নিম্ন-মধ্যবিত্তের জীবন রূপায়ণ; বরফ গলা নদী

889

আসমা আক্তার মুক্তা

জীবন কখনো কারো অপেক্ষায় বসে থাকে? “জীবনে এমন কিছু সময় আসে যখন প্রতিটি মানুষকে এক কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে হয়”

১৯৬৯ সালে প্রকাশিত জহির রায়হান এর “বরফ গলা নদী ” বইটি প্রকাশিত হয়।১৯৬৯ সাল,সেই সময়ের একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অভাব, অনটন, আশা,ইচ্ছা,চাওয়া- পাওয়ার এক অবিচ্ছেদ্য রূপায়ণ উপন্যাসে তুলে ধরেছেন। জহির রায়হান উপন্যাসটিতে দুইটি ভাগ দেখান,একটা নিম্ন -মধ্যবিত্ত অন্যটি উচ্চ-মধ্যবিত্ত। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মরিয়ম টিউশনি করে পরিবারকে কিছুটা হলেও টেনে নিয়ে যাচ্ছে,তার বাবা হাসমত আলী কেরানির চাকরি করে এই একটি পরিবারকে তিল তিল করে ওঠাচ্ছেন, মরিয়মের বড় ভাই মাহমুদ সাংবাদিকতা করে যেখানে দেখা যায় মাহমুদ এর একটি ভাষ্যে অফিসের হেড যদি বলে হাতিকে খরগোশ বানাতে খরগোশ বানাতে হবে,তিলকে তাল করতে বললে তালই করতে হবে,মাহমুদের এই উচ্চ-মধ্যবিত্ত মানুষের উপর ছিল সবসময় ক্ষোভ, তারা নিম্ন-মধ্যবিত্তদের গোলাম বানিয়ে রাখে!মাহমুদের পরিবার চলে মরিয়ম এর বর মনসুর এর কিছু আর্থিক সহযোগিতায়।সম্পর্কের উত্থান পতনে মরিয়ম এর সুখের সংসার ছেড়ে বাপের বাড়িতে ঠাঁই পাততে হয়,আর তার কিছুদিন পর ঘর ভেঙে গিয়ে মরিয়মদের পরিবারের সবাই মারা যায়।শুধু বেঁচে থাকে মাহমুদ। মাহমুদ লিলিকে নিয়ে সংসার করে। উপন্যাসের পর্যায়ে দেখা যায় মাহমুদ এমন এক পাথর মূর্তির মত যার মধ্যে মায়া,মমতা যেন সব হারিয়ে গেছে পরিবারে টানা হিচঁড়ায়!জীবনতো কারো অপেক্ষায় বসে থাকনে, জীবন জীবনের গতীতে চলে।
উপন্যাসে জহির রায়হান এর কিছু কথা

“…অতীত। বর্তমান। ভবিষ্যৎ।

ছুরি দিয়ে কেটে-কেটে জীবনটাকে বিশ্লেষণ করার মতো প্রবৃত্তি না হলেও, জীবনের ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলো, টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো স্মৃতি হয়ে দেখা দেয় মনে। সেখানে আনন্দ আছে, বিষাদ আছে। ব্যর্থতা আছে, সফলতা আছে। হাসি আছে, অশ্রু আছে।

অতীতের মতো বর্তমানও যেন ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো ওঠা আর পড়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা কেউ বলতে পারে না। …”

আসমা আক্তার মুক্তা

নৃবিজ্ঞান বিভাগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়