জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করি —এম এ আউয়াল

1636

ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনীতি শুরু এম এ আউয়ালের। ৯০-এর দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছিলেন মিছিলের সামনে। অন্যায় আর অনিয়মের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছেন জোর প্রতিবাদ। পরবর্তীতে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নাম লিখিয়েছেন। রাজনীতি পাগল এ মানুষটির একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষের সেবা করা।

২০০৫ সালে যখন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন গঠণ হয় তখনই ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। বর্তমানে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিবের গুরুদায়িত্ব তার কাঁধে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তীব্র প্রতিন্দ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে নৌকা প্রতিককে বিজয়ী করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটেরও শীর্ষ নেতা তিনি। সাম্প্রতিক রাজনীতি ও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি মুখোমুখি হয়েছেন মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল ‘এখন’- এর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আল নাহিয়ান

AWAL-4

এখন: রাজনীতি শুরুর গল্পটা শুনতে চাই।
এম এ আউয়াল: আমার রাজনীতি শুরু ছাত্র থাকাকালীন। তখন থেকেই শিক্ষার্থীদের নানা দাবি নিয়ে সক্রিয় ছিলাম। পরবর্তীতে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ি। আপনারা জানেন, দেশের বড় একটি একটি শ্রমিক হলেও তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলার মানুষ বেশি নেই। সে কথা বিবেচনা করেই আমি শ্রমিক আন্দোলন করি। এনজিওদের নিয়ে একটি ফোরামও করেছিলাম একসময়। তারপরে ২০০৫ সালে তরিকত ফেডারেশন যখন গঠন হয় তখন প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্য ছিলাম। এ দলে আমি সাংগঠনিক সম্পাদক, মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন শেষে এখন মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছি।

আপনি তো প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ী। তবুও কেন রাজনীতির কঠিণ পথে নাম লেখালেন?
রাজনীতির পথ অত্যন্ত কঠিণ। তবুও এ পথেই মানুষের মুক্তি। রাজনীতিই পারে পরিবর্তন এনে দিতে। ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসা করে আমি ভালো ছিলাম, এটা ঠিক। কিন্তু মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য রাজনৈতিক একটা বড় প্লাটফর্ম। নিজে ভালো থাকাই আমার উদ্দেশ্য নয়, সবাইকে নিয়ে ভালো থাকাই আমার উদ্দেশ্য। তাছাড়া রাজনীতি করি মানুষের সেবা করার জন্য। এ ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। এটা সত্যি যে ব্যবসায় আমি সবমিলিয়ে খারাপ নেই। তবুও যখন মানুষের কথা ভাবি, তখন তাদের জন্য কিছু করার একটা দায়িত্ববোধ ভেতরে জেগে উঠে। সে দায়িত্ববোধ থেকেই রাজনীতির এ মাঠে আমি কাজ করে যাচ্ছি।

আপনারাই তো সবার আগে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছিলেন।
আমি গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে রাজনীতি করতে পছন্দ করি। আমাদের বড় অর্জন মুক্তিযুদ্ধ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। এর বিরোধীতা করেছে পাকিস্তানের এজেন্ট জামায়াতে ইসলামী। তারা স্বাধীনতা সংগ্রাম চায়নি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দল চেয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামও করেছে। কিন্তু কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ কেউ নেয়নি। আমরাই কার্যকরি ভূমিকা রেখেছি। আমরা দেখলাম, তারা রাজনীতিতে তারা যেভাবে দিনদিন সক্রিয় হচ্ছে, তাদের মোকাবেলা কেবল রাজনীতি দিয়ে নয়, আইনীভাবেও মোকাবেলা করেছে। তাই তাদের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে আমরা হাইকোর্টে রিট করেছি। এখনও সে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।

