মাংসের দাম বেড়েই চলেছে

1592

সিটি করপোরেশনের মাংসের দাম নির্ধারণ করা মানে আদতে দামটা বাড়িয়ে দেওয়া-এ বিষয়টি এখন ভালোই জানা ঢাকাবাসীর। বাজার নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতায় নির্ধারিত সেই দামের চেয়েও বেশি দামে কিনতে হয় মাংস। বছর ঘুরতে না ঘুরতে মাংসের দাম বৃদ্ধি পায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে। এ বাস্তবতায় সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের নির্ধারণ করে দেওয়া দামে মাংস কেনা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ভোক্তারা।

সূত্রমতে, ২০১০ সালে এক কেজি গরুর মাংসের নির্ধারিত দাম ছিল ২৫০ টাকা। ২০১৪ পর্যন্ত প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম দুইশ’র ঘরেই আটকে ছিল। তবে ২০১৫ সালে এসে রীতিমতো দৌড়াতে শুরু করে গরুর মাংসের দাম। ভারতীয় গরু কম আসছে-এই অজুহাত দেখিয়ে ইচ্ছামতো মাংসের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর ৩৮ বছরের রেকর্ড ভেঙে মাংসের দাম নির্ধারণ করেনি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এ সুযোগ কাজে লাগাতে ভোলেননি অসাধু মাংস ব্যবসায়ীরা। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি কেজিপ্রতি গরুর মাংসের দাম পড়ে ৩৫০ টাকা। এরপর বছর না ঘুরতেই দাম বৃদ্ধি পেয়ে কেজিপ্রতি গরুর মাংস ৩৮০ থেকে ৩৯০ টাকা দরে বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে এসে ৪০০ পেরিয়ে যায় এ দাম। কোথাও কোথাও ৪৫০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করা হয় গরুর মাংস। এ সময় সমানতালে বেড়েছে খাসিসহ অন্যান্য মাংসের দামও।

দাম বৃদ্ধির এই ধারাবাহিকতায় মাংস ব্যবসায়ীদের ইচ্ছাতেই সম্প্রতি নতুন করে রাজধানীতে মাংসের দাম নির্ধারণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। রমজানকে সামনে রেখে গত ২৬ মে নগর ভবনে মাংস ও কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ডিএসসিসি। সভা থেকে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪২০ টাকা, মহিষ ৪০০, খাসি ৫৭০ এবং ভেড়া ও বকরির মাংস ৪৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে এই দাম ঠিক করা হয়। বরাবরের মতো ভোক্তা বা ভোক্তা সংশ্লিষ্ট কারও উপস্থিতি সেখানে ছিল না।
এ নিয়ে আপত্তি তুলেছে ভোক্তা ও ভোক্তা অধিকার সংক্রান্ত সংগঠনগুলো। তাদের অভিযোগ, রমজান এলেই মহানগরীর মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে বসে সিটি করপোরেশন। কিন্তু এ সভায় কখনই ভোক্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। ফলে দাম নির্ধারণের জন্য মতবিনিময়টা হয় দ্বিপাক্ষিক। ভোক্তাদের মতামত এবং পরামর্শকে অগ্রাহ্য করে বছরের পর বছর ধরে মাংস ব্যবসায়ী ও সিটি করপোরেশন এই দাম নির্ধারণ করে আসছে। ফলে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের স্বার্থ বিবেচিত হয়নি কখনই। মূলত ব্যবসায়ীদের ইচ্ছাতেই এভাবে দাম নির্ধারিত হয়ে আসছে।

ভোক্তাদের অভিযোগ, একে তো দাম নির্ধারণে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। অন্যদিকে বাজারে মাংস কিনতে গিয়েও সবসময়ই তাদের ঠকতে হচ্ছে। সিটি করপোরেশন থেকে বিভিন্ন শ্রেণিতে মাংসের দাম নির্ধারণ করা হলেও পাওয়া যায় শুধু গরু আর খাসির মাংস। তবে ছাগল, ভেড়া আর মহিষের মাংস কোথায় যায়। এভাবেই বেশি দামে কিনে প্রায়ই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ভোক্তারা।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এটা কোনোভাবেই ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ করা নয়। সিটি করপোরেশনের এই দাম নির্ধারণ দেখে মনে হয়, তারা শুধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করছেন, ভোক্তাদের কথা ভাবছেন না। শুধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করে এসব ক্ষেত্রে ভোক্তাদের মতামত বিবেচনায় নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, ?মাংসের যে দাম সিটি করপোরেশন নির্ধারণ করে দিয়েছে এটাও তারা ঠিক রাখতে পারবেন কি না তাতেও সন্দেহ আছে।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ভারতীয় গরুর সরবরাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি চামড়া বিক্রিতে মন্দাভাব বিরাজ করায় গরু-খাসির মাংসের দামে এর প্রভাব পড়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় নির্ধারণ করে দেওয়া মাংসের দাম অযৌক্তিক নয়। তবে নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মে ডিএসসিসির নগর ভবনে মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে মাংস ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় সভায় রমজানে মাংসের বিক্রয়মূল্য ঠিক করা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি কেজি মাংসে ২০০ গ্রাম হাড় দেওয়া যাবে বলে জানানো হয়।

রেজা করিম: সাংবাদিক, সকালের খবর