বিদায় ব্রাজিল

865

বেলজিয়ামের বিপক্ষে ১-২ গোলে হেরে কোয়ার্টারে ফাইনালেই থেমে গেল ব্রাজিল। আর ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে পা রাখল বেলজিয়াম।

কাজান যেন বড় দলগুলোর জন্য মৃত্যুকূপ! এখানেই গ্রুপ পর্বে ‘অপমৃত্যু’ হয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির। শেষ ষোলোতে আটকে গেছে আর্জেন্টিনার স্বপ্নের রথের চাকা। সেই কাজানে আরেক শিরোপা প্রত্যাশী পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের কী হয়, তাই ছিল দেখার অপেক্ষা। এতক্ষনে সবাই জেনে গেছেন কাজান নামক মৃত্যুকূপে ডুবেছে ব্রাজিলও। বেলজিয়ামের বিপক্ষে ব্রাজিলের হার ১-২ গোলে।

দলটাকে বলা হচ্ছে সোনালী প্রজন্মের বেলজিয়াম। কোয়ার্টার ফাইনালে সেই সোনালী আভাতেই জ্বলে উঠেছে কাজান অ্যারেনা। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে নাম লিখিয়েছে বেলজিয়াম। প্রতিভাধর বেলজিয়াম দ্বিতীয়বারের মতো নাম লেখালো শেষ চারে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স।

অথচ এই ব্রাজিলকে বলা হচ্ছে হট ফেভারিট। যদিও বেলজিয়াম রক্ষণের কাছে পাত্তা পায়নি ফেভারিটদের আক্রমণ। হয়তো ভাগ্য দেবীও মুখ তুলে তাকাননি। নাহলে ১৩ মিনিটে নিজেদের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যেত না বেলজিয়াম।

এই অর্ধে প্রাণভোমরা নেইমারও ছিলেন নিষ্প্রভ। দ্বিতীয়ার্ধে খোলস ছেড়ে বের হতে চেয়েছিলেন। বেলজিয়াম রক্ষণের দমনীয় মেজাজে ঘেঁষতে আর পারেননি।

শুরুতে আক্রমণাত্মক ছিল তিতের দল। বেশ কিছু সুযোগ তৈরি হয় ১০ মিনিটেই। বেলজিয়ামের পেনাল্টি এরিয়ায় বল পেয়েছিলেন মিরান্দা। তার ছোঁয়ার পর থিয়াগো সিলভা বলে টোকা দিলেও তা গিয়ে লাগে সাইড পোস্টে।

১৩ মিনিটে কর্নার পায় বেলজিয়াম। তাতেই ঘটে অঘটন। আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম। কর্নার কিক থেকে ছুটে আসা বল ফের্নান্দিনিয়োর কনুইয়ে লেগে চলে যায় নিজেদের জালে।

আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে ঠাসা ছিল ২০ মিনিট। এক দিক ব্রাজিল হেনেছে আক্রমণ তো আরেক দিক দিয়ে বেলজিয়াম। এগিয়ে যাওয়ার বেলজিয়াম হয়ে পড়ে আরও খুনে মেজাজে। ২১ মিনিটে হ্যাজার্ড কে দিয়ে আক্রমণ শানায় বেলজিয়াম। তার থেকে বল পেয়ে ব্রাজিল রক্ষণে হানা দেন মুনিয়ের। লুকাকুকে উদ্দেশ্য করে বল দিলেও তা ক্লিয়ার করেন ব্রাজিল ডিফেন্ডার।

৩১ মিনিটে আবারও আক্রমণ বেলজিয়ামের। যেই গোলটা ছিল দুর্দান্ত। কোনাকুনি শটে দর্শনীয় এক গোল করেন মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইন। যার অ্যাসিস্টে ছিলেন ৪ গোল করা লুকাকু।

৩৭ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে আবারও সুযোগ তৈরি করে ব্রাজিল। বেলজিয়াম রক্ষণের কাছাকাছি থেকে শট নিয়েছিলেন মার্সেলো। বেলজিয়াম গোলরক্ষক কার্তোয়া লাফিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন সেই শট।

দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে ধার বাড়ায় ব্রাজিল। ৫২ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে সুযোগ তৈরি করেন মার্সেলো। বল বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ঠিক মতোই। কিন্তু সেই বলে সংযোগ ঘটাতে পারেননি নেইমার, ফিরমিনো।

৭৬ মিনিটে দুর্দান্ত হেডে এক গোল শোধ করে ব্রাজিল। কৌতিনিয়োর বানিয়ে দেওয়া বলে হেড করে বেলজিয়াম গোলকিপারকে পরাস্ত করেন অগাস্তো।

ইনজুরি টাইমে নেইমার চেষ্টা নিয়েছিলেন আরেকবার। নেইমার দূর থেকে শট নিলেও বেলজিয়াম গোলরক্ষক হাতের ছোঁয়ায় রক্ষা করেন সেই শট।

এই অর্ধে আক্রমণের পসরা সাজালেও শেষ বাঁশি বাজার পর পর ম্লান মুখে বের হয়ে যেতে হয় নেইমারদের। তাতে আরেকবার মুখ থুবড়ে পড়লো ব্রাজিলের হেক্সা মিশন।

পুরনো ইতিহাস বলে ইউরোপীয় প্রতিপক্ষ পেলে নড়বড়ে হয়ে পড়ে ব্রাজিল। গতবার সেমিতে জার্মানির কাছে হেরে বিদায়ের পর এ নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো ইউরোপীয় কোনও প্রতিপক্ষের কাছে হেরে বিদায় নিতে হলো সেলেসাওদের।