দ্বিস্তরের দল নির্বাচনপ্রক্রিয়া! বিতর্কিত পথেই বিসিবি

1090

এখন রিপোর্ট।।

খেলাধুলার ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত আর আছে কি না সন্দেহ। সেই দৃষ্টান্তও ভালো কিছু নয়। দল নির্বাচনে নির্বাচকদের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপের দুয়ার খুলে দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের নির্বাচক কমিটি হতে যাচ্ছে দ্বিস্তরবিশিষ্ট। কাল মিরপুরের বোর্ড কার্যালয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা শেষ। এখন শুধু বোর্ড সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন হবে।
সেটা হয়ে গেলে নাজমুল হাসানের নেতৃত্বাধীন বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ গায়ে কলঙ্কের কালিই মাখবে। বর্তমান বোর্ডে বলার মতো পর্যায়ে ক্রিকেট খেলা পরিচালক আছেন ছয়-সাতজন। তিনজন আবার জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। দল নির্বাচনে নির্বাচকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কতটা বিপজ্জনক, সেটি তাঁদের চেয়ে ভালো আর কাদের বোঝার কথা! অথচ এই সাবেক ক্রিকেটারদের চোখের সামনেই বিসিবির দল নির্বাচন-প্রক্রিয়া এমন এক রূপ নিতে যাচ্ছে, যেটির তুলনা ক্রিকেট-বিশ্বেই আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কাল বিসিবির কয়েকজন পরিচালক, জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে এক সভা শেষে নাজমুল হাসান জানালেন পরিবর্তিত দল নির্বাচন-প্রক্রিয়াটি হবে দ্বিস্তরবিশিষ্ট। প্রথম স্তরে থাকবে নির্বাচক প্যানেল, দ্বিতীয় স্তরে নির্বাচক কমিটি। ‘আমরা নির্বাচন-প্রক্রিয়াটিকে দুই ভাগে ভাগ করেছি। তিনজনের একটি নির্বাচক প্যানেল থাকবে। তাতে একজন প্রধান নির্বাচক ও দুজন নির্বাচক থাকবেন। তাঁরা দল নির্বাচন করবেন। আরেকটা থাকবে নির্বাচক কমিটি। তাতে প্রধান নির্বাচকসহ তিন নির্বাচক, প্রধান কোচ ও টিম ম্যানেজার থাকবেন’—বলেছেন সভাপতি। এই প্রক্রিয়ায় দল নির্বাচনের আগে কোচ তাঁর কৌশলগত পরিকল্পনার কথা জানাবেন নির্বাচকদের। প্রতিপক্ষ, কন্ডিশন—এসব বিবেচনায় তিনি কী ধরনের দল চান, দেবেন সে ধারণাও। তিন নির্বাচক সে অনুযায়ী দল গঠন করে তা নিয়ে কোচ এবং ম্যানেজারের সঙ্গে বসবেন। ক্রিকেট পরিচালনা-প্রধানকে আহ্বায়কের ভূমিকায় রেখে এই সভাতেই চূড়ান্ত হবে দল। তিন নির্বাচক, কোচ, ম্যানেজার এবং নির্বাচক কমিটির আহ্বায়ক ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান—এই ছয়জনের স্বাক্ষরসহ দলটি পাঠানো হবে বোর্ড সভাপতির কাছে। দল নির্বাচনের জন্য এ রকম একটা প্রক্রিয়া সৃষ্টি করতে পেরে বেশ তৃপ্ত নাজমুল হাসান, ‘সদস্যরা সবাই সই করে আমার কাছে দল দেবে। কাজেই এখানে দ্বিমত থাকার কোনো সুযোগ নেই।’
কিন্তু নির্বাচক এবং টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যকার দ্বিমত-অবিশ্বাস দূর করার আর কোনো চেষ্টা না করে একটা স্বতঃসিদ্ধ নীতি বদলে ফেলাটা কেমন সমাধান! নিয়ম রক্ষার জন্য ব্যক্তির পরিবর্তন স্বাভাবিক, নাকি ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার জন্য নিয়ম বদল?
নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় টিম ম্যানেজারের অন্তর্ভুক্তিও বিস্ময়কর। কোচ-অধিনায়কের মত এখানে থাকতেই পারে, কিন্তু ম্যানেজার কেন? বোর্ড সভাপতি যা বোঝাতে চাইলেন তাতে মনে হলো, এখানে ম্যানেজারের ভূমিকা হবে অনেকটা ‘চাঁদের’ মতো। চাঁদের যেমন নিজস্ব আলো নেই, দল নির্বাচনে টিম ম্যানেজারেরও কোনো মত থাকবে না। তিনি করবেন দূতিয়ালি। নাজমুল হাসানের ভাষায়, ‘ম্যানেজারের ভূমিকা মূলত অধিনায়ক, সহ-অধিনায়কদের চিন্তাভাবনা নির্বাচক কমিটিকে জানানো।’ কিন্তু সেটা তো অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক নিজেরাই পারেন, মাঝখানে বার্তাবাহকের প্রয়োজন পড়ছে কেন? সভাপতির ব্যাখ্যা, ‘আমরা মনে করেছি ম্যানেজারের সঙ্গে অধিনায়ক এবং খেলোয়াড়দের যে যোগাযোগ আছে সেটা যথেষ্ট। তা ছাড়া একেক ফরম্যাটে অধিনায়ক একেকজন হতে পারে। ম্যানেজার তো ঠিক থাকবে।’ ভিন্ন ভিন্ন দলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন অধিনায়কের মতামতই বা কেন সরাসরি নেওয়া যাবে না, সেই প্রশ্ন এরপর আর কেউ করেনইনি।
নতুন প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত দল নির্বাচনে মোট ছয়জনের অংশগ্রহণ থাকলেও মাঠে মাঠে ঘুরে ঘরোয়া ক্রিকেট দেখে খেলোয়াড় খোঁজার দায়িত্ব থাকছে তিন নির্বাচকের কাঁধেই। কোচের খেলা দেখাটা বাধ্যতামূলক নয়! সে ক্ষেত্রে নির্বাচকেরা অচেনা কোনো প্রতিভা তুলে আনতে চাইলে কোচ কিসের ভিত্তিতে সে ব্যাপারে মতামত দেবেন?
এই প্রশ্নটা যেমন কৌতূহলোদ্দীপক, তেমনি দ্বিস্তরবিশিষ্ট দল নির্বাচন-প্রক্রিয়া নিয়ে বর্তমান নির্বাচকদের প্রতিক্রিয়া কী হবে, কৌতূহল থাকছে তা নিয়েও। কিন্তু প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ কাল এ নিয়ে কোনো মন্তব্যই করেননি। প্রতিক্রিয়া জানাতে তিনি বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান।
তবে নির্বাচকদের ঘনিষ্ঠ সূত্রের তথ্য, দল নির্বাচনে দুই বোর্ড পরিচালকের সম্পৃক্ততা এবং নির্বাচিত দলে কোচের পরিবর্তন আনার সুযোগ রাখাটাকে কোনোভাবেই স্বাগত জানাতে পারছেন না তাঁরা।

