পাঠাও: সহজ যাত্রা, বাড়তি আয়

3370
Waliহাসান ওয়ালী

উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশেও দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘রাইড শেয়ারিং’ সেবা। যানজট এড়িয়ে সহজে গন্তব্যে পৌঁছাতে মানুষ এখন এ সেবা বেছে নিচ্ছে। আর সে চাহিদা মেটাতে একটি বিদেশী ও কয়েকটি দেশীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সেবা দিলেও এখন পর্যন্ত জনপ্রিয়তার শীর্ষে ‘পাঠাও’। মোটরসাইকেল দিয়ে যাত্রা শুরু এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে গাড়ি সেবাও দিচ্ছে। তবে গাড়িতে ‘উবার’ এগিয়ে থাকলেও মোটরসাইকেলের জন্য ‘পাঠাওয়ের’ স্থান দখল করতে পারেনি কেউই। গ্রাহক পর্যায়ে পাঠাও সেবার মান নিয়ে মাঝে মধ্যে অভিযোগ থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি চাইছে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে। দিন দিন যাত্রীদের জন্য সহজ যাত্রা আর রাইডারদের বাড়তি আয়ের জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে পাঠাও।

২০১৬ সালের অক্টোবরে শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছে। মাত্র দেড় বছরে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে বিস্তৃত করেছে সেবার পরিধি। সঙ্গে যুক্ত করে নিয়েছে কয়েক হাজার মোটরসাইকেল। একদিকে যানজট এড়িয়ে যাত্রা সহজে যেমন ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি, অন্যদিকে তৈরি করেছে কর্মসংস্থান।

pathao-1পাঠাও কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তামানে প্রতিদিন ৩০০ এর বেশি মোটর বাইক চলে তাদের। এছাড়াও প্রায় ৫০০ বাইক চালক চুক্তিতে পাঠাও সেবা দেন। তুলনামূলক কম টাকায় দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পাঠাও এর সেবা অনেকেই নেন।

সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সার্ভিস সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই সার্ভিসগুলো নিজেদের নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায় করলেও এখন থেকে সরকার নির্ধারিত নীতিমালাই অনুসরণ করতে হবে। এতে করে তুলনামূলক ভাড়া বেড়েছে বলেও জানা যায়।

পাঠাও-এর সর্বশেষ নির্ধারণ করা ভাড়া অনুযায়ী এর ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিসের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৫০ টাকা। প্রতি কিলোমিটারের জন্য ২০ টাকা এবং প্রতি এক মিনিট ওয়েটিংয়ের জন্য ৫০ পয়সা। একই কোম্পানির বাইক সার্ভিসের সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ টাকা। পরের প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা এবং প্রতি মিনিট ওয়েটিং চার্জ ৫০ পয়সা।

pathao-3নীতিমালার কারণে কিছুটা বেশি ভাড়া গুনতে হলেও আপত্তি নেই যাত্রীদের। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ধানমন্ডিতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করেন শাফিউর রহমান। তিনি বলেন ‘ঝামেলা এড়াতে পাঠাও এর বাইকে করে ভার্সিটি যাই। টাকা একটু বেশি লাগলেও সময় বাঁচে। সবচেয়ে বড় কথা এনার্জি লস হয় না।’

পাঠাও-এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) হুসেইন মো. ইলিয়াস বলেন ‘আমরা বাংলাদেশি কোম্পানি হিসেবে সবাইকে আমাদের সর্বোচ্চ সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের অ্যাপে এখন শুধু গাড়ী বা বাইক না, এর বাইরে ফুড এবং পার্সেলও অর্ডার করতে পারেন। আমরা একই অ্যাপের মধ্যে অনেকরকম সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি যেন আর ১০টা অ্যাপ ডাউনলোড করা না লাগে।’

সম্প্রতি হওয়া নীতিমালা সম্পর্কে পাঠাও এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস এর বক্তব্য ‘এই নীতিমালা হওয়াতে আমরাও খুশি। আমরা চাই সরকারের সাথে মিলে কার্যক্রম পরিচালনা করতে।’

সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাড়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সরকার একটি সিস্টেম করেছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। আশা করি যাত্রীরাও বিষয়টি মেনে নিবেন।’

যাত্রী সেবার সাথে সাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখছে পাঠাও। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ এখন পাঠাও-এ ফ্রিল্যান্সিং করেন। দিনের ২০ শতাংশ উপার্জন দিতে হয় পাঠাও-কে। এক্ষেত্রে নিজের একটি মোটরসাইকেল, ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেই এ সেবায় নাম নিবন্ধন করা যাচ্ছে। সঙ্গে থাকতে হচ্ছে একটি ১ জিবি র‍্যামের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ও সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সংযোগ। এ সেবায় যুক্ত হতে নিতে হচ্ছে একটি ছোট প্রশিক্ষণ।

pathoa-4অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে চলছে পাঠাও। দেশীয় কোম্পানি হিসেবে মানুষের আস্থার জায়গায় প্রতিনিয়ত পরিণত হচ্ছে বলেও মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা।

পাঠাও-এর মার্কেটিং ম্যানেজার নাবিলা মাহবুব বললেন একই সুরে ‘দেশীয় কোম্পানি হিসেবে আমরা চাচ্ছি মানুষকে সঠিক সেবা দিতে। মানুষের আস্থার মূল্য রাখা আমাদের বড় কর্তব্য।’