নিল ম্যাকেঞ্জির ভাবনা ২০১৯ বিশ্বকাপ

752

দরজায় কড়া নাড়ছে এশিয়া কাপের জমজমাট লড়াই। শিরোপার স্বপ্ন নিয়েই এবার এশিয়া কাপে অংশ নিতে যাচ্ছে টিম বাংলাদেশে। দুইবার ফাইনালে গিয়েও শেষ মুহুর্তে গিয়ে স্বপ্ন ভঙ্গ। এবার আর সেই ভুল নয়। সেরা ক্রিকেট খেলেই স্বপ্ন পূরণ করতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য কঠোর অনুশীলনে ব্যস্ত মাশরাফিবাহিনী। তবে জাতীয় দলের ব্যাটিং পরামর্শক নিল ম্যাকেঞ্জির ভাবনায় আরও বড়। আগামী বিশ্বকাপেও ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

সোমবার বিকেলে জাতীয় দলের অনুশীলন শুরুতে তিনি এসব কথাই বলেন। এশিয়া কাপের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, “এটা আসলে প্রস্তুতির একটা অংশ এবং ছেলেদের বেশ চাপে রাখা। অনেক সময়ই তো সবাই অনুশীলন করে চিরাচরিতভাবে এবং সেখানে তেমন কিছুই থাকেনা। বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেও কিছু ঘটেনা। তাই কোচ স্টিভ রোডস তাদের একটা চাপে ফেলেছেন। বিশ্বের অধিকাংশ ওয়ানডে দল প্রায় সমমানের এবং সে কারণে শেষ ওভারের শেষ বল পর্যন্ত খেলা টিকে থাকে। বড় কোন ম্যাচে পরিস্থিতিগুলো কেমন হতে পারে এখান থেকে তরুনরা শিখতে পারবে। এটা বোলারদের জন্য খুবই ভাল অনুশীলন। তারা নিজেদের ফিল্ডিং সাজানোটা দেখে নিতে পারে এবং নিজের সেরা বলটাও করতে পারে। তারা পরস্পরের সম্পর্কে খুব ভাল করে জানতে পারবে এবং কে কাভারের খুব ভাল খেলে এবং কে শর্ট বলে ভাল সেটাও বুঝতে পারবে।”

স্লগ ওভার নিয়ে টাইগারদের এই ব্যাটিং কোচ বলেন, “কৌশলগতভাবে যে কেউ ভাল অবস্থানে থাকতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা যেভাবে বলকে আঘাত করে আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে যাচ্ছিনা আপাতত। কিন্তু আমরা খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবস্থানে যেতে পারি ভালভাবে বল হিট করার দক্ষতা অর্জন করে। সেজন্য চারটি বৃত্তকে লক্ষ্যস্থল করা হয়েছে- কাভার, পয়েন্ট, মিডউইকেট এবং ৪৫ গজ। বেশ কয়েকজন বিগ হিটার আছে এই দলে। সিপিএলে মাত্রই রিয়াদ ১১ বলে ২৮ রান করেছে। কৌশলগতভাবে যে কেউ ভাল হিটার হতে পারে এবং বড় হিট করার মতো ভাল অবস্থানে যাওয়ার প্রবৃত্তি দেখাতে পারে। যদি প্রতি ওভারে ৬ রান নিতে মনোযোগী হন, আমি হব এক, দুইয়ের জন্য এবং ফাঁকাস্থান পেতে। আমার মনোযোগ কাভার ও মিডউইকেটের ওপর দিয়ে খেলা। আমি সরাসরি বোলারের মাথার ওপর দিয়ে হিট করে বাউন্ডারি চাই। আমি যদি ওভারে ১২ রান চাই, সেক্ষেত্রে আমাকে আরও কিছুটা চড়াও হয়ে হিট করতে হবে এবং বড় শট খেলতে হবে।”

