নো পার্কিং আছে, ইয়েস পার্কিং নেই!

মুনিফ আম্মার

804

ঢাকার সড়কে নামলে এখানে সেখানে চোখে পড়ে ‘নো পার্কিং’। লাল রঙের বড় অক্ষরে এ লেখা দেখে নগরের গাড়িগুলো থামার আর জায়গা পায় না। এ সড়ক থেকে ও সড়কে ঘুরে সড়কের অগত্যা সড়কের পাশেই ক্লান্ত হয়ে একসময় থামিয়ে দেয়। আর তখনই বাধে বিপত্তি। একটার পেছনে একটা গাড়ি এসে ‘ট্রেন’ হয়ে যায়। সড়কের বড় একটা অংশ দখল হয়ে যায় পার্কিং করা গাড়িতে। বাকি অংশে চলমান গাড়িগুলোর গতি শ্লথ হয়, আটকে যায়, লেগে যায় যানজট।

ঢাকায় যানজটের এটিই প্রধান কারণ নয়, তবে অন্যতম একটি কারণ। যানজট লাগার জন্য হাজারো উপলক্ষ এ নগরীতে বিদ্যমান। কিন্তু এ বিষয়টি নিরসন ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এ যাবত একটি সমস্যারও সমাধান করতে পারেনি। ফলে প্রতিদিন নগরীর সড়কে নতুন নতুন গাড়ি বাড়ছে, সড়কের পাশে দোকান-বাড়ি উঠছে, আর সড়ক হয়ে পড়ছে সংকুচিত। আশংকা, রাজধানীর হারিয়ে যাওয়া খালগুলোর মতো একসময় সড়কও হারিয়ে যায় কী না!

No parkingএকটি আদর্শ নগরের ২৫ ভাগ সড়ক থাকার বাধ্যতামূলক। ঢাকায় কি আছে? মাত্র ১.৮ ভাগ সড়ক নিয়ে ঢাকার রাস্তাগুলো যে সুয়্যারেজের লাইনের মতো বন্ধ হয়ে যায়নি, সেটাই তো বড় প্রাপ্তি। অন্যান্য সড়কগুলোর কথা আলোচনায় না এনে যদি রাজধানী প্রধান তিনটি সড়কের কথাই তুলে ধরা হয়, তাহলেও তো চমকে ওঠতে হবে। সবচেয়ে ভিআইপি সড়ক বলে পরিচিত শাহবাগ থেকে এয়ারপোর্ট রোড। এ সড়কের পাশেই গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো স্থাপনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও এ সড়কের পাশেই অবস্থিত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, নগরীর সবচেয়ে ভিআইপি সড়কটিও পৃথিবীর উন্নত কোনো দেশের সাধারণ কোনো একটি সড়কের মতো করে গড়ে তোলা যায়নি।

শাহবাগ থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত যেতে অন্তত ১০ জায়গায় নো পার্কিং লেখা আছে। কিন্তু কোথায় ইয়েস পার্কিং বা গাড়ি রাখা যাবে এমন লেখা কারও চোখে কখনোই পড়েনি। এ সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু ভবনগুলোরও বেশিরভাগেই পার্কিং সুবিধা নেই। তাহলে মানুষ তার গাড়ি কোথায় রাখবে?

এমন প্রশ্নের উত্তরে সহজে বলে দেয়া যায়, যে ভবন করেছে পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও তাকেই করতে হবে। খুবই যুক্তিসঙ্গত উত্তর। পার্কিং সুবিধা ছাড়া ভবন নির্মাণে যে রাজউকের অনুমোদন নেই, সেটাও সবার জানা। কিন্তু এটা মানার লোকের বড় অভাব এ নগরীতে। যারা মানছে না, তাদেরকে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয় না। ফলে নো পার্কিং সড়কে পার্কিং করে মামলা খেতে হয়, পুলিশকে টাকা খাওয়াতে হয়। এসবের বিনিময়ে সড়কের যানজট কমে না।

ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া একটি অনুষ্ঠানে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, পার্কিং সুবিধা না থাকায প্রায় দুইশত ভবনের বিরুদ্ধে আমি রাজউককে চিঠি দিয়েছিলাম। কিনউত কোনো অজানা কারণে রাজউক এখনও ভবনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।

প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কার কথা বলবেন আর? বসুন্ধরা সিটির মতো বিশাল শপিং মলেই যখন পার্কিয়ের জায়গায় মোস্তফা মার্ট গড়ে তোলা হয়, তখন আর কার কথা বলবেন?
তার এমন প্রশ্ন যৌক্তিক। কিন্তু এ যুক্তির বিপরীতের নাগরিকদের প্রশ্নের উত্তর কে দেবে, সেটাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ মন্ত্রণালয়, সে দফতর, একজন অন্যজনের ওপর দোষ চাপিয়ে পার পেয়ে গেলেও নগরবাসীকেই যানজটের বসে দিনের দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়। তাদেরকে সিগন্যালে আটকে রেখে ভিআইপিরা শাঁই শাঁই করে ছুটে যায়, কিংবা যেখানে ইচ্ছা সেখানেই গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ে।

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নো পার্কিং যেমন আছে, তেমনই ইয়েস পার্কিংও আছে। ইয়েস পার্কিং নেই শুধু আমাদের দেশে। নো পার্কিং দায় এনে একটা গাড়ির বিরুদ্ধে একজন ট্রাফিক পুলিশ যদি ব্যবস্থা নিতে পারেন, তাহলে ইয়েস পার্কিং সুবিধা নিশ্চিত না করার দায়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কেন নাগরিকরা ব্যবস্থা নিতে পারবে না?

লেখক: সাংবাদিক