নিজের সৌন্দর্যে অসন্তুষ্ট ছিলেন শ্রীদেবী?

সংবাদসংস্থা

1138
শ্রীদেবী

নিজের সৌন্দর্যে অসন্তুষ্ট ছিলেন শ্রীদেবী, মৃত্যুর পর অনেক প্রশ্নের সাথে এটিও প্রশ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে ভারতীয় মিডিয়াতে। ৫৪ বছরের জীবনে তিনি নাকি ২৯ বার অস্ত্রোপচার করিয়েছেন তিনি! বারবার অস্ত্রোপচার, ফেস লিফটিং— এসবের কারণেই নিজের শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছিলেন শ্রীদেবী? মদ্যপানের সঙ্গে সেই ভারসাম্যহীনতা শ্রীদেবীর অকালমৃত্যুতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে?

ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোয় এসব প্রশ্ন নানাভাবে উঠে আসছে। এই যেমন— বাথটাবের পানিতে পড়ার আগেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন শ্রীদেবী? ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী, পানিতে পড়ে জ্ঞান হারান এই অভিনেত্রী। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের কোথাও তাঁর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার উল্লেখ নেই। তাহলে শ্রীদেবী কেন জ্ঞান হারালেন? শ্রীদেবীর রক্তের নমুনায় অ্যালকোহল পাওয়া গেছে। তাহলে মদ্যপ অবস্থায় বাথটাবের পানিতে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন? কিন্তু কাপুর পরিবারের বন্ধু ও রাজনীতিবিদ অমর সিংহের দাবি, শ্রীদেবীর মদ খাওয়ার অভ্যাস নেই। মাঝেমধ্যে এক-আধটু ওয়াইন খেতেন। তাতে মদ্যপ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। হোটেলের রুম সার্ভিসের এক কর্মীর কথা নিয়েও রহস্যের দানা বেঁধেছে। এই কর্মী দাবি, শ্রীদেবী মিনারেল ওয়াটার বোতলের জন্য রুম সার্ভিসে ফোন করেন। কিন্তু সেই কর্মী গিয়ে দরজায় টোকা মারলেও দরজা খোলেননি শ্রীদেবী। পরে দরজা ভাঙতে হয়। তখন দেখা যায়, তিনি বাথরুমের মেঝেয় পড়ে আছেন। তখনো নাকি শ্রীদেবীর পালস পাওয়া গিয়েছিল। তাহলে শ্রীদেবী তখনো বেঁচে ছিলেন? আবার বলা হচ্ছে, বনি কাপুর হোটেলের বাথরুমে গিয়ে শ্রীদেবীর মৃতদেহ উদ্ধার করেন। তাহলে তিনি মৃত্যুর সময় শ্রীদেবীর আশপাশেই ছিলেন?

শ্রীদেবী

এমনই নানা প্রশ্ন সামনে রেখে শ্রীদেবীর মৃত্যুর রহস্যের জট খুলতে চেষ্টা করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পুলিশের তদন্তকারী দল। দুবাই প্রশাসন জানিয়েছে, তাদের তদন্ত এখনো চলছে।

ভারতের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মধ্য থেকে প্রশ্ন উঠেছে, শ্রীদেবীর রক্তের নমুনায় যদি অ্যালকোহল পাওয়া যায়, তবে তার পরিমাণ কত? কোনো ব্যক্তির শরীরে যদি ‘২০০ মিলিগ্রাম’ অ্যালকোহল থাকে, তাহলে তাঁর পক্ষে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। সেই ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যেতেই পারেন। এ ক্ষেত্রে শ্রীদেবী কীভাবে বাথটাবে পড়েছিলেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। যদি মদ্যপ অবস্থায় বাথটাবের পানিতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকেন, তাহলে মুখ ও নাক পানির মধ্যে ডুবে গিয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু হবে। এ সময় বাথটাবে অল্প পানি থাকলেও বাঁচা কঠিন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘শ্যালো ওয়াটার ড্রাউনিং’। তা না হলে রহস্য খুব জটিল। কিন্তু যাঁরা শ্রীদেবীর দেহ উদ্ধার করেন, তাঁরা তখন কী দেখেছেন? শ্রীদেবী কীভাবে বাথটাবে পড়ে ছিলেন?

ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অজয়কুমার গুপ্ত বলেন, ‘বাথরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল, নাকি খোলা ছিল, এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।’ তাঁর মতে, যদি দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকে এবং তা ভেঙে শ্রীদেবীকে উদ্ধারের চেষ্টা হয়, তাহলে এই মৃত্যু সত্যিই ‘অ্যাক্সিডেন্টাল’। যাবতীয় জল্পনার অবসান হতে পারে এখানেই। তা না হলে কিন্তু ‘খুনের উদ্দেশ্য থাকতে পারে’ ধরে নিয়ে তদন্ত হবে। পাশাপাশি, মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে কি না, কিংবা মুখ থুবড়ে বাথটাবে পড়ে গেলে মুখমণ্ডলে আঘাত রয়েছে কি না, তাও গুরুত্বপূর্ণ।

Emirates Towers
জুমেইরাহ এমিরেটস টাওয়ার হোটেলের ২২০১ নম্বর রুমে উঠেছিলেন শ্রীদেবী।

গত শনিবার রাতে দুবাইয়ের জুমেইরাহ এমিরেটস টাওয়ার হোটেল থেকে শ্রীদেবীর অচেতন দেহ নিয়ে যাওয়া হয় রশিদ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, অনেকক্ষণ আগেই শ্রীদেবীর মৃত্যু হয়েছে। হোটেলের ২২০১ নম্বর রুম এরই মধ্যে সিল করেছে দুবাই পুলিশ। এই রুমেই ছিলেন শ্রীদেবী। আরও জানা গেছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত শ্রীদেবীর মরদেহ আল কিউসাইস মর্গে থাকবে।

দুবাইয়ে নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালের বাইরে যেকোনো মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে দেখা হয়। আর তা স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও। এরই মধ্যে বনি কাপুর এবং মোহিত মারওয়ারের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুবাই পুলিশ। ননদের ছেলে মোহিত মারওয়ারের বিয়ে উপলক্ষে মেয়ে ও স্বামীর সঙ্গে দুবাই যান শ্রীদেবী। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বনি কাপুরকে দুবাই ত্যাগ না করার জন্য বলা হয়েছে।