পুলিশকে সতর্ক করে ১৯ নির্দেশনা

788
Dhaka : Bangladeshi policemen patrol the area around the site of an attack in Dhaka, Bangladesh, Saturday, July 2, 2016. Bangladeshi forces stormed the Holey Artisan Bakery in Dhaka's Gulshan area where heavily armed militants held dozens of people hostage Saturday morning, rescuing some captives including foreigners.AP/PTI(AP7_2_2016_000173A)

‘থানা, চেকপোস্টসহ পুলিশের স্থাপনাগুলোতে নাশকতা-হামলার আশঙ্কা আছে।’ সম্প্রতি গোয়েন্দাদের এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সতর্ক করে স্থাপনাসমূহে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনাটি অ্যাডিশনাল আইজি, র‌্যাব মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতনদের পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখিত নির্দেশনাসমূহ হচ্ছে-

১। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ডিএমপি, এসবি, সিআইডি, র‌্যাব ফোর্সেস হেডকোয়ার্টার্সসহ সব পুলিশ স্থাপনায় স্ক্যানিং করে গাড়ি প্রবেশ ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রবেশের পূর্বে সেই গাড়ি ও ব্যক্তিগত সামগ্রী তল্লাশি করতে হবে। আগতদের পরিচয় লিপিবদ্ধ করতে হবে।

২। থানাসহ স্থাপনাসমূহে সাহায্যকারী, দর্শনার্থীদের নাম-ঠিকানা ও তাদের আগমনের উদ্দেশ্য রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে।

৩। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদর দফতর, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, অস্ত্রাগারে ও পুলিশ লাইন্সের প্রবেশপথে নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র পুলিশ ও তল্লাশির জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হবে।

৪। ক্যাম্প ও ফোর্সের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৫। থানা কিংবা স্থাপনার মেইন গেট ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে সেগুলোকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করে নির্মাণ অথবা মেরামত করতে হবে।

৬। ঝুঁকিপূর্ণ পুলিশ স্থাপনাসমূহের সীমানা প্রাচীর উঁচু করতে হবে অথবা কাঁটাতারের বেড়া দিতে হবে।

৭। রাতে থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত লাইট লাগাতে হবে।

৮। থানাসহ পুলিশ ইউনিটসমূহে মেইন গেট বন্ধ রেখে পকেট গেট খোলা রাখতে হবে। কেউ পায়ে হেটে বা গাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলে তার নাম-পরিচয় নিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করাতে হবে।

৯। নম্বরবিহীন গাড়ি ও মোটরসাইকেল পুলিশ স্থাপনাসমূহে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।

১০। বরাদ্দ অনুযায়ী ইউনিট প্রধানদের ভেহিকেল সার্চিং মিরর, হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর, টর্চ, হ্যালোজেন লাইট ও সিকিউরিটি লাইট নিশ্চিত করতে হবে।

১১। সকল ইউনিট প্রধানকে নিরাপত্তার বিষয়ে নিয়মিত ফোর্সেস ব্রিফিং ও দায়িত্ব পালনে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

১২। অফিস প্রধানগণ সময়ে-অসময়ে আকস্মিকভাবে তার অধীন ইউনিটসমূহ পরিদর্শন করবেন। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।

১৩। ব্যক্তিগত দেহরক্ষী, অধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ পেশাগত জ্ঞান, অস্ত্র চালানোর সক্ষমতা এবং নিরাপত্তা সচেনতা সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত হবেন।

১৪। সকল অফিসার ও ফোর্সকে মাঝে মাঝে অস্ত্র খোলা, জোড়া লাগানো, অস্ত্রের নিরাপত্তা, অস্ত্র চালানোর কৌশল রপ্ত করবেন। ইউনিট প্রধানগণ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করবেন।

১৫। বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে অস্ত্রগারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইউনিট প্রধানগণ পিআরবিতে বর্ণিত বিধিবিধানের কোনো ব্যত্যয় ব্যতীত পরিপূর্ণভাবে পালন করবেন।

১৬। পুলিশ সুপার ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন পুলিশ ইউনিট নির্ধারিত/ আকস্মিক পরিদর্শনে গেলে পুলিশ ইউনিটসমূহের নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই পরিদর্শন করবেন এবং পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন।

১৭। এসিআর মূল্যায়নকারী/প্রতি স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তারা মূল্যায়নধীন পুলিশ কর্মকর্তার নিরাপত্তা সচেতনতার বিষয়টি বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন।

১৮। পুলিশ ইউনিটসমূহের নির্দেশাবলী প্রতিপালনের ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যগণ পেশাগত কারণে কঠোর ও বিনয়ী হবেন এবং কোনক্রমেই যাতে অহেতুক হয়রানি না হয়, ইউনিট প্রধানগণ সেবিষয়ে নিশ্চিত করবেন।

১৯। এ সংক্রান্তে ‘বাংলাদেশ পুলিশ সদস্য ও স্থাপনা সংক্রান্ত নিরাপত্তা নির্দেশিকা’ অনুসরণ করতে করতে হবে।

নিরাপত্তা নির্দেশিকায় সন্ত্রাসী হামলার সময় দ্রুত ‘কুইক রেসপন্স টিম’ পাঠানো, ২৪ ঘণ্টার স্ট্রাইকিং টিম প্রস্তুত রাখা, ব্যকআপ সাপোর্ট (এপিবিএন, র‌্যাব, বিজিবি) ইত্যাদি প্রস্তুত রাখার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়াও পুলিশকে উদ্দেশ্য করে জারি করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বাসা ও মেস ভাড়া দেয়ার আগে আগতদের যথাযথভাবে পরিচয় নিশ্চিত, বাস-রেলস্টেসন, স্থল, বিমান, নৌবন্দরে নিয়ন্ত্রণ ও আকস্মিক তল্লাশির ব্যবস্থা, স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বিকাশের মতো মোবাইল মানি অ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারী এজেন্টদের পরিচয় ও কার্যকর যাচাই-বাছাই এবং নজরদারির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।