ফুটবল বোদ্ধাদের জন্য…

1751

Kamrul Hasan Nasimকামরুল হাসান নাসিম

সিনেমায় নাম লেখালে। হিট সিনেমা দিতে পারলে না। ফ্লপ আর ফ্লপ ! কী আর করা ! বহু বছর পর দেখা গেল, তুমি গ্রোসারি শপ খুলেছো। ক্রিকেট খেলোয়াড় বনে গেলে। রান করতে পারছো না। বোলিং টাও ভাল হল না। জাতীয় দলে জায়গা মিলছে না। একদিন দেখা গেলো, তুমি সার বিক্রির ডিলার হয়েছো। রেসলার হলে ? গলার ভয়েস ভাল না। অভিনয়টা তাই জমলো না। আধুনিকতাও নেই। মার দেয়ার অযুত কৌশল নেই। ভিন্স ম্যাকমোহনেরা বলছে, ধুর– ফালতু ! ওরে নিয়ে ব্র্যান্ডিং করার কিছু নেই। রেসলার হিসাবে থাকুক তবু। পেট চালানোর জন্য কিছু ধরিয়ে দিও। ভিন্সেরা ট্রিপল এইচ কে তেমন নির্দেশনা দিয়ে দিলো। কিন্তু যখনই তুমি সাধারণ দর্শকদের জন্য ভাল হিরো হয়ে দাঁড়িয়েছো— তখন বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে সব কিছুতেই তোমাকে নিয়েই চলবে হরেক রকমের আয়োজন কিংবা মাতামাতি। রেসলার বলে আসলে কিছু নেই। পরিচয়টা তাঁদের রেস্লিং এক্টর হিসাবেই ! ভাল ফুটবলার হয়ে পড়লে ক্লিয়ার শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন মডেল হতে শুরু করে হয়ে পড়বে ইউনিসেফের দূত ! ভাল রেস্লার হলে ? কত রকমের সৃজন স্ক্রিপ্ট যে তোমাকে ঘিরে ! তুমি আন্ডারটেকার হবে, হবে দ্য রক কিংবা স্টিভ অস্টিন ! কয়েক বাক্য লিখতে লিখতে ‘স্ক্রিপ্ট’ শব্দটা চলে এলো। আসলে এই স্ক্রিপ্ট টাই প্রধান। রেসলিং এর জন্য যদি স্ক্রিপ্ট রচনা করতে গবেষক দল থাকতে পারে তবে সারাবিশ্বের জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের জন্য কতজন বিশ্বমানের স্ক্রিপ্ট রচয়িতা থাকতে পারে সেটা বুঝতে পারার অবস্থায় কয়েকজন তো থাকবে এই বিশ্বে ! তাঁদের জন্যই ভর দুপুরে ঘুম থেকে উঠে কী বোর্ডে চাপ আর চাপের শব্দে চলো, আজ তোমাদের সুন্দরের নামে বোকামি চেতনাকে হারাম করি।

ক্রিকেট নিয়ে কিছুক্ষণ থাকা যাক। আচ্ছা, ক্রিকেট খেলে কয়টা দেশ ? পেশাদারী আচরণে ক্রিকেট বোর্ড আছে — হয়তো ধরে নিলাম এমন সংখ্যা ১৫টি দেশের। সারা পৃথিবীতে স্বাধীন দেশের সংখ্যা হবে প্রায় দু’শো এর মত। এমন দেড়শ রাষ্ট্র আছে– যে দেশের জনগণ জানে না যে, ক্রিকেট বলেও একটা খেলা আছে। কারণ, সে সকল দেশে কখনই লারা-সাচীণদের কে নিয়ে ক্রীড়া প্রতিবেদন হয় নাই। তো ? জানবে কী করে ক্রিকেট বলে একটা খেলা আছে ! আর এখন বাংলাদেশে কি হচ্ছে ? একটু ভাল খেললেই কোটি কোটি টাকার বোনাস ! ক্রিকেট এই দেশে জনপ্রিয় কখনই হত না যদি আমরা ভারত বর্ষের অধিবাসী না হতাম ! আমরা গেয়ো ভুত হয়েই একদিন ব্রিটিশদের জানান দিতে চেয়েছিলাম, এই খেলাটা কেন আমরাও খেলতে পারবো না ? ওই সেই আমীর খানের ‘লগান’ মুভিটার মত ! লুঙ্গি পরে নেমে যাওয়া। এরপর ইতিহাস। মোদ্দকথা, ক্রিকেট আসতও না— যদি কলোনিজম না ঢুকত ! আজকে আমরা শারট-প্যান্ট- স্যুট পরিধান করছি তাও দ্রুত আসত না— যদি ওই পর্তুগিজ- ওলন্দাজ কিংবা ব্রিটিশেরা শাসন করতে না আসত ! শোষণ করেছে ঠিকই তাঁরা তবে আমাদের নিজস্ব কৃষ্টির উপর কয়েক ফোটা জল রেখে গেছে তাঁরা অজান্তে। কী আর করা ! আমরা আজ ক্রিকেট খেলি। ভারত এখন ভয় পেয়ে আফগানিস্তানকে প্রমোট করতে চায়। কা’দের ভয়ে? ওই বাংলাদেশের ভয়ে !

ভারত একদিন দেখলো, ১২০ কোটি জনসংখ্যার দেশে ফুটবল নিয়ে গর্ব করার পর্যায়ে নেই। তাই ক্রিকেট নিয়েই কিছু একটা করি। ফুটবলকে নিয়ে ধীরে ধীরে কিছু করবো। এরপর ইতিহাস। সাচীনের মত সাধারণ কে তাঁরা অসাধারণ করলো- ভারত বিশ্বসেরা পর্যায়ে চলে গেল। অথচ গভীর বাস্তবতায় তাঁরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ত্রেলিয়া পর্যায়ের দল ছিল না। এমন কী পাকিস্তানের পর্যায়েরও ছিল না। শুধু মাত্র অর্থের জোরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে ধ্বংস করলো তাঁরাই। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে খানিকটা কৌশলে সম্মান করার নামে তাঁদের বুদ্ধিকেও ক্রয় করে ফেলল। চলে আসলো জুয়া, ফিক্সিং আর সেই স্ক্রিপ্ট বা পাণ্ডুলিপি ! যে পাণ্ডুলিপি নির্ধারণ করে ভারত কবে কখন কোন সিরিজ জিতবে, অন্যরা কী করতে পারবে, সব কিছু। টাকার জোরে তাঁরা ওয়াসিম আকরাম থেকে শুরু করে ইয়ান চ্যাপেলদের পর্যন্ত কিনে নিয়েছে। বাংলাদেশে যে গ্রেট ম্যান বলে কোর্টনি ওয়ালস নামের বিশ্বখ্যাত বোলার কোচিং করাচ্ছেন সেটার মধ্যেও ভারত থাকতে পারে। কারণ, ওয়ালস আসার পর থেকেই বাংলাদেশের পেস বোলিং ধ্বংস হয়ে গেছে!

