‘ফৌজি’ একটি স্বপ্নের নাম

1530

গল্পটা বলতে হলে ফিরে যেতে হবে ঠিক ১০ বছর আগে। সবেমাত্র ফেসবুক চিনতে শুরু করেছে এ প্রজন্ম। এখনকার মতো প্রযুক্তি সবার হাতের নাগালে ছিলো না। অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্যের বাজারও তখন ছিলো না বললেই চলে। যে দুয়েকটার নাম শোনা যেতো, সেগুলোও সবেমাত্র তাদের শুরুটা করেছে ছোট আঙ্গিকে। রাজধানীর ইডেন কলেজ থেকে সে বছর মাস্টার্স করে বেরিয়েছে ফৌজিয়া আফরোজ। পড়াশোনার বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলেও তার মাথায় বাসা বাধে ব্যবসার। কিন্তু কী নিয়ে ব্যবসা করবেন, সেটা ভাবতে ভাবতেই নিজের ঝোঁকটা টের পেয়ে যান। বুঝতে পারেন- ফ্যাশন পণ্য নিয়ে ব্যবসা করাই তার জন্য উত্তম। রঙ আর রুচির সমন্বয়ে কীভাবে একটা ড্রেস আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, সেটা কীভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়, সে স্বপ্নই আঁকতে থাকে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পেরুনো ফৌজিয়া।

এসব ভাবতে ভাবতেই তার সামনে খুলে যায় চাকরির দরজা। প্রথম চাকরি, তাই হাতছাড়া করতেও ইচ্ছে হলো না। কিন্তু ব্যবসার যে স্বপ্ন ফৌজিয়া মনে মনে বুনেছেন, তার কি চাকরিতে মন বসবে? মাত্র দুই বছরের মাথায় চাকরিকে ‘টাটা- বাই বাই’ জানিয়ে সোজা উড়াল দিলেন ভারতের ব্যাঙ্গালোরে। সেখানে ‘এফআইডি অ্যান্ড এএলটি ট্রেনিং কলেজে’ ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের উপর এক বছরের ডিপ্লোমাতে ভর্তি হন। এবার আর তাকে কে ছুঁতে পারে !

Fauji-2দেশে ফিরেই ইন্টার্নি করেন ফ্যাশন হাউজ বিবিয়ানাতে। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে ২০০৯ সালের ১৪ নভেম্বর নিজ উদ্যোগে খুলে বসেন ফ্যাশন হাউজ ‘ফৌজি’। জায়গা হিসেবে বেছে নিলেন উত্তরাকে। এভাবেই শুরু হয়েছে ফৌজিয়া আফরোজের উদ্দোক্তা হয়ে উঠার গল্প।

তারপরের পথটা আর মসৃণ নয়। নতুন প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে অনেক চড়াই উৎরাই পাড়ি দিতে হয়েছে ফৌজিয়াকে। এ বাধা সে বাধার মুখোমুখি হচ্ছিলেন প্রতিদিনই। কিন্তু থেমে যাননি। স্বপ্নটা বাস্তবায়নের সব আয়োজন সুচারূভাবেই সম্পন্ন করতে লাগলেন উদ্যমী ফৌজিয়া।

২০১৪ সালে তাকে শেষ পর্যন্ত থামতেই হলো। তবে কোনো বাধা পেয়ে থামেননি তিনি। আরও একটি সৃষ্টির জন্য সাময়িক বন্ধ রাখলেন ‘ফৌজি’। সে বছর মা হলেন। ফৌজিয়ার কোলে এলো ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান। এজন্যই তাকে কিছুদিনের জন্য দূরে থাকতে হয়েছে নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘ফৌজি’ থেকে।

সন্তান যখন একটু বড় হয়ে উঠলো, তখন আবারও ‘ফৌজি’ নিয়ে মাঠে নামলেন ফৌজিয়া। তবে এবার এগিয়ে যাওয়ার নতুন পথ বেছে নিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বছর যে ফেসবুকের সঙ্গে মাত্র পরিচয় হলো, সেটা এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম। ইতোমধ্যে অনেক অনেক উদ্যোক্তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ খুলে দিয়েছে ফেসবুক ও অনলাইন মার্কেট। ফৌজিয়াও তার ‘ফৌজি’ নিয়ে নতুনভাবে অনলাইনেই ব্যবসার পসরা সাজিয়ে বসলেন।

fauji-3বন্ধ থাকা ‘ফৌজি’ চোখ মেলতেই ব্যাপক সাড়া চারপাশ থেকে। ফৌজিয়ার কথায়, ‘অনেকদিন বন্ধ রাখার পরে যখন খুললাম, তখন ভেবেছিলাম- এতো সাড়া পাবো না। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সবাই এতো বেশি সাড়া দিয়েছেন, আমি সত্যিই ফৌজি নিয়ে অনেক বেশি স্বপ্ন দেখছি এখন।’

তিনি বলেন, ‘রাঙতা মেলায় অংশ নিয়েছিলাম। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে- ক্রেতারা আমার পণ্য এমন সাদরে গ্রহণ করবে। ক্রেতাদের এমন আগ্রহ আমাকে অনেকদূর হাঁটতে সাহায্য করবে।’

ফৌজি’র কর্ণধারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের পণ্যের প্রধান উপকরণ হচ্ছে দেশীয় কাঁচামাল। শুরুতে ছেলে ও মেয়েদের জন্য পোশাক বানালেও এখন কেবল মেয়েদের জন্যই পোশাক তৈরি করে থাকেন তারা।

ফৌজিয়ার মতে, আমাদের দেশের ভারত ও পাকিস্তানের পোশাক অনেক বেশি জায়গা দখল করে নিয়েছে। সেসবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কেবল দেশী পোশাকের ব্যবসা করা কঠিণ। তবুও মানের সঙ্গে কোনো প্রকার আপোষ না করে তার প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে দামও সহনীয় পর্যায়ে রাখছেন বলেই ক্রেতারা তার তৈরি পোশাক স্বাচ্ছন্দে কিনতে পারছেন।

তবে এতোসব কাজ করতে এসে পরিবার, স্বজন ও বন্ধুদের সহযোগিতা সবসময়ই ফৌজিয়ার সঙ্গে ছিলো বলেই জানান তিনি। তিনি মনে করেন, সব উদ্যোক্তাকেই কাছের মানুষদের সহযোগিতা করা উচিত। তাহলে কর্মসংস্থানের চাপ যেমন কমবে, তেমনি তৈরি হবে ভালো কিছু। যেমন করে তৈরি হয়েছে তার স্বপ্ন ‘ফৌজি’।

‘ফৌজি’র ফেসবুক পেইজে যেতে ক্লিক করুন