দুর্নীতির আখড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

2116

বিশেষ প্রতিনিধি: জাতির অহংকার মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এদেশের মানুষ যেন মুক্তিযুদ্ধ এবং তার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস জানতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। কিন্তু জাদুঘর সৃষ্টির প্রায় দুই যুগ পর এসে এটিকে পুঁজি করে ফায়দা লুটতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে কিছু মানুষ। এমনকি এইসব অনিয়মের মূলে রয়েছেন স্বয়ং জাদুঘর প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত ব্যাক্তিরা।

১৯৯৬ সালে ঢাকার সেগুনবাগিচার একটি ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের। এরপর ২০১৭ সালে আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবনে এটি স্থানান্তরিত হয়। মূলত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়, বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থায়ন এবং জনগনের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহের মাধ্যমে নির্মানকাজের অর্থের সংস্থান হয়। কিন্তু নির্মানকাজের সময়ই অর্থ লোপাট ও নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৩ কোটি টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রনালয় কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং তদন্ত কার্যক্রম এখনো চলছে। এছাড়াও সরকারী অর্থ খরচের জন্য দরপত্র আহ্বান, পিপিএ ২০০৬, পিপিআর ২০০৮ এবং সরকারী আদেশে উল্লেখ্য শর্তাবলী পালন করা বাধ্যতামূলক হলেও ট্রাস্টিরা এগুলোর তোয়াক্কা করেননি।

এসব অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারোয়ার আলী, মফিদুল হক ও জিয়াউদ্দীন তারিক আলীর বিরুদ্ধে। জাদুঘরের ট্রাস্টিবোর্ড ৮ জনকে নিয়ে গঠিত হলেও তাদের মধ্যে মূলত যাবতীয় কর্মকান্ডের অধিকাংশই সম্পাদন করেন এই ৩ জন ট্রাস্টি। তাদের তৎপরতায় ক্ষুব্ধ জাদুঘরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

জানা যায়, জাদুঘরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন প্রদানের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তা আসে ট্রাস্টিদের হাত ঘুরে। ফলে ন্যায্য বেতন হতে বঞ্চিত হয় তারা। দীর্ঘদিন চাকরি করার পরও ট্রাস্টিদের স্বেচ্ছাচারিতার ফলে লক্ষণীয় কোন বেতন বৃদ্ধি হয়নি জাদুঘরের কর্মীদের। তবে এসব স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে চাকরি যাবার ভয়ে মুখ খোলার সাহস পায় না কেউই।

এমন পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় জাদুঘরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সরাসরি সরকারি নিয়মানুযায়ী বেতন প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় আশার আলো দেখতে পায় তারা। এমনকি গত এপ্রিল-মে মাসের বেতন সরাসরি ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা হয়।

তার প্রেক্ষিতে জাদুঘর মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রনাধীনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে বাঁধ সাধে ট্রাস্টিরা। জাদুঘরের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয়ে সকলকে নোটিশ প্রদান করে ব্যাংক হতে বেতন উত্তোলন বন্ধ করে তারা। বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধামকি এবং ভয়ও প্রদর্শণ করে তারা।
তবে গেল আগস্টে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সরকার প্রদত্ত সকল বেতন-বোনাস উত্তোলনপূর্বক ট্রাস্টিদের নিকট জমা দিতে বাধ্য করা হয়। এরপর থেকে তারা পূর্বের মতই ট্রাস্টিদের নিকট থেকে বেতন গ্রহণ করছে।

এ বিষয়ে ট্রাস্টি জিয়াউদ্দীন তারিক আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ”জাদুঘর একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। ট্রাস্টিদের সম্মতি ব্যতীত সরকার এখানে অর্থ প্রদান এবং নিয়ন্ত্রন আরোপ করতে পারে না । বিগত ২৫ বছর আমরা যেভাবে চালিয়েছি সেভাবেই চালাতে চাই। সরকার চাইলেই এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।”

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে এবং নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণের জন্য এধরণের অপতৎপরতা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ন্যায্য বেতন বঞ্চিত এসব কর্মীরা।