অল্প কথায় সারতে হচ্ছে। ক্রিকেট কে এখন পুরোপুরি রেস্লিং খেলা মনে করার সুযোগ আছে। আপনার পাশের বাড়ির সাকিবেরা যে রাতের আঁধারে জ্ঞাত কিংবা অজ্ঞাতসারে বিক্রি হচ্ছে না তা আপনি বলতে পারবেন না। এসব হয় কিন্তু অভিনব কৌশলে ! রাজনীতির মত। মাস্টার মাইন্ড থাকে। অপচিন্তাকারীর লক্ষ্য যেটা থাকে সেটা অন্য কেও জানতে পারে না- বুঝতে পারে না। যেমন ধরুন, পিলখানা ট্রাজেডির কথা। কোন শক্তি চিন্তা করলো যে, বাংলাদেশের মেধাবী সেনা কর্ম কর্তাদের নিধন করতে হবে। তাঁরা অতি কৌশলে বাংলাদেশের তৎকালীন বিডিয়ার জোয়ানদেরকে বোঝাল যে, আচ্ছা, তোমরা তো বঞ্চিত ! অপারেশন ডালভাতের নামে সেনাবাহিনীর লোকজন বেনিফিশিয়ারি। এতেই চটল তাঁরা। টানা ছয় মাস ধরে তাঁরা বিডিআর কমপ্লেক্সের বাইরে দোকানে, সেলুনে, টঙ্গে বলল, একটু জাগো ! আর কত? নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নাও তবে ! অথচ, মাইক্রোবাসেই ছিল তাঁদের কিলারেরা। যারা আবার বাংলাদেশরই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেহ হবেন ! নেতৃত্ব দিয়েছে কিলিং মিশনের আর কি ! হয়তো কয়েক মাস আগে ওই অপশক্তিই তাঁদেরকে কিডন্যাপ করেছিল ! এরপর বলল, যাও — নেতৃত্ব দাও কিলিং মিশনের। অতঃপর কাজ শেষে তোমার চেহারায় পরিবর্তন এনে দেয়া দেয়া হবে। প্ল্যাস্টিক সার্জারি করে হয়তো সেই ডনেরা আমাদের পাশে আজ ঘুরাঘুরি করছে ! আমরা জানতে পারছি না সেই তাঁরাই আমাদের সাথে নতুন পরিচয়ে বসবাস করছে। কিন্তু আমরা কি জানলাম। জোয়ানদের বিদ্রোহ ! এভাবেই ক্রিকেট খেলা থেকে শুরু করে ভারতীয়রা সব কিছুতে তাঁদের স্বার্থ উদ্ধার করছে। তবে ওদের সৃজন কর্মের প্রশংসা করতেও হয়। ওরা বেবি নামের মুভি বানিয়েছে– এমন বেশ কিছু ফিল্ম করে তাঁদের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ সম্যক জানিয়েছে কিছু। ক্রিকেট তো আছেই। এখন ভারত ফুটবলও ধরেছে। তাঁরা কয়েক বছর ধরে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল লীগ প্রবর্তনের মাধ্যমে বলতে চাইছে তাঁরা ২০২২,২০২৬ এ চেষ্টা করবে বিশ্বকাপে যেতে। সেটা সম্ভব না হলে নিশ্চিতাকারে ২০৩০ সালে তাঁরা বিশ্বকাপে যাবে। এমন কি ভারতের যে অর্থ আছে তাতে করে ২০৩০ সালে তাঁরা বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

টাকা তাহলে দুর্বল ভারতকে ক্রিকেটের কিং বানায়— তাহলে ফিফা টা কী? তাঁরা কি করছে? হ্যাঁ, করছে। ১৯৬৬ সাল থেকে তাঁরা তাঁদের পছন্দে থাকা দেশটাকে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন করায়। তাঁরা চোর হয়ে, অতি ডাকাত হয়ে এবং অভিনব কৌশলে নির্দিষ্ট দেশটাকে বিশ্বজয়ী করার চেষ্টায় থাকে। সব কিছু পানির মত করে অত স্পষ্ট নয় তবে। তাঁদের কৌশল থাকে। চেষ্টা থাকে। অনেকটা সাম্প্রতিক সময়ে মিশেল প্লাতিনির বক্তব্যে প্রতিধ্বনিত হওয়ার দিকটার মতোই। তিনি বললেন, ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে আমরা ফ্রান্স চাইনি যে ফাইনালের আগে ব্রাজিল আমাদের সামনে পড়ুক। এর অর্থ কী? কিভাবে সেটা সম্ভব হয়? হ্যাঁ, হয়। যখন ফিফা কথিত বিশ্বকাপের ড্র আয়োজন করে— অর্থাৎ কে কার সাথে খেলবে ! সেই ফিকচার করার অনুষ্ঠান করে তখন তাঁরা যাদেরকে দিয়ে লটারির নামে কাগজের টুকরো উঠায় তাঁর মধ্যেও কারচুপি থাকে। সেটা না করলে গ্রুপ গুলোয় কোন কোন দেশ পড়বে তা নির্ধারিত করা যায় কিভাবে ? চলুন, আরেকটু গভীরে যাই।

এবারের বিশ্বকাপের দিকটার দিকে তাকান। এ এবং বি গ্রুপ নিয়ে ভাবুন। এখানে রাশিয়া যাতে করে গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারে তার জন্য সৌদি আরবকে প্রথম ম্যাচেই পাঁচ গোল দেয়া হল। যা সম্পূর্ণ ভাবে অসম্ভব পর্যায়ের ছিল। এমনিতেই প্রথম ম্যাচে যেকোন পর্যায়ের দল তাঁদের স্বাভাবিক ফুটবল খেলতে পারে না। সেখানে সৌদির জালে রাশিয়ার ৫ গোল ! আবার এই গ্রুপটায় মিশর এবং উরুগুয়েকে রাখা হল। ভাল কথা। মিশরকে উড়িয়ে দেয়া হল ওই রাশিয়ার মাধ্যমে। অথচ নক আউট রাউন্ডে যাতে করে পর্তুগালকে মোকাবেলা না করতে হয় সে কারণে রাশিয়া ইচ্ছে করে উরুগুয়ের সাথে হারলো। কারণ, এবার বহুজাতিক সংস্থা ও ফুটবলের মাফিয়া নাইকি পর্তুগালের পেছনে রয়েছে। তাঁদেরকে নিয়ে অনেক পথ পাড়ি দিতে চায় নাইকি। যদিও পর্তুগালকে নাইকি সেরা আন্ডারডগ হিসাবে বাজির মত করে পয়সা তাঁদের পেছনে ব্যয় করেছে। ক্ষমতাধর পুতিন তা জানেন ভাল করে। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তাহলে এবার স্পেনকে বিদায় করা হোক। রাশিয়া অন্তত কোয়ার্টার কিংবা সেমি ফাইনালে যাতে খেলতে পারে তার জন্যই এত বন্দোবস্ত। এদিকে বিনা বিধায় যাতে করে পর্তুগাল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারে সেটার জন্য গ্রুপ সুবিধা তাঁরা পেয়েছে। উরুগুয়ের মত দেশটাকে তাঁরা উড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে তা অবুঝ দর্শক ছাড়া কোয়ালিটি দর্শক কিন্তু খুব ভাল করেই জানে।

নাইকির বক্তব্য হবে, কেন রোনালদো কি খারাপ খেলছে? সে যদি কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে হাল ধরে আবার—পর্তুগাল কাপ আদায় করবে না কেন? নাইকির আরেকটি ব্র্যান্ডিংও এই পর্তুগাল ঘিরে। তাঁরা জানে ১৯৬৬ সালের ফিফা দুষ্টুমির প্রতিশোধ নিতে পারবে এই পর্তুগাল। সেটা কী? ইউসেবিও কাপ জয়ের নায়ক হত সেবার। কিন্তু ফিফার কারণেই সেবার সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড পর্তুগালকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল, জিতেছিল অপ্রত্যাশিত ভাবে বিশ্বকাপও ! ২০১৮ সালে এসে পর্তুগাল বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার সেমি ও অথবা ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে পারে। আর তখনই নাইকির জয় জয়কার হতে পারে। তাঁরাই সেই পুরোনো ইতিহাসের ব্র্যান্ডিং করে নাইকি লোগোর অবিস্মরনীয় বিজয় নিশ্চিত করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করে নিতে পারে। এমন হতে পারে সেই খেলার আগেই রোনালদোর জার্সি, পর্তুগালের জার্সিসহ প্রায় এক ডজন নাইকি পন্যের অভাবনীয় ব্যবসা তাঁরা করে নিতে পারে বিশ্বজুড়ে। হয়তো বোদ্ধারা বলবেন, নাইকি কেন এডিডাস কী আঙ্গুল চুষবে ?

