পতিতাদের জীবন কথা; জীবনের দামে কেনা জীবিকা

2666

আসমা আক্তার মুক্তা

এই সমাজ একজন নারীকে পতিতা বানিয়েছে, এই সমাজের মানুষ পতিতা হতে বাধ্য করেছে!এই রাষ্ট্রে পতিতাবৃত্তি অনুমোদিত নয় কিন্তু নিষেধাজ্ঞা নেই।এই রাষ্ট্র একজন নারীর নিরাপত্তা দিতে পারেনি যার জন্য একজন পতিতা তৈরি হয়েছে,কেন সে তার জীবিকার জন্যই এই পেশায় ডুকেছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেনা রাষ্ট্র?আর যে পতিতাবৃত্তি করছে সেই শুধু খদ্দের এর দেয়া পয়সা নিজের ঝুলিতে রাখছেনা,এসব চলে যাচ্ছে কিছু মুখোশ পরা দায়িত্ববান লুটেপুটে খাওয়া মানুষের হাতে যারা সমাজের মাথা! বলছি ‘জীবনের দামে কেনা জীবিকা’ বইটির কথা।
বইটি লিখেছেন- কুররাতুল আইন তাহমিনা,শিশির মোড়ল

প্রত্যেক পতিতার ভাষ্যে বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে পতিতাদের জীবন কথা । বাংলাদেশের কিছু পতিতালয় যেমন টানবাজার,কান্দুপট্টি এগুলোকে সরকার পুর্নবাসন এর কথা বলে উচ্ছেদ করে।টানবাজার কিংবা কান্দুপট্টির পতিতারা সেই উচ্ছেদ এর পর নানান সমস্যায় পড়েন,তাদের যাওয়ার মত কোন পথ ছিল না।না সমাজ তাকে গ্রহণ করবে ,না তাকে কোন কাজ দিবে।এই উচ্ছেদ নিয়ে পতিতাদের সংগঠন ‘উল্কা’ আন্দোলন শুরু করে,তারই ধারাবাহিকতায় এখানে কয়েকজন পতিতাদের পতিতাবৃত্তিতে আসার তার প্রেক্ষাপট এই বইতে তুলে ধরা হয়।এরপর এই পতিতালয় উচ্ছেদ করার পর তাদের উপর আরো গবেষণা করা হয়।গবেষণার মাধ্যমে দেখা যায় পতিতারা খুব কম আছে যারা ইচ্ছে করে এই পেশায় এসেছে, জোর করে এই পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়। পতিতাদের ভাষ্য,এই সমাজ,এই রাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি,এরাই এই বৃত্তিতে ডুকিয়েছে।যারা পতিতাবৃত্তিতে আছে তাদের মধ্যে অধিকাংশের পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট, মাতৃহীন,পিতৃহীন সন্তান যাদের নিরাপত্তা না দেয়ার কারণে,পথেঘাটে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে পরবর্তীতে তারা পতিতালয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
লেখকের কিছু কথা

যৌনতা-বিক্রি যাঁর জীবিকার উপায় এদেশের সমাজ তাঁকে ‘পতিতা’ নাম দিয়ে সমাজের বাইরে ঠেলে দেয়। বহু পুরুষ তার দেহ ভোগ করেন বলে সমাজের বিচারে তিনি অশুচি এবং অপবিত্র। যৌনকর্মীর খদ্দের পুরুষটি কিন্তু সমাজে পতিত হন না। বরঞ্চ সমাজ এরকমও মনে করে যে পুরুষের উচ্ছৃঙ্খল যৌনচাহিদা স্বাভাবিক এবং বৃহত্তর সমাজের সম্পর্কের গণ্ডির বাইরে শুধুমাত্র অর্থের বিনময়ে পুরুষ যদি এ চাহিদা মেটাতে পারে সেটা সমাজের পক্ষে স্বাস্থ্যকর। দারিদ্র্য এবং নানারকম সামাজিক চাপের কারণেই এদেশে একটি মেয়ে যৌনতা বিক্রিকে পেশা হিসেবে নেন। এ কাজ করে মেয়েটির এবং তাঁর পরিবারের পেট চলে, কিন্তু তাঁর আয়ের বিরাট অংশ চলে যায় এই ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকারীদের হাতে। বাংলাদেশে যৌনতা-বিক্রির আইনগত বৈধতার বিষয়টি ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ গোছের। আইনের আলো-আঁধারিতে ব্যবসাটিকে নিয়ন্ত্রণ করে অবৈধ ক্ষমতাচক্র। সে চক্রের অন্যতম খুঁটি পুলিশ স্বয়ং এবং ব্যবসাটির সাথে জড়িত সবরকম অপরাধ ও অত্যাচারের শিকার হন যৌনকর্মী মেয়েটি।
বইটিতে কিছু যৌনকর্মীদের এই পেশাতে কিভাবে এসেছে তা কয়েকজন যৌনকর্মীর অভিব্যক্তি তুলে ধরেন লেখক,এছাড়া বিভিন্ন এনজিও যারা পতিতাদের নিয়ে কাজ করে তাদের কিছু কথা লেখক বিভিন্নভাবে ফুটিয়ে তোলেন।
আসমা আক্তার মুক্তা
নৃবিজ্ঞান বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়