AWAL-2এ কাজ করতে গিয়ে কখনো ঝুঁকি মনে হয়নি?
ঝুঁকি তো আছেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাজনীতি করছি। জামায়াত তো একটা সহিংস সন্ত্রাসী দল। তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান করাটা সহজ কথা নয়। কিন্তু কোনো কিছুর পরোয়া না করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এ দলটির বিপক্ষে অবস্থান নেই। যতোদিন বেঁচে আছি, জামায়াতের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান এমনই অটল থাকবে।

আপনার নির্বাচনকে ঘিরেও তো রামগঞ্জে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে।
ঠিক বলেছেন। আমার নির্বাচনটা ছিলো একটা চ্যালেঞ্জ। লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে স্বাধীনতার পরে কেউ কোনোদিন নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়ে আসতে পারেনি। এবারই আমি প্রথম তরিকত ফেডারেশন থেকে প্রার্থী হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতিককে জয়ী করে আনতে পেরেছি। সেজন্যও আমাকে কঠিণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। সারাদেশে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সেদিন আমার নির্বাচনী এলাকার ২২টি কেন্দ্র জামায়াত বিএনপি জ্বালিয়ে দিয়েছিলো। পরবর্তীতে ১৬ জানুয়ারি আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শক্ত প্রতিন্দ্বন্দ্বিতার মাধ্য দিয়ে আমি জয়ী হয়ে আসি।

সংসদ সদস্য হওয়ার পরে আপনার এলাকার কোন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন?
সবার আগে আমি সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে জোর দিয়েছি। রামগঞ্জ এলাকাটি তিনটা এলাকার সীমান্তবর্তী হওয়ায় অবাধে মাদক আনা নেওয়ার সুযোগ এখানে আছে। আমি সবার আগে সেটা নির্মূলের উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি আমার এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে আমি সচেতন। স্কুল রাস্তাঘাট, মসজিদ মন্দির, কালভার্টসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি। প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার কাজ আমি করেছি। তবে আমার স্বপ্ন রামগঞ্জকে মডেল এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেজন্য আরও এক হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। আগামীতে নির্বাচিত হলে সে কাজটি আমি বাস্তবায়ন করতে চাই।

AWAL-1আপনারা তো সরকারেরও অংশীদার। সরকারের সমালোচনা কীভাবে করেন?
আমরা সরকারের অংশীদার হলেও সংসদে এবং সংসদের বাইরে সরকারের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো নিয়ে সবসময়ই আলোচনা- সমালোচনা করি, সেগুলো নিয়ে মতামত দেই। আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন আমাদের দলের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিও বিভিন্ন সময়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে এসব নিয়ে কথা বলেছেন আমিও বলি। যেমন ৩২ ধারা নিয়ে আমি কথা বলেছি। আমরা দাবি তুলেছি, এ ধারাটি আরও বিবেচনা করা উচিত।

আপনার সংসদীয় আসনের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন?
আমার এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেমন আছে, এটা যাতে আরও উন্নত হয় সেজন্য আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা গঠনে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি চাই, পুলিশ যেনো মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের বন্ধু না হয়ে যায়। তেমনই নির্দেশনা দেয়া আছে আমার। তবে এ অবস্থার আরও উন্নয়ন প্রয়োজন এবং সেজন্য কাজও করে যাচ্ছি।

আগামীর পরিকল্পনা কী?
পরিকল্পনা তো একটাই- এলাকার উন্নয়ন আর মানুষের সেবা করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব সেক্টরে যেভাবে উন্নয়নে ধারা শুরু করেছেন, সে ধারা যেনো আমার এলাকাতেও অব্যাহত থাকে, সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে ‌১ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছি। আমি রামগঞ্জ নিয়ে যে স্বপ্ন দেখি, সেটা বাস্তবায়নে আরও ১ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রয়োজন। আমি চাই সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত, আর্থসামাজিকভাবে উন্নত একটি রামগঞ্জ গঠণ করতে। যেটা হবে একটি আধুনিক, আদর্শ ও মডেল এলাকা। সে পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।