এডিডাস গেল বিশ্বকাপে বড় চুক্তি করেছিল। সেটা লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে ঘিরে। ব্রাজিল ইস্যুটা দেখছিল আবার নাইকি। ব্রাজিল গেল বিশ্বকাপে স্বাগতিক হওয়াতে চিলি ও কলম্বিয়ার মত দারুণ দলগুলোকে হারিয়েছিল অদৃশ্য হাতের ইশারায়। কারণ, তাঁরা স্বাগতিক ছিল । দর্শক মরে যেত ব্রাজিল দ্বিতীয় রাউন্ডে বিদায় হলে। অথচ তাঁরা ওই রাউন্ডে বিদায় হওয়ার পর্যায়েই ছিল। আর্জেন্টিনার গ্রুপ এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যাতে করে তাঁদেরকে শক্ত দলের মোকাবেলা করতে হবে সেমি ফাইনালে যাওয়ার পরে। এর আগে একটি শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধেও তাঁদের খেলা পড়েছিল না। তাও সেমিতে যদি তাঁরা মেক্সিকোকে পেত তবে তাঁরা ফাইনালে যেত কিনা সন্দেহ ছিলই ! সে কারণেই ফিফা ২০১০ সালের সুপার টিম কিন্তু ২০১৪ সালের অপেক্ষাকৃত দুর্বল হল্যান্ডকে সেমি ফাইনালে নিয়ে আসে। কোয়ার্টার ফাইনালে রবেনের দুষ্টু ডাইভে পেনাল্টির উপর নির্ভর করে তাঁরা মেক্সিকোকে হারায়। অথচ, মেক্সিকোর সাথে হল্যান্ড আসলে পেরে উঠেছিল না। সেই আর্জেন্টিনা ও মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখতে চেয়েছিল ফিফা, ক্ষমতাধর পেলে সহ স্বয়ং বিশ্ব দুষ্টু ও চোর তৎকালীন ফিফা সভপতি সেফ ব্ল্যাটার। তবে সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয় না। এডিডাসও হেরেও হারেনি। যে দেশে জন্ম তাঁদের সেই জার্মানিই জিতেছিল। তাঁরা আসলে মেসিকে নিয়ে মেতে থাকলেও যখন দেখতে পায় আমার দেশ ফাইনালে উঠেছে— সেখানে মেসি জিতলেও ব্যবসা আবার না জিতলেও কম ব্যবসা নয়। তবে এটা সত্য যে, মেসি জিতলে অন্তত হাজার খানেক পণ্য মেসি ও এডিডাস যৌথ নামে তাঁরা সারাবিশ্ব জুড়ে বিক্রি করতে পারত। কারণ, ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো এইটটি সিক্স (৮৬) নামে প্রায় হাজার খানেকের বেশী পণ্য বিক্রি হয়েছিল। সারা বিশ্বে বহুজাতিক সংস্থার অভিনব ব্যবসার হরেক রকম আয়োজনে তা সম্পাদিত। যা নিয়ে কেও চিন্তা করে না। ফুটবল অনেক আগেই ফলত মাফিয়াদের কাছে চলে গেছে।

স্পেনের কাব ফুটবলের কথায় ধরুন। একটা সময় ইটালিয়ান সিরি আ ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় লীগ থাকলেও স্পেনের অভিনব কৌশলে তাঁরা আজ চতুর্থ অবস্থানে চলে গেছে। অথচ একদা ইটালিতে খেলার জন্য সব দেশের খেলোয়াড়রা মুখিয়ে থাকত। স্পেন সেই এক নম্বর জায়গা দখল করেছে। ইটালিয়দের বিরুদ্ধে সুক্ষভাবে পাতানো ম্যাচের অভিযোগ তুলে এক রকম তাঁদেরকে নীচে নামানো হয়েছে। অথচ, গেল আট বছরে কাতালানদের স্বাধীনতা রুখতে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার হাতে লা লীগা টাইটেল জুটছে ওই সব অত্যাধুনিক চুরি ও পাতানো কিছুর আয়োজন সেরেই। কারণ, বার্সাকে কাপ দিয়ে স্পেন সরকার স্বান্তনা দিয়ে রেখেছে তাঁদেরকে। মজার ব্যাপার হল, বার্সার খেলোয়াড়দেরও তাই ট্রেনিং নিতে হয়েছে কী করে কখন কিভাবে ফ্রি কিক ও পেনাল্টি আদায় করতে হবে। এই যে নেইমার এবং সুয়ারেজ— তাঁরা কিন্তু এসব কৌশল শিখেছে বলেই আজ খেলোয়াড়ের চেয়ে অভিনেতা হয়ে পড়েছে। এসব কিছুর জন্য বার্সা দায়ী। ডি বক্সের ডানদিকটায় মেসি সহ অন্যরা ঢলে পড়ে মাটিতে। এটাও দেখতে হবে। কারণ, ওই পয়েন্ট হতে মেসি দারুণ ফ্রি কিক নিতে পারেন। ইউটিউবে যান। দেখবেন ঠিক একই পজিশন থেকে মেসি কতগুলো গোল ক্লাব এবং দেশের হয়ে করতে পেরেছে। সংখ্যায় তা অনেক হবে। এদিকে লাইন্সম্যানেরা পতাকা উঠায় না— যখন বার্সা আক্রমণে থাকে আবার অন্যরা যদি আক্রমণে যায়- অফসাইডে না থাকলেও তাঁদের হাতে পতাকা উঠে যাচ্ছে ! এমন দৃশ্য গেল মৌসুমেও প্রায় ২০ বারের মত দেখা গেছে। একটা ম্যাচে একবার এমন করলে, ফ্রি কিক দেয়ার সিদ্ধান্ত হলে ম্যাচ নিজেদের করে নেয়া যায়। কিছু বোঝা যাচ্ছে বন্ধুরা— যা বলতে চাইছি !

ফিফা ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হঠাত করে ম্যাচের ভেন্যু বদলিয়ে দেয়। যা ডিমান্ড করেছিল ইংল্যান্ড। সাধারণ মানের ববি চারল্টনের হাতে বিশ্বকাপ দেয়ার সব আয়োজন তাঁরা সেরেছিল। অথচ সেবার ইউসেবিও ও বেকেনবাওয়ার কাপ জয়ের অদম্য অভিলাষে সিক্ত ছিল। ইংল্যান্ডের কাপ জয়ের আসল কারিগর ছিলেন সে সময়ের ফিফা সভাপতি ইংল্যান্ডের স্ট্যানলি রউজ ! যিনি প্রায় ১২ বছরের অধিক সময় নিয়ে ফিফা সভাপতি ছিলেন।

এদিকে ১৯৭০ সালে ব্রাজিল কে কাপ দেয়ার জন্য ফিফা সব চেষ্টা করেছিল। কারণ, ওই দলটায় প্রতিভাবানেরা ছিল। আর বিশ্বকাপ শুরু হতে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তাঁরা দেখেছিল একজন পেলে ব্রাজিল স্কোয়াডে আছে। তাঁকে সেরার সেরা করে দিই। আর এডিডাস ব্যবসা করার জন্য সেই সুযোগ নিয়েছিল। যদিও পেলের খেলা যারা ১৯৭০ সালে দেখেছেন আমি নিশ্চিতকারে বলছি, ঢাকার ফুটবলের স্ট্রাইকার আসলামের চেয়ে তাঁকে বড় মনে হবে না তাঁকে। পায়ের কাজ, হেড নেয়ার দক্ষতা আসলামের চেয়ে বড় ক্যারেক্টার হিসাবে তাঁকে প্রমাণ করে না। ১৯৭৪ সালে জোহান ক্রুয়েফকে কেন বঞ্চিত করে বিশ্বজয়ের আয়োজন সারা হল না তা নিয়েও আছে রহস্য। খুব সম্ভবত ক্রুয়েফকে ফিফা ব্র্যান্ডিং করেছিল না— তার খেলার পজিশনে গোল করার দিকটা না থাকায় এডিডাস, পিউমা ও নাইকিও ছিল নীরব। ঠিক সে কারণে পাণ্ডুলিপি রচনায় শিথিলতা ছিল। ফাইনালে যা খুশী হোক এমন আয়োজনে ছিল ফিফা ও তার দোসর এডিডাসেরা। বাংলাদেশ স্বাধীন হল। ১৯৭১ সালের পরে প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তকে পেলেকে নিয়ে প্রবন্ধ না হলে কখনই ব্রাজিল ও পেলে নিয়ে আমাদের মধ্যে অতি উচ্ছ্বাসের আবহ জন্ম নিত না।

