মুন। জান্নাতুন নূর মুন। চাঁদের দ্যুতি নিয়েই অভিষেক ঘটেছে চলচ্চিত্রে। আজ মুক্তি পেল তার অভিনীত দ্বিতীয় ছবি কালের পুতুল। প্রথম ছবি গহীন বালুচর দিয়েই মন জয় করে নিয়েছেন চলচ্চিত্রামোদীদের। সর্বমহলের দর্শকও তাকে গ্রহণ করেছেন দ্বিধাহীন চিত্তে। কালের পুতুল মুক্তির আগ মুহূর্তে অপার সম্ভাবনা নিয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখা মুনের মুখোমুখি হয়েছে ‘এখন’। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাসান ওয়ালী। ফটোগ্রাফিতে ছিলেন মুজাহিদ হাসান রিফাত।
এখন : কালের পুতুল মুক্তি পেল, অনুভূতি কেমন?
মুন : এইটা আমার সেকেন্ড মুভি রিলিজ পাচ্ছে। কিন্তু প্রথম শ্যুটিং করা মুভি। ভিট-চ্যানেল আই টপ মডেল ২০১৪তে সেকেন্ড রানার আপ হওয়ার পরপরই এই অফারটা আসে।এর আগে কয়েকটা সিঙ্গেল নাটকে কাজ করা হয়েছে। তো সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে মুভিটা এখন রিলিজ পাচ্ছে।
এখন : মুভির কাহিনী কী নিয়ে গড়ে উঠেছে?
মুন : আপনারা জানেন এইটা সাসপেন্স ত্রিলার ফিল্ম। ১১ জন খুনি থাকে যাদেরকে বান্দরবানে একটা কটেজে আমন্ত্রন করা হয়। তাদের স্বাগত জানায় এক আদিবাসী, অতিথি আপ্যায়নের জন্য যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার কাছ থেকেই জানা যায়, রশীদ চৌধুরী সেদিন দুপুরে উপস্থিত হয়ে লাঞ্চে যোগ দেবেন এমনই গল্পে থ্রিলার ধর্মী গল্পের ছবিটি। এরপরই মূলত কাহিনী এগিয়ে যায়। আর আমার চরিত্র হচ্ছে আমি একজন মাদকাসক্ত মডেল থাকি। যে তার বাবা-মাকে খুন করে জেলে যায়। এবং একটা সময় ছাড়া পাই।
এখন : বিশেষ কোন ম্যাসেজ পাবে এই মুভি দেখে দর্শক?
মুন : এই ১১ জন ক্যারেক্টার আলাদা আলাদা শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কেউ ব্যবসায়ী, কেউ মডেল, কেউ ডাক্তার । আমি মডেল এর ক্যারেক্টার করছি। দর্শকরা ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন।
এখন : এই মুভিতে ফেরদৌস, শাহেদ আলী, রাইসুল ইসলাম আসাদ অভিনয় করেছেন। কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
মুন : নরমালি মনে হয় হিরো যে থাকে বা বড় অভিনেতা থাকলে একটা ভাব নেয়, বা গুরুত্ব কম দেয়, এরাকম মনে হয়নি। আর মুভিটাতেও সবাইকে আসলে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এখন : আপনার প্রথম ছবি গহীন বালুচর তো দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ওই মুভিটা করতে পেরে নিজেকে কি তৃপ্ত মনে হয়?
মুন : হ্যাঁ অবশ্যই। প্রথমত সৌদ ভাইয়ের মতো বড় ডিরেক্টর এর সাথে কাজ করতে পেরেছি। যিনি টেলিভিশনে অনেক বড় ডিরেক্টর। তার প্রথম মুভি ছিল এইটা। এছাড়াও সুবর্ণা ম্যাম এর মতো লিজেন্ড ছিলেন, ফজলুর রহমান বাবুর মতো এতো বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন। এইটার এক্সপেরিয়েন্স আসলে আমার জীবনের জন্য দরকার ছিল।
এখন : আচ্ছা, এরপরে কালের পুতুল করলেন। গহীন বালুচর আর কালের পুতুলের মধ্যে আপনার পছন্দের চরিত্র কোনটাতে ছিল?
মুন : দুইটা ডিফরেন্ট ক্যারেক্টার। দুই মেরুর দুই ক্যারেক্টার। তো এইখানে পছন্দ বা অপছন্দের কিছু নাই। আমি যে ক্যারেক্টারটা করতে পারি আমি মূলত সেই ক্যারেক্টারই চুজ করি।
এখন : আপনি চরিত্র বেঁছে বেঁছে কাজ করার কথা বললেন। আমাদের দেশে যারা নতুন আসেন কাজ করতে, তারা চরিত্র বাঁছাইয়ের ক্ষেত্রে কতটুকু সুযোগ পান?
মুন : আমার মনে হয় আমি যে কটা অফার পাচ্ছি। আমি চুজ করেই নিচ্ছি। তবে প্রতিটা ফিল্মেই যে আমাকে নায়িকার রোলটাই করতে হবে এমন না। যখন যে ক্যারেক্টারটা আমাকে মানাবে আমি তখন সেই মুভিটাই করবো।
এখন : আপনার দুটো মুভিই ভিন্ন ঘরানার, বাণিজ্যিক মুভি না। ডিরেক্টররা কি আপনাকে এই ধরণের মুভির ক্ষেত্রেই বেশি পারফেক্ট মনে করছেন?
