ফুটপাত কি আদৌ হকারমুক্ত হবে?

1107


প্রতীক বর্ধন।।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে বলেছিলেন, গুলিস্তানের যানজট কমানোর জন্য এলাকাটি থেকে অবৈধ স্থাপনা ও হকারদের সরিয়ে দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে তিনি নিজেও কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করেছেন। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পর হকাররা আবারও ফুটপাতে বসে যান। এরপর গত কয়েক দিনে আমরা দেখলাম, গুলিস্তানে ঢাকা ট্রেড সেন্টারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হকারদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হলো। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হকারদের সংঘর্ষ আমাদের মোটেও কাম্য নয়, সেখানে হয়তো তাঁদের স্বার্থের সংঘাত আছে বলেই এমনটা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা পায় বলে তারা সংঘর্ষের সময় হকারদের পক্ষাবলম্বন করার যে অভিযোগ উঠেছে, তা গুরুতর, যে চাঁদার ভাগ স্থানীয় রাজনীতিকদের পকেটেও যায়।
গুলিস্তান এলাকায় যাঁদের যাতায়াত আছে, তারা জানেন, সেখানে হাঁটাচলা করা কতটা কঠিন। পুরো এলাকাটি যেভাবে হকারদের দখলে গেছে, তাতে রাস্তাগুলো রীতিমতো বাজারে পরিণত হয়েছে। রাস্তাকে আর রাস্তা মনে হয় না। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ নানা কারণে গুলিস্তানে যান। ঢাকার বিভিন্ন উপজেলা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও মাওয়ার বাসও গুলিস্তান থেকে ছাড়ে। সেখানে না আছে যাত্রীছাউনি, না যায় ফুটপাতে দাঁড়ানো। ফলে মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। রমজান মাসে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। অন্য কথায়, ভোগান্তি ও গুলিস্তান সমার্থক হয়ে গেছে। হকার ও বাসের হেলপাররা মানুষের সঙ্গে যে আচরণ করেন, তাতে মনে হয়, আমরা যেন মানুষ নই, মালের বস্তা! বিদেশি নাগরিকেরা সেখানে গেলে তাঁদের মনে বাংলাদেশ সম্পর্কে কী ধারণা সৃষ্টি হয়, সেটা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি!

বহুদিন পর ঢাকা নগরের নির্বাচন হলেfootpat মানুষ ভেবেছিল, এবার হয়তো পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র যখন ক্লিন ও গ্রিন ঢাকার ঘোষণা দিলেন, তাতে মানুষের আশার পালে আরেকটু হাওয়াও লাগল। আবারও এটাও ঠিক যে এসব কাজ রাতারাতি করা সম্ভব নয়। গুলিস্তানকে হকারমুক্ত করতে দক্ষিণের মেয়র সেখানকার হকার ও হকার সমিতির নেতাদের সঙ্গে নগর ভবনে বৈঠক করেছেন। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কথাও বলেছিলেন তিনি।

সাঈদ খোকন নিজেও স্বীকার করেছেন, সকালে কোনো এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করা হলে বিকেলেই অসৎ পুলিশ কর্মকর্তারা আবার দোকান বসিয়ে দেন। তিনি চাইলেই যেসব পারেন না, তার নজির হচ্ছে এই হকারদের দৌরাত্ম্য। এবার তো সরাসরি অভিযোগ উঠল, পুলিশ হকারদের কাছ থেকে চাঁদা পায় বলে সংঘর্ষের সময় হকারদের পক্ষাবলম্বন করেছে। এখন কথা হচ্ছে, পুলিশ সারা ঢাকা নগরেই হকারদের কাছ থেকে যত চাঁদা তোলে, তাতে হকারদের পুনর্বাসন করতে গেলে হয়তো তারাই বাদ সাধবে! তাদের কারণেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হতে দেরি হচ্ছে কি না, তাও আমরা জানি না। এই সরকারের আমলে পুলিশ কত ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছে, তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

ব্যবসায়ীরা নিজদের স্বার্থে হকারদের মেরে-কেটে উঠিয়ে দিক, সেটা আমরা চাই না। কারণ, এই বিপুলসংখ্যক মানুষ তো এর ওপর নির্ভর করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। ফুটপাত থেকে মানুষ সস্তায় অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারে। সে কারণে তাঁদের নানাভাবে পুনর্বাসন করতে হবে, তা না হলে ব্যাপারটা অমানবিক হবে। সরকারদলীয় রাজনীতিক ও পুলিশের স্বার্থে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে এই বাণিজ্য চলতে পারে না। এই কায়েমি স্বার্থের কারণে মনে শঙ্কা সৃষ্টি হয়, হকারদের রাস্তা থেকে ওঠানো আদৌ সম্ভব হবে কি?

প্রতীক বর্ধন: লেখক ও কলামিস্ট।

ফেসবুকে ‘এখন’ এর সব আপডেট পেতে লাইক দিন: http://facebook.com/ekhon247