এদিকে ফিফা কত দুষ্টু হতে পারে তাঁর ন্যাক্কারজনক প্রমাণ রাখে ১৯৭৮ সালে। রাজনৈতিক প্রভাবে সেবার আর্জেন্টিনার কাপ জয়ের ইতিহাসে ফিফার ব্যাংক একাউন্ট এ কত টাকা জমা পড়েছিল তা তাঁরা ভাল বলতে পারবে। আর্জেন্টাইন সামরিক শাসক শুধুমাত্র পেরু নয় মূলত ফিফাকে নগদ অর্থ দিয়েছিল। জোয়াও হ্যাভেলাঞ্জ ছিলেন সেই অসৎ সত্তা। ল্যাটিন ফুটবলের প্রমোটে তিনি আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন হিসাবে দেখতে রাজী হয়েছিলেন।

১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়েও আলোচনা- সমালোচনা ছিল। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ওই বিশ্বকাপটায় ব্রাজিলের হ্যাভেলাঞ্জ খুব বেশী হাত দিতে চান নি। পরপর দুইবার তা করলে বিশ্বকাপের আবেদন নষ্ট হয়ে যেত। কাপ জিতে নেয় ইটালি। তাও সেই ব্রাজিলকে ৪-১ গোলে হারিয়ে !

১৯৮৬ সালে এসে ফিফা ও এডিডাস- নাইকিরা বুঝে গেল ফুটবল কতটা জনপ্রিয় হতে পারে ! আর সেটা দিয়ে কত মুনাফা অর্জন করা যায় ! তাই হ্যাভেলাঞ্জ জিকোকে হিরো বানাতে চাইলেও প্লাটিনি- ম্যারাডোনা- রুমেনিগে- হুগো সাঞ্চেচেজারা তাগিদ রাখছিল, ফুটবলের জয় হোক। মেক্সিকো এমন এক বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হয়ে আলোচনায় চলে এল যে, তোমার লাগেজের গায়েও লেখা mexico 86 !

যে ব্র্যান্ডিং এই এডিডসেরা করেছিল। বিপুল পরিমানের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিল। এক দূরন্ত ম্যারাডোনা যখন কাপ জিতিয়ে ফেলল হ্যাভেলাঞ্জের জিকো কিংবা ইউরোপ সেরা প্লাটিনিকে ডিঙিয়ে— তখন নাইকি ও এডিডাসেরা চুটিয়ে ব্যবসা করল।’ম্যারাডোনা’ নামে ব্র্যান্ডিং করে মূলত তাঁদের পণ্যের। টুথপেস্ট থেকে শুরু করে সব ধরণের নিত্য পণ্যের গায়ে ‘ম্যারাডোনা’ স্টিকার !

নাইকিরা বুঝল, খেলার পণ্য সামগ্রি নির্মাণ করে যত না টাকা আয় করা যায় তার চেয়ে অনেক বেশী মুনাফা দামী বা বিখ্যাত খেলোয়াড়ের ব্র্যান্ডিং করে। এতে করে নিজেদের লোগো যেমন সকলের চোখে পড়ে তারচেয়ে ছদ্দ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে ওদের নাম দিয়ে সব ধরণের পণ্য বাজারে ছাড়লেই মূর্খ মানুষগুলো তা নিয়েই মাতামাতি করবে !

বহুজাতিক সংস্থাগুলো তাই পরিপাটি চিন্তায় ফিফার সাথে একরকম চুক্তিতে গেল। তাঁরা বলে বসলো, সব কিছু তোমাদের চিন্তায় এখন থেকে আর হবে না। ১৯৯০ সাল থেকে তাই ফিফার ডান হাত, বাম হাত ও মস্তিষ্কে ঢুকে পড়লো নাইকি, এডিডাস ও পিউমা। বলল, আমাদের ব্র্যান্ডিং করা দেশের ও খেলোয়াড়েরা খুব দ্রুত বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়তে পারবে না। এডিডাস অতি আক্রমণাত্মক হয়েই বলল, জার্মানি এখন থেকে সেমিতে খেলবেই। এর আগে বিদায় করা যাবে না। এদিকে হ্যাভেলাঞ্জ চাইছিল ব্রাজিল আরেকবার বিশ্বকাপ জিতুক। কিন্তু ম্যারাডোনা ঝলকে ব্রাজিল যখন বিশ্বকাপে বিদায় নেয়— তখন পেলে ও হ্যাভেলাঞ্জ বসে ঠিক করে কোন প্রকারে আর্জেন্টিনার হাতে কাপ দেয়া চলবে না। সেটাই হয়। জিতে যায় হ্যাভেলাঞ্জ, পেলে আর এডিডাস। জার্মানি কাপ জিতে নেয়। ওই বিশ্বকাপটা ম্যারাডোনা দ্বিতীয়বারের মত পেয়ে গেলে তিনিই সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসাবে একচ্ছত্র নাম হিসাবে আবির্ভূত হতেন। কিন্তু হ্যাভেলাঞ্জ ও পেলে তার স্বপ্ন গুড়িয়ে দেন।

পেলে ও হ্যাভেলাঞ্জ একযোগে কাজ করতে যেয়ে একটা সময় পেলের ফিফার উপর প্রভাব চলে আসে। তখন তাঁরা সিদ্ধান্ত নেয়, ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ ব্রাজিলের ঘরে উঠুক। এতে করে রোমারিওর উপরে ব্র্যান্ডিং করলে এডিডাসেরা ঠকবে না। টাকাও আসবে, আবার ম্যারাডোনাকেও রুখে দেয়া যাবে। গ্রীসের সাথে এক উদ্যমী ম্যারাডোনাকে দেখে রীতিমত ভয় পেয়ে যায় হ্যাভেলাঞ্জ। তখন জানা যায়, খেলার জন্য ম্যারাডোনা বল বর্ধক ওষুধ খেতেন, ড্রাগ নিতেন — যা অনৈতিক। তাঁকে সেই বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করা হল। কিন্তু ব্রাজিল আবার ভয় পেল। ইটালির এক রবার্টো ব্যাজিও ছুটছেন। তবে ব্রাজিল জিতে গেল টাইব্রেকারে। আমেরিকা, ফিফা, হ্যাভেলাঞ্জ ও পেলে ব্রাজিল কে চ্যাম্পিয়ন করে দলটার পুনজাগরণে ভুমিকা রেখেছিল। কারণ, দুই যুগ পর তাঁরা কাপ জিতেছিল।

১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপেও ব্রাজিল ফুটবলে শিল্পের ছোঁয়া ছিল। রোনাল্ডো নাজারিও নামের এক ‘বিস্ময়’ খেলতে গেল বিশ্বকাপে। কিন্তু মিশেল প্লাটিনি ততদিনে খেলোয়াড় থেকে অনেক বড় সংগঠক হয়ে পড়েন। তিনি ও তাঁর এসোসিয়েটস স্বাগতিক ফ্রান্সকে নিয়ে হিসাব নিকেশ শুরু করলেন। ফ্রান্স দলেও ছিল এক গ্রেট। যার নাম জিনেদিন জিদান। সঙ্গী হিসাবে ম্যাকালেলে, পেটিট, ভিয়েরা, দেশাইলি, দেশ্যাম্প,থুরামদের নিয়ে অদম্য এক দল নিয়েই তাঁরা বিশ্বকাপ প্রথমবারের মত জেতার জন্য নিয়তে ছিল। প্লাটিনি এমন এক বন্দোবস্ত করলেন যাতে করে বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানেও কৌশলে চুরি করা হল। ফিকচারটা এমনভাবে করা হয় যাতে করে ফ্রান্সের সামনে ব্রাজিল যেন ফাইনালের আগে না পড়ে। অর্থাৎ বিশ্বকাপের ড্র এর দিনে যারা কাগজের টুকরো যারা ওঠায় তাঁরা সহ ফিফা কোন গ্রুপে কারা খেলবে তা নির্ধারণ করে । ফ্রান্সকে তেমন ভাবেই নিরাপদ জোনে রাখা হয়। অথচ সেই বিশ্বকাপে প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েন রোনাল্ডো। সেমি ফাইনালের ম্যাচে তাঁকে এতটাই আগ্রাসী অবস্থায় পাওয়া যায় যে ফিফা তাঁকে বার্তা পাঠায়। তাঁকে বলা হয়, তুমি ২০২২ সালে আসো, আমরা দেখবো। এরপরের ইতিহাস সবার জানা। অসুস্থ নাকি মন ভেঙ্গে যাওয়া রোনাল্ডো কে ফাইনালে দেখা গেল সেটা একবার সকলেই খতিয়ে দেখতে পারেন। ফ্রান্স ব্রাজিলকে হারালো ৩-০ গোলে !

