মারা যাওয়ার পরেও আইসিইউতে ‘রোগী’

829

রাজশাহী মহানগরীর লক্ষীপুরে অবস্থিত বেসরকারী সিডিএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মৃত ব্যক্তিকে ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রেখে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ওঠেছে। এ নিয়ে রোগীর স্বজন ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিহতদের স্বজনরা লাশ নিয়ে দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থান করেন।

মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম অভিযোগে জানান, তার বাবা তোফাজ্জল হোসেনকে অসুস্থ অবস্থায় গত ১০ জুলাই রাত আনুমানিক ৮টার দিকে সিডিএম হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করেন। হাসপাতালে ভর্তির তিন দিন পার হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারের কারো সঙ্গে তার বাবাকে সাক্ষাৎ করতে দেননি। তবে বৃহস্পতিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের থেকে ৬৫ হাজার টাকা বিল নেয়। বিল নেয়ার পর বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তার বাবার শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া লাগবে। কর্তৃপক্ষের এমন কথা শুনে তারা বলেন যে, লাইফ সাপোর্ট দিলে তার বাবা বাঁচবেন কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান, বাঁচবে কী না তা জানি না, তবে বিল দেওয়া লাগবে।

কর্তৃপক্ষের এমন কথায় তারা জানান যে, ভালো না হলে লাইফ সাপোর্ট দেওয়ার দরকার নেই। বাড়ি নিয়ে চলে যাবো। কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কথা বলে দুপুর থেকে রাত ৮টা বাজিয়ে দেয়। এরপর বলে বাড়ি নিয়ে যেতে হলে, অক্সিজেন দেওয়া লাগবে বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসতে হবে। চিকিৎসকের কথামত তারা অক্সিজেন নিয়ে আসেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর কাছে স্বজনদের কাউকে যেতে না দিয়ে, রোগীকে জোর করে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর অক্সিজেন লাগানো হলে দেখতে পান তার বাবা বেঁচে নেই। বিষয়টি সন্দেহজনক হলে তারা লাশ না নিয়ে রাজপাড়া থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে থানার একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযোগ আমলে নিয়ে লাশ ময়নাতদন্ত করতে হবে বলে জানান। কিন্ত রোগীর লোকজন ময়নাতদন্ত করবেন না অভিযোগ না দিয়েই লাশ নিয়ে চলে যান।

মৃতের ছেলে রফিকুল অভিযোগে আরো বলেন, তার বাবা দুপুরেই মারা গেছেন। হয়তো শুধু টাকার জন্য লাইফ সাপোর্ট নাটক করছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যাতে তারা আরো কিছু বিল পেতে পারেন। তারা অন্যায় করেছেন। এর বিচার দাবি করছি। ময়নাতদন্ত না করায় থানায় অভিযোগ করতে পারেননি। আল্লাহ যেন তাদের বিচার করেন।

এদিকে, নাম না প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সিডিএম হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছে। এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়টি হস্তক্ষেপ করা দরকার। তাহলে অনেকে মানুষ প্রতারিত হওয়া থেকে বেঁচে যাবে। মৃত তোফাজ্জল হোসেন নগরীর বোয়ালিয়া থানার রামচন্দ্রপুর বাসার রোডের বাসিন্দা।

এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে থাকা এসআই হায়দার বলেন, থানায় অভিযোগ দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হতো। কিন্তু স্বজনরা মৃতের ময়নাতদন্ত করবেন না এজন্য অভিযোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে সিডিএম হাসপাতালের চিকিৎসক ও ব্যবস্থাপকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।