মুন : আমি জানি না আসলে। আমি যে কয়টা মুভি করেছি বা করছি সবগুলোতেই অডিশন দেওয়ার পরেই তারা আমাকে পছন্দ করেছেন, সেকেন্ড অপশন রাখেননি। কালের পুতুলের পরে শ্যুটিং করেছি চন্দ্রাবতী কথা নামে একটা মুভির।
এখন : অফার পেলে কমার্শিয়াল মুভি করতে চান?
মুন : সেটা ডিপেন্ড করছে ভালো গল্পের উপর। ভালো কোয়ালিটির মুভিতে কাজ করতে চাই। আমাদের এখানে জাজ যেমন ভালো ভালো মুভি বানাচ্ছে, বা ঢাকা অ্যাটাক যেমন মুভি। এই ধরণের ভালো মুভিতে সুযোগ পেলে নিশ্চয় করবো।
এখন : সবাই তো নায়িকা হতে চান। কমার্শিয়াল মুভিতে কাজ করতে চান। কিন্তু আপনি এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ঘরানার বাইরের মুভিতে কাজ করতে বেশি আগ্রহী…
মুন : আমি নায়িকা নয়, অভিনেত্রী হতে চাই। আমি চাই মানুষ আমাকে অভিনেত্রী হিসেবেই চিনবে।
এখন : একসময় নাটক এর কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, এখন কি ছোটপর্দায় কাজ করছেন না?
মুন : সিঙ্গেল নাটকে অফার পাচ্ছি, কিন্তু সময়ের অভাবে করা হচ্ছে না। তবে আমি সিঙ্গেল নাটকে কাজ করবো। এখন কালের পুতুলের মুক্তির পাবলিসিটি নিয়ে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। সামনে আরো কয়েকটা মুভির কথা হচ্ছে। এই আরকি।
এখন : এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কী কী কাজ করা হয়েছে ?
মুন : উল্লেখযোগ্য বলতে আমি বেশিরভাগ চ্যানেল আইয়ের কাজ করেছি। এই বাইরে আরটিভিতে কাজ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বলতে রবীন্দ্রনাথের গল্পের দুই নাটকে কাজ করার সুযোগ হয়েছে মূল চরিত্রে। এটি নিঃসন্দেহে আমার জন্য তৃপ্তির।
এখন : ছোটবেলা থেকেই কি স্বপ্ন দেখতেন অভিনেত্রী হবেন?
মুন : না আসলে ছোটবেলা থেকে না। আমি যখন নাইনে পড়ি তখন থেকেই আমি বিভিন্ন বিউটি কনটেস্ট শো দেখতাম। এরপর এইচএসসির পরে ভিট-চ্যানেল আই টপ মডেল ২০১৪ এ অংশশগ্রহণ করি এবং সেকেন্ড রানার আপ হই। তখন থেকেই শুরু আসলে।
এখন : বাংলাদেশের বর্তমান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা আছে। আপনার মূল্যায়ন কেমন?
মুন : আমাদের দেশের অনেক ভালো ডিরেক্টর আছেন, ভালো গল্প আছে। আপনি যদি মনপুরা দেখেন তুমুল জনপ্রিয় মুভি, এইটা তো কমার্শিয়াল মুভি না। সাম্প্রতিক সময়ের আয়নাবাজিও ওইভাবে কমার্শিয়াল না। কিন্তু তাদের মূল জিনিসটা হচ্ছে প্রমোশন ভালো ভাবে করেছেন। কালের পুতুলের কথা যদি বলেন, মানুষ সেদিন জানলো কালের পুতুলের কথা। কিন্তু আমরা যদি আরও ভালো প্রমোশন করতে পারতাম তাহলে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারতাম।
এখন : আমাদের দেশের ইন্ডাস্ট্রিতে মেয়েদের কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় বলে শোনা যায়। সম্প্রতি একজন অভিনেত্রীর এমন অভিযোগে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হলো। আপনার কাছে কী মনে হয়?
মুন : ভালো খারাপ আসলে সব ক্ষেত্রেই থাকে। এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে খারাপ মানুষ নেই। সুতরাং কাজ করতে হবে। ভালো খারাপ থাকবেই। আমি মনে করি যার যার সেফটি তার নিজের কাছেই।
এখন : বর্তমান সময়ে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে কাদের অভিনয় ভালো লাগে?
মুন : জয়া আপু আছেন আমার পছন্দের অভিনেত্রী। সুবর্ণা মুস্তাফার অনেক বড় ফ্যান আমি।
এখন : জয়া আহসানের কথা বললেন, তিনি তো এপার বাংলা এবং ওপার বাংলায় তুমুল জনপ্রিয়। একইসাথে কাজ করছেন। সুযোগ পেলে আপনি কাজ করবেন ওপার বাংলায়?
মুন : হ্যাঁ, নিশ্চয়। আমি মূলত ভালো গল্প চাই। ভালো গল্প পেলে ভালো ক্যারেক্টার পেলে আমি যেকোন কাজ করতে চাই। কমার্শিয়াল বা অফট্র্যাকের মুভি যাই হোক, ভালো গল্প পেলেই আমি কাজ করবো।