হ্যাভেলাঞ্জ বিদায় নিলেন। কিন্তু ততদিনে ব্রাজিল ফুটবল ফিরে এসেছিল। গারিঞ্চা ও পেলেদের পর যে ব্রাজিলকে সে অর্থে পাওয়া যাচ্ছিল না তা হ্যাভেলাঞ্জ রোমারিও – বেবেটোদের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় সফল ছিলেন। এক পর্যায়ে ব্রাজিল দলে প্রতিভাবানদের একযোগে পাওয়া গেল। রোনাল্ডোকে দেয়া ফিফার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁরা ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জিতে নিল। এশিয়ার কোরিয়া এবং জাপানে হওয়া সেই বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলে একঝাক মেধাবীদের মাধ্যমে বিশ্ব জয় করা জায়েজ হয়ে গিয়েছিল। কারণ, দলটায় তখন রবার্টো কার্লোস থেকে শুরু করে কাফু, রোনালদিনিয়, রিভাল্ডোরা খেলছেন। আর রোনাল্ডো নাজারিও তো আছেনই। তবে ওই বিশ্বকাপটাও কলংকমুক্ত ছিল না। কোরিয়া খেলেছিল সেমি ফাইনাল। ফিফা চেয়েছিল , এশিয়ায় ফুটবল জনপ্রিয় হোক। ফ্রান্সকে ছাড় দেয়া হল না। তাঁরা গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল।

সেফ ব্ল্যাটারের মত মহা চোরের নেতৃত্বে চলছে ফিফা। চলে এলো ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ। ওই বারের বিশ্বকাপে এডিডাস চাইলো জার্মানি জিতুক। তাঁরা স্বাগতিকও ছিল। কিন্তু ফিফা চেয়েছিল ফ্রান্সকে। জিদান দুইবার কাপ জিতুক তা তাঁরা চেয়েছিল। সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক চলছিল। সেমি ফাইনাল ম্যাচে পর্তুগালের সোনালী প্রজন্মকে বিতর্কিত এক পেনাল্টি গোলে জিদানেরা হারিয়ে দিল। অন্যদিকে ইটালি তাঁদের খেলার ধরণ বদলিয়ে বিদায় করে দিয়েছিল জার্মানিকে। ফাইনালে জিদান পাগলামো না করলে কাপ তাঁর হাতেই উঠত; ইটালি চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল অবশ্যি টাইব্রেকারে জিতে। আরেকবার এডিডাসের পরাজয় হয় সেবার। এডিডাস ও নাইকি হেরে যায় সাম্প্রতিক সময়েও। সেটা ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে। দুই পক্ষই চেয়েছিল এডিডাসের আর্জেন্টিনা ও নাইকির ব্রাজিলের মধ্যকার ফাইনাল হোক। এমন করে গ্রুপিং করা হয়েছিল যে, এডিডাসের ব্র্যান্ডিং করা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি যেন সেমি ফাইনালের আগে কোন শক্ত দলের সাক্ষাৎ না পায়। তাই-ই হয়েছিল। সেমিতে পেয়েছিল হল্যান্ডকে— যারা ২০১০ সালের সেই হল্যান্ড ছিল না। রবেনেরা সেমিতে গিয়েছিলই চুরি করেই। মেক্সিকো অদম্য হয়ে পড়েছিল। কিন্তু রেফারিকে বোকা বানিয়ে এক পেনাল্টি আদায় করে রবেন মেক্সিকোকে বিদায় করেছিল। এদিকে ব্রাজিল চিলি ও কলম্বিয়াকে এক প্রকার জোর করে হারিয়ে সেমিতে চলে যায়। কিন্তু ভাগ্য দেবতা এতটাই নিষ্ঠুর হল যে, জার্মানি তাঁদেরকে লজ্জা দিয়ে বিদায় করে। এডিডাস তখন খুশীও হয়। নাইকির বিদায়ে। ফাইনালে দুইটা দেশই এডিডাসের। নিরপেক্ষ খেলা হয়। ফিফা চেয়েছিল মেসি জিতুক। এডিডাস ব্যবসার স্বার্থে মেসিকে চাইলেও জার্মানি জিতলে ক্ষতি ছিল না তাঁদের। এক অখ্যাত মারিও গোটসে এসে মেসির স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয়। কাপ জিতে নেয় এডিডাসের জার্মানি।

বাদ থাকবে না ২০১০ সালের বিশ্বকাপ। সেটা ছিল আরো কলঙ্কময়। স্পেন ততদিনে ক্লাব ফুটবলের মাফিয়া। তাঁদের স্প্যানিশ লা লীগা চরম জনপ্রিয়। ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা এক নম্বর দল ছিল সারাবিশ্বে। স্পেন চিন্তা করলো এভাবে শুধু ক্লাব ফুটবলে দাপট দেখালে চলবে না। হ্যাঁ, হয়তো আমাদের রিয়েল মাদ্রিদ ও বার্সা আছে কিন্তু জাতীয় দলের সাফল্য পেতে হবে। এডিডাসও চলে এলো তাঁদের স্পন্সর করতে। স্পেন রাতের আঁধারে বিশ্বকাপের আগেই পর্তুগাল সরকারকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে দিল। সে সময় পর্তুগালের অর্থনৈতিক মন্দা যাচ্ছিল। স্পেন জানতো, দ্বিতীয় রাউন্ডে তাঁদেরকে পর্তুগালকে মোকাবেলা করতে হবে। সে সময় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সবে স্পেনের রিয়েল মাদ্রিদে খেলছে। তাঁকে স্পেনের হয়ে খেলতে বলাও হয়েছিল। রোনালদো ‘না’ বলেছিল। কিন্তু রোনালদোর মাধ্যমেই পর্তুগাল সরকার স্পেনের কাছ হতে অর্থ নিয়েছিল। এরপরের ইতিহাস ? ডেভিড ভিয়ার এক অফসাইডের গোলে স্পেনের কাছে হেরে যায় ওই পর্তুগাল। ফাইনালে স্পেন হারায় ক্রুয়েফদের উত্তরসূরি স্নাইডার-রবেনদের। ১৯৭৪ সালের পর হল্যান্ড তীরে এসে তরী ডুবায়। স্পেন যে এডিডাস ও ফিফার আশীর্বাদ নিয়েই ফাইনালে গিয়েছিল ! জিতে যায় এডিডাস।

রেসলিং এর সাথে ক্রিকেট ও ফুটবলের তেমন কোন পার্থক্য নেই। হ্যাঁ, রেস্লিং ফেডারেশন জানান দিয়ে বলছে, আমাদের স্ক্রিপ রাইটার আছে। সব কিছু নির্ধারিত থাকে। দর্শকদের জন্য হিরো তৈরি করা হয়। সারবছর জুড়ে খলনায়কদের হাতেই শিরোপা থাকে। কিন্তু সামর্থ্যের বিচার করা হয় একদিন। সেদিন জিতে যায় রোমান রেইন্সেরা ! আর ক্রিকেট টা এখন পুরোপুরিই বাজিকর, জুয়াড়ি ও ভারতের নিয়ন্ত্রণে। ভারতই এখন ফিফা । তাঁরা ঠিক করে সবকিছু। দুই একটা নিরপেক্ষ ম্যাচ হলেই টের পেয়ে যায় তাঁরা। আমরা তো পারছি না ! অন্যদিকে ফিফার সব ডেস্কে চোরেরা বসে আছেন। এডিডাস ও নাইকি তাঁদেরকে চালায়। পিউমা খানিকটা এথলেটিক্সে মন দেয়ায় ফিফার সাথে সম্পর্ক জমে নাই। ফিফারও স্ক্রিপ্ট রাইটার আছে। যা প্রকাশ্য পর্যায়ে যেতে পারে না। যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে অর্থের স্বার্থে ফিফা পাণ্ডুলিপি রচনা করে যাচ্ছে। আবার অনৈতিক সিদ্ধান্ত দিয়েও কারো জন্য বন্ধু হচ্ছে, কারো জন্য শত্রু। ফিফা তাই পাণ্ডুলিপি নির্ভর আবার অনৈতিক সিদ্ধান্ত নির্ভরও।

