এ আয়োজনে অংশ নিতেন, অংশ নিতেন খেটে খাওয়া মানুষও। ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে পথচারি রোজাদারদের দেখা মিলতো। সবাইকেই পরম যত্নে ইফতারের প্লেট এগিয়ে দিতেন ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাকর্মীরা।

এ উদ্যোগ প্রসঙ্গে ধানমণ্ডির রায়হান আলম বলেন, অফিস শেষ করে একদিন বাসায় যেতে দেরি হয়ে যায়। পথেই মাগরিবের আজান পড়ে যায়। তখন একজনের ডাকে আমি ফিরে তাকাই। আমার দিকে তিনি ইফতারের প্লেট বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিশ্বাস করবেন না, তখন কী যে আনন্দ লেগেছে। মন থেকে তাদের জন্য দোয়া করেছি আমি।’

32805393_2027946470790444_1031016490066771968_nঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারুফ আল হাসান বলেন, ‘ সমাজে বিত্তবানের অভাব নেই। কিন্তু চিত্ত সম্পন্ন মানুষের অভাব আছে। এ ইফতার সেবায় আমরা মুগ্ধ। অন্যরাও ভালো কাজে এভাবে এগিয়ে এলে সমাজে শান্তি মাত্রা বেড়ে যাবে।’

তবে রোজার মাসের এমন আয়োজনকে মাস কেন্দ্রিক না রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন সবাই। ‘এমন উদ্যোগ মানবিকতা শেখায়’ মন্তব্য করে কলেজ শিক্ষক আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তো এমন আয়োজন দেখে সত্যিই অবাক হয়েছি। ধারণা ছিলো- আজকাল ভালো কাজের সংখ্যা কমে গেছে। কিন্তু না, এ উদ্যোগ দেখে আমি আবার বিশ্বাস করতে চাই- ভালো কাজের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এমন উদ্যোগ আমাদের মূল্যবোধ জাগ্রত করে, মানবিকতা শেখায়।’

তিনি বলেন, তবে রোজার মাসে এ সেবা দিয়ে তারা ভীষণ ভালো করেছে। রোজার পরে এখন আরও অনেক ভালো কাজ করার সুযোগ আছে। সেগুলো খুঁজে খুঁজে করাটাই হবে উত্তম মানুষের দায়িত্ব। সাহস আর শক্তি জোগানোর মানুষের অভাব হবে না নিশ্চয়ই।’

এসইএল চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনও তাদের ভালো কাজ রোজা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষ করে দেয়নি। সারাবছর নতুন নতুন নানা উদ্যোগ নিয়ে মানুষে পাশে দাঁড়াবে বলেই জানিয়েছে সংগঠনটির সমন্বয়ক ইবনুল সাইদ রানা।