ধমক দিয়ে পাল্টা মার খেলেন সার্জেন্ট

770

ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চাওয়াকে কেন্দ্র করে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট বায়েজিদ ধমক দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। তারপরেই ঘটনা উল্টে গেছে। শিক্ষার্থীদের হাতে মার খেলেন সার্জেন্ট বায়েজিদ। ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাবরেটরি সিগন্যালে বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) দুপুরে এই ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সার্জেন্ট বায়েজিদ নিজের মোটরসাইকেলে চড়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি সিগন্যালে এলে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা তার গতিরোধ করে লাইসেন্স দেখতে চায়। সার্জেন্ট বায়েজিদ তখন উত্তেজিত হয়ে যান। এতে শিক্ষার্থীদের রোষানলে পড়েন তিনি। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সার্জেন্টের ওপরে হামলা হয়। তার মাথা এবং শরীরে কিল-ঘুষি মারা হয়।

আন্দোলনরত ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী জানান, তিনি শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা না করে হাত তোলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। তখন তাকে মারতে থাকে কিছু শিক্ষার্থী। তবে অন্য শিক্ষার্থীরা ওই সার্জেন্টকে উদ্ধার করে সায়েন্স ল্যাবরেটরি পুলিশ বক্সে নিয়ে আসে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরাই আবার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে পপুলার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপরে হাত তোলার খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত হয়ে ওঠে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা দুটি বাস ভাঙচুর করে এবং সার্জেন্ট বায়েজিদের সরকারি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

পুলিশের নিউমার্কেট জোনের এএসপি মো. শহীদুজ্জামান বলেন, ‘সার্জেন্ট বায়েজিদ বদলি ডিউটিতে এসেছিল। পথে কী হয়েছে, তা সঠিকভাবে বলতে পারবো না। বায়েজিদ মাথায় আঘাত পেয়েছে। চিকিৎসকরা এক্সরে আর সিটিস্ক্যান করতে বলেছেন। রিপোর্ট আসার পর বলা যাবে আঘাত কীরকম।

সার্জেন্ট বায়েজিদের মোটরসাইকেলে আগুন দেয় শিক্ষার্থীরাপ্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে (র‌্যাডিসন হোটেলের উল্টোদিকে) বাসচাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমানবন্দর সড়কের বাঁ-পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলো দিয়া খানম মীম ও আব্দুল করিম। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। পথচারীরা সঙ্গে সঙ্গে আহতদের নিকটস্থ কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে গুরুতর আহত কয়েকজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে ভর্তি করা হয়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা জাবালে নূর পরিবহনের ওই বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় ও শতাধিক বাস ভাঙচুর করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণ ও নৌপরিবহনমন্ত্রীর অনৈতিক বক্তব্যের প্রতিবাদসহ ৯ দফা দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। গত পাঁচদিন ধরে শিক্ষার্থীরা রাজধানীর সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। বুধবার (১ আগস্ট) বিকালে বাস মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। একই দিন সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) রাজধানীসহ সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণার কথা জানানো হয়।