অনৈতিক সিদ্ধান্তটা তাঁরা খেলার মধ্যে চাপিয়ে দিতে পারে। যেমন রাশিয়া বিশ্বকাপের একটা উদাহরণ দেয়া যাক। আর্জেন্টিনা বনাম নাইজেরিয়া ম্যাচ। ডি বক্সের মধ্যে আর্জেন্টাইন রক্ষনভাগের একজনের হাতে বল লাগলেও বাজলো না বাঁশী। অবশেষে রিভিউ আঙ্গিকে যেটা এবার ফিফা চালু করেছে সেটার সিদ্ধান্ত নেয়ার অপেক্ষা। কিন্তু পেনাল্টি দেয়া হল না। আবার ঠিক একই রকমের হাতে বল লাগার অপরাধে ইরানকে একটা পেনাল্টি দেয়া হল পর্তুগালের বিরুদ্ধে। সঙ্গত কারণেই নাইজেরিয়া অধিনায়ক খেলার মধ্যেই রেফারিকে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী হল? রেফারী বললেন, আমি কিছু জানি না। এই ‘জানি না’ টাই হল ফিফার অনৈতিক সিদ্ধান্ত। তাহলে ফিফা আসলে কী চেয়েছিল ? ইরানকে পেনাল্টি দিয়ে, রোনালদোকে হলুদ কার্ড দিয়ে ফিফার বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কিনা সেটা বুঝতে হবে ! স্পষ্টত দেখা গেল ইরানের রক্ষনভাগের একজনকে রোনালদোকে বারবার করে বাঁধা দিতে চাইছিলেন। তাঁকে ডিঙ্গাতে রোনালদো হাত ছুটালেন ! এতেই হলুদ কার্ড। গভীর বিশ্লেষণে ওখানে ইরানের ওই খেলোয়াড়ের লাল কার্ড পাওয়ার কথা। আবার রেফারী আরো একবার না দেখার ভান ধরলেন। রোনালদোকে দুই হাত দিয়ে আটকিয়ে রাখা হল। ফিফা যাদের টিভি সত্ত দিয়েছিল তাঁরাও সেটা রিপ্লে হিসাবে দেখাল না। আবার অদৃশ্য শক্তি এমন ভাবে খেলা সম্প্রচার করে যে, তোমাকে বিখ্যাত বানানোও তাঁদের জন্য কিছু না। ক্যমেরায় এমন ভাবে তুলে ধরবে যে তোমায় ঘিরে ৭/৮ জন খেলোয়াড় ডিফেন্স করছে। আর তাঁরা যদি না চায় তুমি তোমার খেলার মধ্যে অভিনব স্কিলস দেখালে ন্যানো সেকেন্ডে— সেটা রিপ্লেতে না দেখিয়ে চুপ করে বসে থাকা হল !

ফিফা জানে সারাবিশ্বের জনপ্রিয় খেলা হিসাবে ফুটবল থাকবে এই গ্রহ বিনাশ না হওয়া পর্যন্ত। অনেকেই মজা করে বলে থাকেন, পরপারেও ফুটবলটা যেন থাকে তার জন্য স্রষ্টার কাছে চাওয়া হবে। যদিও স্রষ্টা বলছেন, তোমরা শারীরিক কসরত করে নিজের শরীরকে ঠিক রাখতে পারো কিন্তু জুয়া, বাজি, অর্থ বিনিয়োগ, হিংস্রতা যেখানে উপলক্ষ থাকে সেখানে আমি নেই। ফিফা কিন্তু সেসব কিছু নিয়েই ভাল আছে। ফিফা জানে, ফুটবলের জন্য স্পেন, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইটালি, ফরাসিরা ডলার-পাউন্ড ও ইউরোর পসার নিয়ে বসে আছে। ফিফা জানে, চীনের পরবর্তী টার্গেট এখন ফুটবল। সেখানেও অঢেল অর্থের হাতছানি। উঠে আসবে ভারতও। যে বিপুল পরিমানে অর্থের দামামা তাতে করে ফিফার জিহবায় পানি আসে। সে কারণেই সেফ ব্ল্যাটার- মিশেল প্লাটিনিদের মহাচোর বনে যাওয়া। এই মহাচোরদের ছায়া দিয়ে বাঁচিয়ে একদিন আলোচনায় চলে আসেন রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন।

এই সেই পুটিন, যিনি ২০০৯ হতে ২০১০ পর্যন্ত লড়ে রাশিয়াকে বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ করিয়েছিলেন। পুটিন ২০১৩ সালে ফিফার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেন। অথচ তিনি ফিফার অফিসিয়াল কোন চরিত্র নন। যেন এক ডন। এই ডন হলেন তিনি সেফ ব্ল্যাটারকে জেলে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে। প্ল্যাটিনিদের সামাজিক সম্মান ধরে রেখে তিনি তাঁদেরকে বাঁচালেন। এছাড়াও ফিফার আরো দুইটি গ্রুপকে তিনি আশ্রয় দেয়া শুরু করলেন। এদিকে তিনি দেখতে পেলেন এডিডাস কিংবা নাইকিদের মূলধনের শক্তি আসলে রাজনৈতিক ও অপআধ্যাত্মিক শক্তি।

বাপেরও বাপ থাকে। পুটিন তা জানলেন ও বুঝলেন। তাঁকেও পয়সা দিতে হল। সারাবিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতি যারা নিয়ন্ত্রণ করে সেই তাঁরাই ফুটবলের পেছনের শক্তি তা তিনি জেনে গেলেন। আধা ইহুদীবাদী শক্তি ! পুটিন হাসলেন। বললেন, খেলা হবে রে ! ফিফা সভাপতি হিসাবে ইনফান্টিনো কে বসালেন। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন টাকাও পেতে হবে আবার রাশিয়া ফুটবলকেও জাগাতে হবে। তার দেশের প্রজন্ম যাতে করে ফুটবলটা খেলে। এবারের বিশ্বকাপে রাশিয়া তাই কোথায় যেয়ে থামবে তা নিয়ে ভাবার সুযোগ আছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন হিসাবে তাঁরা ফুটবলের প্রায় পরাক্রম শক্তি হয়ে পড়েছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পরে দিনে দিনে রাশিয়া পিছিয়ে পড়ছিল। কথায় ছিল, চীনের দুঃখ যদি হোয়াং হো নদী হয়ে থাকে তো পুটিনের দুঃখ যেন রাশিয়ার বর্তমান ফুটবল স্কোয়াড। অথচ রাশিয়াকে এবারের বিশ্বকাপে নতুন করে দেখা যাচ্ছে। হ্যাভেলাঞ্জ ও সেফ ব্ল্যাটার যেভাবে ব্রাজিল ফুটবলের ধারাবাহিকতা রাখতে পেরেছিল, এডিডাসের চারণভুমি জার্মানি হওয়াতে যেমন চারবারের বিশ্বজয়ী দেশ হওয়া যায়— পুটিন কেন বসে থাকবেন ? ইউরোপেই রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে যাবে। তবে তাহলে রাশিয়া, স্পেন, ফ্রান্স, ইনফান্টিনোর সুইটজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, পরাক্রম ইংল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, সুইডেন কিংবা পর্তুগালের কাছেই যাক বিশ্বকাপ ! পুটিন তাই কিছু একটা তো ভেবেছেন। গেলবার যদি এডিডাসের দুই দেশের লড়াইয়ে ফাইনাল হতে পারে তবে এবার নাইকির দুই দেশের মধ্যে ফাইনাল হতেই পারে ! তেমন দুই দেশ আছে কিন্তু এখনো লড়াইয়ে ! ধরা দিতে পারে!

