ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে এইচএসবিসি?

579

বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)। ব্যাংকটি বাংলাদেশ শাখা বন্ধ করে দিতে চায়। এখনই বিষয়টি প্রকাশ্য না হলেও সে পথেই হাঁটছে আন্তর্জাতিক ব্যাংকটি।

সূত্র বলছে, বুধবার একটি শাখা বন্ধ করে দিয়েছে এইচএসবিসি। এর আগে বন্ধ করা হয়ে আরও দুটি। ২০১৭ সালে আরো তিনটি শাখা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে ব্যাংকটি।

বাংলাদেশে ব্যাংকটির ১৪টি শাখা ছিল। তিনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এর শাখা সংখ্যা ১১টি।

নির্ভরযোগ্য ওই সূত্র বলছে, একইসঙ্গে করপোরেট গ্রাহক ও জেনারেল হিসাবও কাটছাঁট করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেয়ার পথেই হাঁটছে ব্যাংকটি।

জানতে চাইলে এইচএসবিসির প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা তালুকদার নোমান আনোয়ার নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “আমরা বাংলাদেশের বাজারে শাখা কমাচ্ছি, এটা ঠিক। এটি আমাদের ব্যবসায়িক কৌশল।”

তবে কি এইচএসবিসি বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিচ্ছে- প্রশ্নে তালুকদার নোমান আনোয়ার বলেন, “না তা নয়। এইচএসবিসি বাংলাদেশের বাজারকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে এইচএসবিসি বিদায় নিচ্ছে তা ভাবার কোনো কারণ নেই।”

জানা যায়, মিরপুর শাখাটি বন্ধ করা হয় ২০১৪ সালে। এছাড়া চলতি বছরই লালবাগ শাখা বন্ধ করা হয়। আর ময়মনসিংহ শাখার শেষ কার্যদিবস ছিল ৩০ নভেম্বর বুধবার।

এছাড়া জানা গেছে, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের শাখাটি বন্ধ হয়ে যাবে যে কোনো সময়।

ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, সিলেটের শাখাটিও বন্ধ করার চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ। আগামী বছরের যে কোনো সময় ব্যবসা বন্ধ করে সিলেটকে বিদায় জানাবে প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া বনানীর শাখাটিও চালু থাকবে কিনা তা নিয়ে ভাবছে এইচএসবিসি।

সূত্রে জানা গেছে, শুধু শাখাই কমাচ্ছে না এইচএসবিসি, ব্যাংকটি করপোরেট গ্রাহক হিসেবে নতুন কাউকে নিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে বলে সূত্রের খবর। একই সঙ্গে সাধারণ কোনো গ্রাহক ব্যাংক হিসাব রাখতে পারছেন না। সিলেক্ট হিসাব ক্যাটাগরিতে কেবল ওইসব গ্রাহকের হিসাব চলছে যাদের ব্যাংক হিসাবে মাসে ১০ লাখ টাকা লেনদেন হচ্ছে।

সূত্র বলছে, এরই মধ্যে প্রায় ২২ হাজার গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকটি। এতে অনেক গ্রাহকই ব্যাংকটির প্রতি ক্ষুব্ধ। তারা এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত চেয়েছেন। ব্যাংকটির এই খামখেয়ালিপনার জন্য ব্যবস্থা নিতেও বলেছেন।

জানা গেছে, মতিঝিলের সিটি সেন্টারে ব্যাংকের একটি শাখা রয়েছে। সেটিও এখন বন্ধ। গত ১৬ অক্টোবর থেকে এটি বন্ধ রয়েছে মূলত সিটি সেন্টারের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ না থাকায়। তবে পহেলা ফেব্রুয়ারি মতিঝিলের শাখাটি নতুন ঠিকানায় চালুর চিন্তা রয়েছে ব্যাংকটির।

২০১২ সালে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে অর্থের অবৈধ লেনদেন ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগ ওঠে। বড় অংকের জরিমানা দিয়ে শেষ রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করে। তবে এ ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশে এর কার্যক্রম অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ায় সংকটে পড়ে যায় ব্যাংকটি। সংবাদ মাধ্যমে খবর বের হয়, বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে বিদায় নিচ্ছে এইচএসবিসি।

জানা গেছে, বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রথম শাখা খোলে এইচএসবিসি।
ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র দাবি করেছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের বাজার নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছে না এইচএসবিসি। ফলে শাখা গুটিয়ে বিদায়ের পথে হাঁটছে তারা।

কিন্তু নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মূলত সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগের পরই তারা সংকটে পড়ে যায়। যার মাশুল হিসেবে আর ভালো ব্যবসা করতে পারছে না। এর ফলে ব্যবসা বন্ধ না করে প্রতিষ্ঠানটির সামনে আর কোনো বিকল্প পথ নেই।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এইচএসবিসি রিটেইল ব্যাংকিং কার্যক্রম আরেক বিদেশি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের কাছে বিক্রি করে দেয়ার ব্যাপারেও আলোচনার কথা শোনা গেছে।