ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতল বাংলাদেশ। প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচে মাত্র ২৪ বলে ৫২ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত এ জয় উপহার দেন।
শেষ দিকে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২৪ বলে ৩৯ রান। ঠিক ওই সময় ঝড় তুলেন তরুণ এ অলরাউন্ডার। দলের জয়ে ২টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৫২ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন সৈকত। মোসাদ্দেক-সৌম্যর জোড়া ফিফটি গড়া ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে পরাজিত করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের যখন ১৮ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ২৭ রান, ঠিক ওই সময় সাহসী ব্যাট চালান মোসাদ্দেক। অ্যালেনের করা ২২তম ওভারে প্রথম বলটি রিভার্স সুইপে ছক্কা হাঁকালেন তিনি। এর পরের বলেও ছক্কা। এবার ম্যাচ বাংলাদেশের হাতে। কিন্তু থেমে যাননি তিনি।
ক্রিজের অপর প্রান্তে মাহমুদউল্লাহ তখন দর্শকের মতো তার ইনিংস উপভোগ করেন। প্রচণ্ড সাহসিকতার সঙ্গে পরের বলটিও চারে পরিণত করলেন উদীয়মান এ অলরাউন্ডার। পরের বলটি আবারও ছক্কা। এক ওভারে ২৫ রান নিয়ে ম্যাচটা পুরোটাই বাংলাদেশের করে ফেললেন তিনি। এই সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডটিও গড়ে ফেললেন মোসাদ্দেক।
ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে বৃষ্টির বাগড়ায় পড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪ ওভারে সংগ্রহ করে ১৫২/১ রান। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ২৪ ওভারে ২১০ রান।
এমন কঠিন সমীকরণ তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। উদ্বোধনী জুটিতে তারা ৫.৩ ওভারে ৫৯ রান করলেও দ্রুত উইকেট পতনের কারণ টাইগার শিবিরে আবারও দুশ্চিন্তা দেখা দেয়।
কিন্তু সৌম্যের ব্যাট চলে সমান তালে। ২৭ বলে অর্ধশত রান পূর্ণ করা সৌম্য ৪১ বলে ৯টি চার ও তিনটি ছক্কায় ৬৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন।
এরপর মুশফিকের ঝড়ো ব্যাটিং (২২ বলে ৩৬ রান) বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ-সৈকতের ব্যাটে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় টাইগাররা।
তবে মোসাদ্দেকের হাতে বাংলাদেশের ইনিংস যে বর্ণিল সমাপ্তি ঘটেছে তার শুরুটা করেছিলেন সৌম্য সরকার। বাঁহাতি এ ওপেনারের ৪১ বলে ৬৬ রানের দুর্দান্ত ওই ইনিংসটিই মূলত বাংলাদেশকে জয়ের পথ দেখিয়েছে।
১৯৯৮ সালের ১৭ মে ভারতে কেনিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল ওয়ানডেতে প্রথম জয়ের দেখা। ২১ বছর পর সেই দিনেই ঘুচল বড় আক্ষেপ। শেষ হলো প্রতীক্ষা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার বাংলাদেশের পাশে লেখা হলো, ‘চ্যাম্পিয়ন’।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৪ ওভারে ১৫২/১ (হোপ ৭৪, আমব্রিস ৬৯*, ব্রাভো ৩*; মাশরাফি ৬-০-২৮-০, সাইফ ৫-০-২৯-০, মুস্তাফিজ ৫-০-৫০-০, মোসাদ্দেক ২-০-৯-০, মিরাজ ৪-০-২২-১, সাব্বির ২-০-১২-০)।
বাংলাদেশ: ২২.৫ ওভারে ২১৩/৪ (তামিম ১৮, সৌম্য ৬৬, সাব্বির ০, মুশফিকুর ৩৬, মিঠুন ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৯*, মোসাদ্দেক ৫২*; নার্স ৩-০-৩৫-০, হোল্ডার ৪-০-৩১-০, রোচ ৫-০-৫৭-০, গ্যাব্রিয়েল ৩-০-৩০-২, রিফার ৩.৫-০-২৩-২, অ্যালেন ৪-০-৩৭-১)।
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন
ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: শেই হোপ