ফরিদপুরবাসী মুক্তি চায় আব্দুর রহমান থেকে

2309

দেশব্যাপী শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির মনোনয়ন পেতে নানা চেষ্টা করছেন আগ্রহীরা।

ফরিদপুর -১ আসন তথা আলফাডাঙ্গা-মধুখালী ও বোয়ালমারীর এই আসন থেকে ওই দুই দল হতেই অনেকেই মনোনয়ন চাইছেন। তবে ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগে এখন ত্রিভুজ আর বিএনপি থেকে দ্বিমুখী লড়াই চলছে। প্রধান কারণ হিসাবে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান তাঁর ইমেজ হারিয়েছেন। তৃনমূল নেতারা তাঁকে এবার সংসদ সদস্য হিসাবে দেখতে চাইছে না।

এলাকায় যাওয়ার পরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মূলত তিন নেতার হরেক রকমের প্রচারণা। ব্যানার-ফ্যাস্টুন ও বিলবোর্ডে সজ্জিত রাজপথের দুই ধার। গভীর রাত পর্যন্ত দুই একজন নেতার গণসংযোগও চোখে পড়েছে। তিন নেতা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান, ব্যবসায়ী কাজী সিরাজ এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন। তাঁদেরকে সামনে রেখেই চলছে এখন দলীয় মনোনয়নের লড়াই।

এদিকে গেল কয়েকবছর ধরে এলাকায় বারবার করে যেয়ে সামজিক সমস্যা নিরসনে ভুমিকা রেখে সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন চমকে দিয়েছেন সবাইকে। তাঁর উপর এই এলকার মানুষের আস্থা বেড়েছে। এমনিতেই ফরিদপুরের নেতৃস্থানীয় অভিভাবক পর্যায়ের নেতা ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সত্তা ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নিকটাত্মীয় হিসাবে সর্ব মহলে পরিচিত যুবক আরিফুর রহমান দোলন। ক্ষমতাসীন দলের হয়ে তাই উন্নয়নের মহাসড়কে একজন পথিক হয়ে আরিফুর যেন ফরিদপুর -১ আসনের মানুষগুলোর দৃষ্টি কাঁড়তে সক্ষম হয়েছেন। যেটা অবাক করার মতই।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেল, একজন সংসদ সদস্য হিসাবে দলের তুখোড় বক্তা আব্দুর রহমান শুধু ভাষণ আর শ্লোগান দিয়ে গেছেন। নিজ এলাকায় দারুণ কিছু করতে পারেন নি। বরং দোলন সংসদ সদস্য না হয়েও এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। যেন ঘুম কেড়ে নিয়েছেন দুই দলের জন্যই। এমন চাউর আছে যে, সব দলের অংশগ্রহণে একটা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আরিফুর রহমানই কেবল বিএনপির হেভিওয়েট প্রাথী শাহ আবু জাফরকে হারাতে পারবেন। যদিও এই আসন হতে বিএনপি থেকে কে মনোনয়ন পাবেন তা নিশ্চিত নয়। কারণ হিসাবে সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলামও বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। তাঁর প্রচারণাও চোখে পড়েছে। আছে পোস্টার, ব্যানার ও নিজে গণসংযোগ করছেন।

183636a1

আব্দুর রহমান পিছিয়ে গেছেন। এর কারন হিসাবে নিজ দলের তৃণমূল পর্যায় হতে বলা হচ্ছে, তিনি স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির সাথে গেল পাঁচ বছরে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলেও অনেকের মত। তিনি নিজ দলের জ্যেষ্ঠদের মূল্যায়ন করেন না বলেও অভিযোগ আছে। এলাকায় এসেছেন কম, বেশীরভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করেছেন। এতে করে নিজ দলের মধ্যেই তাঁর ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।

আলফাডাঙ্গায় আব্দুর রহমানের সেই সৎ ইমেজটা এখন আর নেই। অন্যদিকে বোয়ালমারীতে যাওয়ার পরে জানা গেছে, তিনি পেশি শক্তি ব্যবহার করে এমন কিছু কাজ করেছেন যা এলাকাবাসী ভালভাবে নেয়নি। অন্যদিকে মধুখালীর সন্তান হিসাবে আব্দুর রহমানের এখানে জনপ্রিয়তা থাকলেও এখন বেশ কমেছে। আব্দুর রহমান নিজেও তাঁর অবস্থান নিয়ে শংকিত। আসনটিকে পুনরায় পেতে হলে যা করার দরকার ছিল তা তিনি করতে পারেননি। তিন উপজেলার দলের মধ্যকার সমন্বয়ও কম। কমিটি নিয়ে বিরোধ আছে।

এই প্রসঙ্গেই তৃনমূল পর্যায়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থেকে এক নেতা প্রতিবেদককে বলেন, ‘তিনি দলে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েও ঘর ঠিক করতে পারেন নি। তাঁর সুযোগ ছিল এই অঞ্চলের অন্যতম সেরা নেতৃত্ব দেয়ার কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। অর্থনৈতিকভাবে তিনি নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন।

আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তিনটি থানার স্কুল গার্ড নিয়োগেও তিনি প্রচুর অর্থ নিয়েছেন মানুষের কাছ হতে। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগেও অর্থ নিয়েছেন। টিআরকাবিখা তে অনিয়ম করেছেন বলে প্রচলিত আছে। কৃষকদের সুবিধা না দিয়ে তিনি স্বজনপ্রীতি করেছেন। দলের নেতাকর্মী সহ এলাকার মানুষের অভিযোগ তাঁর ব্যবহার ভাল না। দলে বড় একটা পদ থাকায় তিনি কাউকে মানুষ বলে গণ্য করতে চান না।

এই আসন থেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লিয়াকত সিকদারের নামও মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে শোনা যায়। তবে তাঁর কোন প্রচারণা বা গণসংযোগ চোখে পড়ে না। অথচ আরিফুর রহমান দোলন গভীর রাত পর্যন্ত এলাকায় বিচরণ করেন।