সেদিন একজন বলছিলেন, ফিফা, এডিডাস, নাইকি যদি সব নির্ধারণ করেই রাখে তবে আর খেলা দেখার কী আছে ভাই? বলে দেন কারা চ্যাম্পিয়ন হবে? উত্তর আছে এখানেও। রেসলিং এ যেমন পাণ্ডুলিপি থাকে এবং ফলাফল নির্ধারিত থাকে; দর্শকদের আবেগ ও আফসোস সৃষ্টি করে উন্মাদনা ও আগ্রহ ধরে রাখার কৌশলে— ফুটবলে তেমন করে থাকে না। তবে ক্ষেত্র তৈরি করা হয়। হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসার খাতিরে পান্ডুলিপিও। খেলার মধ্যে তোমার দল কখন ফ্রি কিক পাবে, কখন পেনাল্টি পাবে, কর্নার না হয়েও কর্নার পাবে এমন অযাচিত নানা দিক রেফারীদের মাধ্যমে তা ক্রিয়েট করে অপশক্তি। আবার খুব মজার দিকও আছে। ধরুন, এবারের আসরের মহা দুর্বল দল আর্জেন্টিনা পরের দুই ম্যাচ জিতে সেমি ফাইনালে চলে গেল। তখন কিন্তু এডিডাস আর বসে থাকবে না। এসব সংস্থা হল, অনেকটা গোয়েন্দা সংস্থার মত। দেশের সরকার প্রধানের জন্য নিবেদিত থাকে। কিন্তু জনগণ যদি ক্ষমতাচ্যুত করবার অভিপ্রায়ে প্রায় সফল হওয়ার পর্যায়ে চলে যায় কিংবা ওই সরকার প্রধানের চেয়ে অন্য দল খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে পড়ে সেই গোয়েন্দা সংস্থার সরকার প্রধান হতে মুখ ফিরিয়ে নিতে সময় লাগবে ১ মিনিট ! এই আর্জেন্টিনা যদি দুই ম্যাচ জিতে যায় নিরপেক্ষ ভাবেই তাহলে এডিডাস মার্কেটিং করবে ধরে নিন তা। বলল, তোমরা কী মেসির ১০ নং জার্সি পেতে চাও ? দেখা গেল পরের ৪৮ ঘন্টায় তা বিক্রি হল দুই থেকে পঁচিশ কোটি জার্সি ! ব্যবসার স্বার্থে তখন সেমির ম্যাচে রেফারিকে বলা হল, তোমাকে আজ আর্জেন্টাইন হতে হবে। আবার এমন হতে পারে যে, ফ্রান্স বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচ হতেই এডিডাসের পরিকল্পনা থাকলো ব্যবসার। তাঁরা চাইলো, বিশ্বকাপের ক্ল্যাসিকো হয়ে যাক তবে। অর্থাৎ আর্জেন্টিনা বনাম পর্তুগালের মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনাল ! সে কারণে ফ্রান্সকে হারিয়ে দিল এডিডাস— হতেই পারে তা। ব্যবসার জন্য এডিডাস ও নাইকিরা নানা প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যেতেই পারে !

ফুটবল কতটা পাতানো হতে পারে বা পাণ্ডুলিপি নির্ভর হতে পারে তা বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ল্যাটিন মহাদেশের শেষ ম্যাচ আর্জেন্টিনা বনাম ইকুয়েডরের ম্যাচ দেখলে বোঝা যায়। প্রথমত এডিডাস বলল ফিফাকে, আর্জেন্টিনা কিংবা মেসি ছাড়া বিশ্বকাপ হলে অর্থনৈতিক মন্দায় কাটবে। দ্বিতীয়ত ফিফা বুঝে নিল, কথার যুক্তি আছে। ব্যালন ডি ওর ইস্যু সামনে রেখে মেসিকেও তিনজনের একজন হয়ে রাখার জন্য হ্যাট্রিক ম্যান করা হল। ২০১৪ সালে যেমন সুইডেনের সাথে রোনালদো হ্যাট্রিক করে পর্তুগালকে বিশ্বকাপে নিয়ে যায়– ঠিক তেমন আদলে মেসি নিয়ে খেলা হল। খেলার আগেরদিন ইকুয়েডরের ৫ জন খেলোয়াড়কে পাওয়া গেল না। মাঠে অবশ্য পরের দিন উপস্থিত থাকলো তাঁরা । তিনটা গোলের ভিডিও ফুটেজ দেখা গেলে ফুটবলের প্রতি অনেকের ঘৃণা চলে আসবে। দেখা গেল, তিনটি গোলই এসেছিল বিনা বাঁধায়। জিতেছিল সেদিন এডিডাস ও ফিফা। আর লাভ হয়েছিল লিও মেসির। খানিকটা বোঝা যাচ্ছে কী? হ্যাঁ, ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়া হয়। গেল বিশ্বকাপের সেমি ফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচের কথা ধরুন। আর্জেন্টিনার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল ফিফা, পেলে আর এডিডাস। কিন্তু কী সমস্যা রে ! মেসির দশা হয়ে পড়েছিল সেই বাংলাদেশের মোশাররফ করিম অভিনীত একটা নাটকের মত !

মোশাররফ করীম একজন উচ্চাভিলাসী ফুটবল স্ট্রাইকার। ফুটবলের প্রতি তার প্রচন্ড আগ্রহ। গোল করতে চান। জীবনে যদিও একটা গোলও করতে পারেন নাই। পাড়ার দলটা তাই রেলিগেশনে চলে যাচ্ছে। একদিন মোশাররফ করীমকে প্রতিপক্ষ দল বলল, তুই একটা গোল কর। আমরা কেও বাঁধা দেব না। এমন কী গোল কিপারও থাকবে না। মোশাররফ ছুটছেন। এরপর নিলেন গোলপোষ্টে শট । না, সেটাও চলে গেল বাইরে। লক্ষ্যভেদ করতে পারলো না। লুটিয়ে পড়লো মিনি পর্দার এই সুপারস্টার। ফুটবলের সুপারস্টার হতেই পারো তুমি। কিন্তু গেল বিশ্বকাপে অতিরিক্ত টাইম সহ মোট ২৪০ মিনিটে লিওনেল মেসি একটি বারের জন্যও পোস্টে শট নিতে পেরেছিল না। এতে এডিডাসের কী দোষ ? তাঁরা ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিল। তুমি সেটাকে কাজে না লাগাতে পারলে আর কী করার থাকে ! সব দোষ কী হিগুয়েনের ? আসলে না ! পেলের নামটা কেন বললাম ? পেলে চেয়েছিল মেসির হাতে বিশ্বকাপ যাক। এতে করে তার চির প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যারাডোনাকে এক হাত নিতে পারত সে। বলত, তুমি আর মেসি একই মানের। আমি তিনবার নিয়েছি বিশ্বকাপ। আর তোমরা একবার করে। যদিও পেলে জেনে গেছেন, রোনালদো আর মেসি অনেক আগেই তাঁকে ছাপিয়ে যাওয়া খেলোয়াড়। ম্যারাডোনা নেতৃত্ব ও সামর্থ্যের বিচারে মেসির চেয়ে এগিয়ে কিন্তু গোল করার দিকটায় মেসিই তো এগিয়ে। সেটাও স্বীকার করা হচ্ছে কি ?