দ্বিস্তরেরদলনির্বাচনপ্রক্রিয়া!

বিতর্কিতপথেইবিসিবি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

খেলাধুলার ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত আর আছে কি না সন্দেহ।সেই দৃষ্টান্তও ভালো কিছু নয়।দল নির্বাচনে নির্বাচকদের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপের দুয়ার খুলে দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের নির্বাচক কমিটি হতে যাচ্ছে দ্বিস্তরবিশিষ্ট।কাল মিরপুরের বোর্ড কার্যালয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা শেষ।এখন শুধু বোর্ড সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন হবে।

সেটা হয়ে গেলে নাজমুল হাসানের নেতৃত্বাধীন বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ গায়ে কলঙ্কের কালিই মাখবে।বর্তমান বোর্ডে বলার মতো পর্যায়ে ক্রিকেট খেলা পরিচালক আছেন ছয়-সাতজন।তিনজন আবার জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক।দল নির্বাচনে নির্বাচকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কতটা বিপজ্জনক, সেটি তাঁদের চেয়ে ভালো আর কাদের বোঝার কথা! অথচ এই সাবেক ক্রিকেটারদের চোখের সামনেই বিসিবির দল নির্বাচন-প্রক্রিয়া এমন এক রূপ নিতে যাচ্ছে, যেটির তুলনা ক্রিকেট-বিশ্বেই আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।কাল বিসিবির কয়েকজন পরিচালক, জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে এক সভা শেষে নাজমুল হাসান জানালেন পরিবর্তিত দল নির্বাচন-প্রক্রিয়াটি হবে দ্বিস্তরবিশিষ্ট।প্রথম স্তরে থাকবে নির্বাচক প্যানেল, দ্বিতীয় স্তরে নির্বাচক কমিটি। ‘আমরা নির্বাচন-প্রক্রিয়াটিকে দুই ভাগে ভাগ করেছি।তিনজনের একটি নির্বাচক প্যানেল থাকবে।তাতে একজন প্রধান নির্বাচক ও দুজন নির্বাচক থাকবেন।তাঁরা দল নির্বাচন করবেন।আরেকটা থাকবে নির্বাচক কমিটি।তাতে প্রধান নির্বাচকসহ তিন নির্বাচক, প্রধান কোচ ও টিম ম্যানেজার থাকবেন’—বলেছেন সভাপতি।এই প্রক্রিয়ায় দল নির্বাচনের আগে কোচ তাঁর কৌশলগত পরিকল্পনার কথা জানাবেন নির্বাচকদের।প্রতিপক্ষ, কন্ডিশন—এসব বিবেচনায় তিনি কী ধরনের দল চান, দেবেন সে ধারণাও।তিন নির্বাচক সে অনুযায়ী দল গঠন করে তা নিয়ে কোচ এবং ম্যানেজারের সঙ্গে বসবেন।ক্রিকেট পরিচালনা-প্রধানকে আহ্বায়কের ভূমিকায় রেখে এই সভাতেই চূড়ান্ত হবে দল।তিন নির্বাচক, কোচ, ম্যানেজার এবং নির্বাচক কমিটির আহ্বায়ক ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান—এই ছয়জনের স্বাক্ষরসহ দলটি পাঠানো হবে বোর্ড সভাপতির কাছে।দল নির্বাচনের জন্য এ রকম একটা প্রক্রিয়া সৃষ্টি করতে পেরে বেশ তৃপ্ত নাজমুল হাসান, ‘সদস্যরা সবাই সই করে আমার কাছে দল দেবে।কাজেই এখানে দ্বিমত থাকার কোনো সুযোগ নেই।’

