পেটের সাথে মনের ক্ষুধাও মেটাতে হয় : প্রধানমন্ত্রী

1173
শেখ হাসিনা ও শিল্পী শাহাবুদ্দিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,“শুধু পেটের ক্ষুধা মেটালেই একজন মানুষের ক্ষুধা মেটে না। পেটের সাথে মনের ক্ষুধাও মেটাতে হয়। আর, তা মেটাতে পারে; আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি-কলা এগুলো থেকেই মানুষের মনের ক্ষুধা মেটে।”

সোমবার ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে মাসব্যাপী এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা বলেছেন, এই শিল্পীর তুলির আঁচড়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার যুবকের মনের দুরন্ত তেজ ফুটে উঠেছে। তিনি আরো বলেন, “আমার এই ছোট ভাইটিকে সত্যি আমরা খুব স্নেহ করি”।

প্যারিস প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা এই শিল্পীর চিত্রকর্মের বৈশিষ্ট্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সে যে মুক্তিযোদ্ধা; এই গর্বটা যেমন তার ভেতরে আছে। আর, বঙ্গবন্ধু তার আদর্শ। সেটা হৃদয়ে ধারণ করেই তার ছবি।

“তার ছবির প্রতিটি তুলির আঁচড়ে যে জিনিসটা আমার চোখে লাগে.. মনে হয় যেন সেই যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ভেতরে যে দূরন্ত একটা সাহস, মহান ত্যাগের যে একটা মনোভাব আর শক্তি।

“যুদ্ধে তখনকার মনের যে একটা দুরন্ত তেজ; তার তুলির আঁচড়ে সেই শক্তিটা সব সময় ফুটে ওঠে।”

জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে ১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়ের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে শাহাবুদ্দিন প্যারিসে। তাকে ৭৪ এ প্যারিসে পাঠিয়েছিলেন জাতির পিতা। এরপর তার সঙ্গে আর আমাদের দেখা হয়নি।”

শেখ হাসিনা ও শিল্পী শাহাবুদ্দিন
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দুই বোনই ইউরোপে অবস্থান করছিলেন।

প্রবাসে শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “৮০ সালে আমি লন্ডনে যাই। শাহাবুদ্দিন কোথা থেকে আমার ফোন নম্বর জোগাড় করে। ফোনে কথা হয়। আমি বলি, তুমি শিগগিরি এখনই আস।

“আমরা ঠিকানা দিয়েছি। ওর আসতে বেশ দেরি হচ্ছে। আমি দোতলার জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ দেখি, ঝাঁকড়া চুল মাথা, একটু পাগল পাগল ভাব বাসা রেখে রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আমি ওখান থেকে চিৎকার করলাম, এই শাহাবুদ্দিন, এই শাহাবুদ্দিন। আমি ভাবলাম যদি শাহাবুদ্দিন হয়; ঠিক ঘুরে তাকাবে। রেহানাকে ডেকে বললাম, দেখ তো, শাহাবুদ্দিন যাচ্ছে না? রেহানা দরজা খুলে রাস্তায় বেরিয়ে গেল.. তারপর ওকে আমরা নিয়ে আসলাম।”

১৯৮০ সালের ১৬ অগাস্ট লন্ডনে শেখ হাসিনা প্রথম যে অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেন, সে অনুষ্ঠানের জন্য শাহাবুদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এঁকে দিয়েছিলেন।
সেই কথা মনে করে শেখ হাসিনা বলেন, “রং নাই, তুলি নাই, কিছুই নাই। ওই অবস্থায় এটা ছবি আঁকা একটা দুঃসহ কাজ ছিল। আপনারা অবাক হয়ে যাবেন.. সে কী দিয়ে এঁকেছিল! কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করে, কাগজ পুড়িয়ে ছাই করে, তার সাথে পেস্ট দিয়ে বঙ্গবন্ধুর একটা ছবি সে এঁকে দিল।

“রেহানার বাসায় কার্পেটের ওপর কাগজ বিছিয়ে একটা… একটা সাদা কাগজ জোগাড় করে ও ছবিটা এঁকেছিল।”

শাহাবুদ্দিনের এই প্রদর্শনীটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি ও ভারতের গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারি।

১৯ মার্চ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ২ নম্বর গ্যালারিতে মাসব্যাপী এই প্রদর্শনী চলবে। প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

শেখ হাসিনা ও শিল্পী শাহাবুদ্দিন

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহীম হোসেন খানের সভাপতিত্বে ভারতের গ্যাঞ্জেলস আর্ট গ্যালারির পরিচালক স্মিতা বাজোরিয়া এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বক্তব্য রাখেন।

চিত্রকলা প্রদর্শনী ‘শান্তি’ এর আগে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর কলকাতায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি সে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন। সেই প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া ৩২টি ছবি প্রদর্শিত হবে এবারের প্রদর্শনীতে। পরে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে মুম্বাইয়ে। বাংলাদেশের পর এটা প্রদর্শিত হবে দিল্লিতে।