রাশিয়া বিশ্বকাপ নিয়ে ফেরা যাক। কী হতে যাচ্ছে? এখানে এবার দেশগত স্পন্সর এডিডাস বেশী করলেও নাইকিও পিছিয়ে নেই। বরং এবার এডিডাস পিছিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের চিরচেনা ব্র্যান্ডিং করা দেশ জার্মানি বিদায় নিয়েছে। আর্জেন্টিনার অবস্থা তথৈবচ। তবু কেন জানি মনে করার সুযোগ আছে যে শুধুমাত্র ব্যবসার জন্য ফ্রান্সকে হারিয়ে এডিডাস( আর্জেন্টিনা) জেতার চেষ্টা করতে পারে। কোয়ার্টার ফাইনালে অন্তত দুটি ল্যাটিনের প্রতিনিধি না থাকলে ক্যামনে কি ! সেটা ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা হতেই পারে। তবে ব্রাজিল কী নিরাপদে আছে? মেক্সিকো ওত পেতে বসে আছে তাঁরা এবার জার্মানি বধের পর ব্রাজিল কে হারাবে বলে ! ওদের অনেক অভিমান যে ! প্রত্যেক বিশ্বকাপে তাঁদেরকে ফিফা বিদায় দিয়ে দিচ্ছে। আমার সন্দেহ হয় যে, তাঁরা এবার ফেয়ার প্লে না দেখতে পারলে মাঠ ত্যাগ না করে বসে ! ব্রাজিল ফলত মেক্সিকোর চেয়ে বড় দল নয় এবার। রাশিয়া ও স্পেনের খেলায় কেও যদি মনে করে থাকে স্পেন চলে যাচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনালে— সেটা মনে করার সুযোগ কম। বরং সুইটজারল্যান্ড সুইডেনকে হারিয়ে ইনফান্টিনোর মন কে আলোকিত করতে পারে। নাইকি ভুল পথে নেই। আন্ডারডগ দেশ হিসাবে তাঁরা এবার পর্তুগাল ও বেলজিয়ামকে কিনেছে। তাঁদের বাজি আছে খেলোয়াড় কোটায় এবার রোনালদো, নেইমার, লুকা মড্রিচ, ইস্কো, হ্যারি কেইন, কেভিন ডি ব্র্যুএন, কাভানি, এমবাপ্পে ও কউটিন হো’দের উপর। রীতিমত বড় ধরণের বিনিয়োগ ! অন্যদিকে খেলোয়াড় হিসাবে এডিডাস ব্র্যান্ডিং করছে লিওনেল মেসি ছাড়াও সুয়ারেজ, মারসেলো, পগবা, হামেস রদ্রিগেজদের। বিশ্বকাপ সেরা দেশ হিসাবে নাইকি যেখানে ব্রাজিল, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও পর্তুগালকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে — আবার অন্যদিকে এডিডাস লড়ছে আর্জেন্টিনা, স্পেন ও রাশিয়াকে নিয়ে। পুটিন নিজেও চাইছেন এডিডাসের জয় হোক। সেক্ষেত্রে নক আউট রাউন্ডে এডিডসের রাশিয়া কিংবা স্পেন যাচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনালে। সব সমীকরণ মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপে নাইকি জিতে যেতে পারে। এডিডাস গেলবার জিতলেও এমন হতে পারে যে, নাইকির দুই দেশ এবার ফাইনাল খেলছে ! তাতে পুটিন হেরে যাচ্ছে না। তার টার্গেট সেমি ফাইনাল !

ফুটবল এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে সময়ের ব্র্যান্ডিং করা খেলোয়াড়দের নিয়ে তাঁদের এজেন্ট কিংবা এডিডসেরা চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগও দিচ্ছেন। যারা খেলোয়াড় হিসাবে সাবেক গ্রেট ছিলেন। এমন হল, ম্যারাডোনার ব্যাংক একাউন্টে টাকা ঢুকল। বলা হল, আপনি একটু মেসির স্তুতি মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেন। শাভিকে বলা হল, দয়া করে মেসির পক্ষে বিবৃতি দিয়ে বলেন যে, সে সর্বকালের সেরা। রিও ফারডিনান্ডকে বলা হল যে, প্লিজ রোনালদোর পক্ষে কথা বলুন। ধারাভাষ্যকার হয়ে বলুন, ইজ হি হিউম্যান ? বিনিময়ে তাঁরা অর্থ পেল। এইতো চলছে !

খেলোয়াড়দের নিয়ে কিংবা দেশ ভিত্তিক প্রজেকশন চালিয়ে চলছে তাই ফিফা কার্যক্রম। সব কিছু প্রকাশ্যে প্রকটিত হবে না ফুটবলে। বুঝে নিতে হবে। কী চাইছে ফিফা ! ফিফার প্রধান শক্তি বহুজাতিক সংস্থার অর্থ। তাঁদের ব্যবসা নিশ্চিত করেই এমন ছকে ফুটবল চলবে যাতে করে কেও বিশ্বকাপকে বিতর্কিত বলতে পারবে না। কিন্তু আসলে সব কিছুই এখানে রেস্লিং এর মত সাজানো। রেস্লিং টায় সফল হওয়া যায় ১০০ %। কারণ, দুই রেস্লারই অভিনয় করে খেলার ফলাফল জেনে নাটক করে। আর এখানে এক পক্ষ জানে না। অন্য পক্ষকে কৌশলে সাহায্য করা হয়। কিন্তু খেলাটায় তো পায়ের কাজ দেখাতেই হবে। গোল করতে হয়- সেটা সব সময় কী করা সম্ভব হয় ? রোনালদোর মত ব্যক্তিও তো পেনাল্টি মিস করছে। এই যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্তুগীজ প্রেসিডেন্টকে বললেন, রোনালদো মনে হয় তোমার দেশের প্রেসিডেন্ট হবে একদিন। এটাও কিন্তু একধরণের বিজ্ঞাপন। রোনালদোর ইমেজ বাড়ানোর অভিনব কায়দা। হতে পারে এমন আলাপের সাথে ফিফা, নাইকির বাপ দাদা আধা ইহুদী গোষ্ঠী জড়িত ! এমন বক্তব্যে আজ, কাল ও পরশু রোনালদোর ৭ নং জার্সি খোদ আমেরিকা হতে শুরু করে পুরো বিশ্বে ৫ কোটী জার্সি বিক্রি হতে পারে ! আচ্ছা একটা জিজ্ঞাসা ! স্পেনের বিরুদ্ধে তিন গোল করার পরে রোনালদোকে কেন মরক্কো ও ইরান ম্যাচে সে অর্থে খুঁজে পাওয়া গেল না ? রোনালদোর কাছে তথ্য আছে। তিনি জানেন, কখন কী করতে হবে ! কখন খেলতে হবে ! নাইকি তাঁকে অনেক কিছুই জানিয়েছে। মেসিও জানে এই বিশ্বকাপে তাঁকে খেলে কিছু করতে হবে। এডিডাস আগের বিশ্বকাপের মত সাহায্য করবে না। করবে, যদি সে দেশটাকে অন্তত সেমিতে টেনে নিয়ে যেতে পারে। ব্রাজিল রয়েছে সবচেয়ে বড় ধরণের সমস্যায়। তাঁরা মাত্র একটা ম্যাচে অদৃশ্য শক্তির সাহায্য পাবে। সেটা নক আউট রাউন্ডে। এরপরে এবার খেলেই জিততে হবে। কাপ ইউরোপে থাকবে তা ফিফাসহ এবার নাইকিরা জানে। জানে ওই আধা ইহুদী গোষ্ঠী। যারা মূলত ইয়াজুজ ও মাজুজ! তাঁরা যেদিন পৃথিবীতে মুদ্রার প্রচলন করে বলতে চেয়েছিল আমরাই ঈশ্বর ! আমাদের কাছে সবকিছু। আমরা চাইলেই আরব বসন্তের মত ‘কৃত্রিম বিপ্লব ‘ বার্গার আর স্যান্ডুইচ খাওয়ায়ে আনতে পারি— আবর্তিত হতে পারে তেমন কথিত বিপ্লব আবার ফুটবলের পেছনে অঢেল মুদ্রার নোট বিনিয়োগ করে বলতে পারি, ১০০ টাকা খরচ করে কোষগারে এলো ১ কোটি টাকা যে !

প্রধান সম্পাদক: ক্রীড়ালোক