কিন্তু নির্বাচক এবং টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যকার দ্বিমত-অবিশ্বাস দূর করার আর কোনো চেষ্টা না করে একটা স্বতঃসিদ্ধ নীতি বদলে ফেলাটা কেমন সমাধান! নিয়ম রক্ষার জন্য ব্যক্তির পরিবর্তন স্বাভাবিক, নাকি ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার জন্য নিয়ম বদল?

নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় টিম ম্যানেজারের অন্তর্ভুক্তিও বিস্ময়কর।কোচ-অধিনায়কের মত এখানে থাকতেই পারে, কিন্তু ম্যানেজার কেন? বোর্ড সভাপতি যা বোঝাতে চাইলেন তাতে মনে হলো, এখানে ম্যানেজারের ভূমিকা হবে অনেকটা ‘চাঁদের’ মতো।চাঁদের যেমন নিজস্ব আলো নেই, দল নির্বাচনে টিম ম্যানেজারেরও কোনো মত থাকবে না।তিনি করবেন দূতিয়ালি।নাজমুল হাসানের ভাষায়, ‘ম্যানেজারের ভূমিকা মূলত অধিনায়ক, সহ-অধিনায়কদের চিন্তাভাবনা নির্বাচক কমিটিকে জানানো।’ কিন্তু সেটা তো অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক নিজেরাই পারেন, মাঝখানে বার্তাবাহকের প্রয়োজন পড়ছে কেন? সভাপতির ব্যাখ্যা, ‘আমরা মনে করেছি ম্যানেজারের সঙ্গে অধিনায়ক এবং খেলোয়াড়দের যে যোগাযোগ আছে সেটা যথেষ্ট।তা ছাড়া একেক ফরম্যাটে অধিনায়ক একেকজন হতে পারে।ম্যানেজার তো ঠিক থাকবে।’ ভিন্ন ভিন্ন দলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন অধিনায়কের মতামতই বা কেন সরাসরি নেওয়া যাবে না, সেই প্রশ্ন এরপর আর কেউ করেনইনি।

নতুন প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত দল নির্বাচনে মোট ছয়জনের অংশগ্রহণ থাকলেও মাঠে মাঠে ঘুরে ঘরোয়া ক্রিকেট দেখে খেলোয়াড় খোঁজার দায়িত্ব থাকছে তিন নির্বাচকের কাঁধেই।কোচের খেলা দেখাটা বাধ্যতামূলক নয়! সে ক্ষেত্রে নির্বাচকেরা অচেনা কোনো প্রতিভা তুলে আনতে চাইলে কোচ কিসের ভিত্তিতে সে ব্যাপারে মতামত দেবেন?

এই প্রশ্নটা যেমন কৌতূহলোদ্দীপক, তেমনি দ্বিস্তরবিশিষ্ট দল নির্বাচন-প্রক্রিয়া নিয়ে বর্তমান নির্বাচকদের প্রতিক্রিয়া কী হবে, কৌতূহল থাকছে তা নিয়েও।কিন্তু প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ কাল এ নিয়ে কোনো মন্তব্যই করেননি।প্রতিক্রিয়া জানাতে তিনি বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান।

তবে নির্বাচকদের ঘনিষ্ঠ সূত্রের তথ্য, দল নির্বাচনে দুই বোর্ড পরিচালকের সম্পৃক্ততা এবং নির্বাচিত দলে কোচের পরিবর্তন আনার সুযোগ রাখাটাকে কোনোভাবেই স্বাগত জানাতে পারছেন না তাঁরা।