অন্য দলগুলোর তুলনা বাংলাদেশের ওয়ানডে ব্যাটিং পার্থক্য নিয়ে তিনি বলেন, “সিনিয়র খেলোয়াড়দের তৈরি করা পরিস্থিত এখন দেখতে পাচ্ছেন। বাংলাদেশ খুবই ভাল একটি দল। আমাদের শক্তিমত্তা ব্যবহার করতে হবে। যেমন-ব্যাটের ভাল গতি এবং দারুন কব্জির ব্যবহার। আমার মনে হয়না ছেলেদের এসব ভূমিকা পালনের সুযোগ দেয়া হয় গেম প্ল্যানের কারণে। তুলনায় যাওয়া বেশ কঠিন, হয়তো আমাকে ৬/৭ মাস পর আমাকে জিজ্ঞেস করুন, ততোদিনে আমি ছেলেদের বুঝতে পারব। আমার মনে হয় বিটুইন দ্য উইকেটে আমরা বেশ দ্রুত এবং আমাদের খুব ভাল কব্জির ব্যবহার আছে।”

এই দায়িত্বে কতটা মজা পাচ্ছেছন এমন প্রশ্নে ম্যাকেঞ্জি বলেন, “যেকোন আন্তর্জাতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়াটা ভাল ব্যাপার। আমি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সময়টা দারুন উপভোগ করেছি। আর এখানেও সব ছেলেদের আমি চিনি। অবশ্যই আমি কিছু ম্যাচ খেলেছি বাংলাদেশের বিপক্ষে। আমার মনে হয় ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দলে আমি মূল্যবান কিছু ভূমিকা রাখতে পারব। অনেক মেধার সম্মিলন দেখতে পাচ্ছি। আমি তাদের কার্যাবলীর ধরণে বেশ প্রভাবিত হয়েছি, যেমন তাদের ব্যাট চালানোর গতি এবং সাধারণ জ্ঞান। আগামী বছর বিশ্বকাপ হয়তো প্রথম কোন পুরষ্কার দেবে।”

বিগ হিটারের অভাব নিয়ে বলেন, “আমার মনে হয় এই ছেলেদের আমরা অনেক বেশি ছক্কা মারিয়ে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বী করে গড়তে পারি। কিন্তু এরচেয়ে দক্ষতাপূর্ণ শট খেলার মাধ্যমে মেধা দেখানোই আসল। মিস, মিস, ছক্কা, ছকাকা-আমি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের এই ধরণটা বদলাতে চাই। আমি বাংলাদেশের ছেলেদের দেখতে চাই তারা চার, চার এবং চার হাঁকাচ্ছে। আমি বড় বড় ছক্কা হাঁকানোর দিকে খুব বেশি মনোযোগী নই যেটাতে অনেককিছু ঘটতে পারে। আমরা ওভারে ১২ নিতে পারি খুব ভাল তিনটি শটের মাধ্যমে এবং আরেকটি মেধা কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় বল ঠেলে দিয়ে।”

উদ্বোধনী জুটির সমস্যা নিয়ে ব্যাটিং কোচ বলেন, “এই মুহুর্তে আমার একজোড়া উন্মুক্ত চোখ আছে। আপনারা আমাকে এমনটা বলে যেতে পারেন এবং আমি কখনোই এমনটা ভাবব না। আমি সবাইকে গড়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট সময় দিতে চাই। আমি তেমন কোন সমস্যা দেখতে পাচ্ছিনা এখানে। আমার মনে হয় টি-২০ গুলোতে দাস বেশ ভাল ইনিংস খেলেছে। তামিম অনেক রান পেয়েছে। আমার মনে হয় ৫ ওভারে ৭০ রান তোলা সঠিক নিশানায় চলার ধাপ হতে পারে। আমি মনে করি অন্তত একজন তরুন খেলোয়াড় এগিয়ে এসে দেখাবে তারা কি করতে পারে। আমাদের গেম প্ল্যান নিয়ে কথা বলতে হবে, কমিটমেন্ট ও বিভিন্ন বিষয়ে মানসিক দিক নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ভাল কিছু বের করে আনার ব্যাপারে আমি ইতিবাচক। আমি এশিয়া কাপের দলে বেশ কয়েকজনকে বাদ পড়তে দেখেছি, তার মানে যারা আছে তারাই সেরা খেলোয়াড়।”