“… ফজলু চাচারে ছালাম দিও”

1088
  • সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু

বিকেল,সন্ধ্যা বা রাতের গ্রামগুলোর কথা ভাবুন। ধনী,গরীব, সবার বাড়িই আজ বেদনারহিত, সরগরম একেকটি স্বর্গ।

কোন বাড়িতে কারো সন্তানেরা এসেছে পুত্রবঁধু,নাতী,নাতনীসহ। কোন বাড়িতে শহরবাসী স্বামী, কারও বাবা, কারও ভাই-বোনেরা এসেছে ঢাকা অথবা অন্যকোন দূরতম শহর থেকে।

বাড়ির উঠান,ঘরের বারান্দা,বাড়ির পাশের হালট,বাগান,খেলার মাঠে সুখদুখের গল্প। থইথই আড্ডা। বাচ্চাদের কিঁচিরমিচিরে অস্থির চারপাশ।
এরই মাঝে খুশি মনে চলছে ঝাঁল,লবন,কাসুন্দি মাখানো পাকা আমের ভর্তা,চানাচুর চিপস,বিস্কুট, কটকটি,ঝাঁলমুড়ি নয়তো মায়ের, বোনের বানানো পিঠা।

সন্ধ্যার স্তব্ধতা ভেঙে ওপাড়ার শরীফ বাল্যবন্ধুর খোঁজে চিৎকার করে বলে উঠবে “সুজন আইছোস নাকিরে? ”

মাঠের পাশে,বটের নীচে যে চায়ের দোকানে,তাতে বসে আছেন প্রবীন স্কুল শিক্ষক সাহাবুদ্দিন স্যার। তাঁর পায়ে হাত দিয়ে সালামে ব্যস্ত মঈদুল,যে এখন বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক।
এই মঈদুল স্কুল জীবনের পরই বাবার সাথে শহরবাসী হয়েছিল।

কাঁধে ব্যাগ,হাতে ব্যাগ নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটতে হাঁটতে ঢাকার গার্মেন্ট শ্রমিক নজরুলও বলে উঠবে,
“ও কাকি,কেমন আছো? ফজলু চাচারে সালাম দিও,কাইল আসুম নে।”

ধানক্ষেতর পাশে ছোট্ট সবুজ যে মাঠ তাতে হয়তো দলবেঁধে ছুটছে,খেলছে ফ্ল্যাটবন্দী জীবনের ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা।
যারা কোনদিন এমন খোলা জমিনে খালিপায়ে হাঁটেনি,একবারও না।

৭০ পেরুনো সিরাজুল ইসলাম, এককালের দাপুটে আমলা,তিনি লাঠি হাতে টুকটুক করে হাঁটছেন ঈদগাঁ মাঠের দিকে। যে মাঠের পাশে গ্রামের কবরস্থান। উদাস হয়ে হয়তো তিনি ভাবছেন এই মাঠে বাবার সাথে ঈদের নামাজ পড়ার স্মৃতি। যে বাবা এখন ঐ কবরস্থানে শায়িত।