‘ধ্বসের পেছনে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের অরাজকতা অন্যতম কারণ’

666

২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধ্বসের পেছনে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের অরাজকতা অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা।

তিনি বলেছেন, “দক্ষতার অভাবে ঘুরেফিরে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে কয়েকটি মার্চেন্ট ব্যাংক বা ইস্যু ম্যানেজার ইস্যু আনছে।”

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজাধানীর একাত্তর হোটেলে ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ আয়োজিত ‘প্রাইমারী মার্কেট সম্পর্কে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা’ সেমিনারে বিএসইসির কমিশনার এসব কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ।

অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা বলেন, “প্রায় ৬০টি ইস্যু ম্যানেজার থাকলেও অভিজ্ঞতার অভাবে ঘুটি কয়েক প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে আইপিও মাধ্যমে ইস্যু আনছে। প্রত্যেকটি মার্চেন্ট ব্যাংকের আইপিওর জন্য ইস্যু জমা বাধ্যতামূলক খাকলেও তা অনেকেই পারছে না।”

কোম্পানির উদ্যোক্তাদের ওপর কোম্পানির ভালো-মন্দ নির্ভর করে এমন উক্তি করে তিনি বলেন, “বিনিয়োগের আগে অবশ্যই তাদের সর্ম্পকে জেনে নেয়া জরুরি। উদ্যোক্তাদের অসৎ উদ্দেশ্যের কারনে ভালো কোম্পানিও শেয়ারবাজারে এসে খারাপ অবস্থানে চলে যায়। আবার উদ্যোক্তাদের সৎ উদ্দেশ্যের অনেক দূর্বল কোম্পানিগুলো ভালো অবস্থানে নেই।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক সময় কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তাদের ইতিহাস খারাপ হলেও কমিশন তাদের কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিয়ে থাকে। কারণ তারা নিয়মানুযায়ী সব ধরনের কাগজপত্র জামা দেয়। এ কারণে পরিচালনা পর্ষদে কম বয়সের পরিচালক থাকলেও সেসব কোম্পানির আইপিও অনুমোদন পায়। এসব কোম্পানির অনুমোদন পেলেও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে আপনাদের।”

স্বপন কুমার বালা বলেন, “যদিও বিষয়টি নিয়ে কেউ বলেনি। তবে ওইসময় প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রয় নিয়ে নানা অরাজকতা দেখা গেছে। এমনও দেখা গেছে অর্থ দিয়ে পরে প্লেসমেন্টের শেয়ার পাওয়া যায়নি। আবার যে পরিমাণ দেওয়ার কথা ছিল, তা দেয়া হয়নি।”

বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) দাবি নিয়ে কথা বলা শেয়ারহোল্ডারের মৌলিক অধিকার নিয়ে তিনি বলেন, “যদি এ অধিকার শেয়ারহোল্ডারদের আদায় করে নিতে হবে। তাও না পারলে কমিশনে অভিযোগ করতে হবে। অভিযোগের আলোকে কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

সরকারি কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে স্বপন কুমার বালা বলেন, “রাষ্টায়াত্ত্ব কোম্পানি বাজারে আনার বিষয়ে জটিলতা ছিল। বর্তমানে তা কেটে গেছে। আমরা মিটিং করছি ওইসব প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে। আশা করছি রাষ্টায়াত্ত্ব অনেক প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে আসবে।”

বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে তিনি বলেন, “বহুজাতিক কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আসতে বাধ্য করা যাবে না। বর্তমান আইনে তাদের আনতে বাধ্য করা যাবে। তবে যাদের মূলধন বেশি তাদেরকে নিয়মানুযায়ী শেয়ারবাজারে আনার কাজ চলছে।”

বন্ড মার্কেন্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, “বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে শক্তিশালী কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি ৩ মাসের মধ্যে বন্ড মার্কেট নিয়ে সুপারিশ উপস্থাপন করবে। আশা করছি কমিটি বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের জন্য সবধরনের সমস্যা চিহ্নিত করবে। তা বন্ড মার্কেট উন্নয়নে সহায়ক হবে।”

বিএমবিএর সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “এবার বিশ্বে ৮৪টি দেশ ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উদযাপন করছে। যা বাংলাদেশেও করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিনিয়োগকারীদেরকে শিক্ষিত ও সচেতন করা। যাতে তারা সঠিক বিনিয়োগ করতে পারে এবং ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। সেমিনারে লোভ ও আতঙ্ক থেকে বিনিয়োগকারীদের দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিএমবিএর ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ।”

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএমবিএর কার্যকরী সদস্য মাহবুব হোসেন মজুমদার, তাহিদ আহমেদ চৌধুরী ছাড়াও মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ বিনিয়োগকারীরা।