জাকির নায়েকের সঙ্গে বৈঠক করতো জঙ্গিরা

1083

আন্তর্জাতিক ডেক্স ।।

ভারতের ধর্ম প্রচারক ডা. জাকির নাইকের সঙ্গে জঙ্গিরা গোপন বৈঠক করেছে বলে দাবি করেছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, খাগড়াগড় বিস্ফোরণে অভিযুক্ত জঙ্গিদের একাংশ বিহারের কিষাণগঞ্জে জাকির নাইকের সঙ্গে বহু গোপন বৈঠকও করেছিল।

মঙ্গলবার আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের দুবছর পর ‘তথ্যটি’ এমন সময় উঠে এলো যখন ঢাকার গুলশানের জেএমবি হামলা ভারতসহ সারা বিশ্বে আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং দাবি করা হচ্ছে, গুলশানের হামলাকারীদের কয়েকজন জাকির নাইকের বক্তব্য শুনে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এবং ভারতে যে জঙ্গিকে জেরায় গোয়েন্দারা জাকিরের ‘গোপন বৈঠকের’ বিষয়টি জানতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন, সেই শাহনুর আলম গ্রেফতার হন ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে।

আনন্দবাজারে প্রতিবেদনে বলা হয়, কিষাণগঞ্জে জাকিরের প্রকাশ্য সভায় বাধ্যতামূলকভাবে হাজির হওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের জেএমবি সদস্যদের জরুরি নির্দেশ দেয় নেতৃত্ব। গোয়েন্দারা জাকিরের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ হিসেবে তাকে দেশদ্রোহ ও বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে অভিযুক্ত করার বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। সাম্প্রতিককালে জঙ্গি সন্দেহে আটকদের মধ্যে যারা জাকিরের বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে, তাদের তালিকা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মামলায় উঠে আসা তথ্য প্রাসঙ্গিক হতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন।

গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর খাগড়াগড়ে জেএমবির আস্তানায় বিস্ফোরণের কয়েক মাস আগে কিষাণগঞ্জে সভা করেন জাকির নাইক। ওই সংগঠনের সব সদস্যকে সভায় থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ রহমতুল্লা ওরফে সাজিদ। গোয়েন্দাদের দাবি, বর্ধমানে জেএমবি প্রধান তিনি।

ডা. জাকিরের ওই সভায় বর্ধমানের ইউসুফ গাজি ও রেজাউল করিম, বর্ধমানের একটি হাইস্কুলের আরবি শিক্ষক জিয়াউল হক, বিস্ফোরক জোগানদার আমজাদ আলি শেখ ওরফে কাজলের মতো জেএমবি নেতা ও সদস্যরা হাজির ছিল। খাগড়াগড় মামলায় গ্রেফতার অসমের হাতুড়ে ডাক্তার শাহনুর আলম জেরায় তা জানিয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের।

এক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা অফিসারের ভাষ্য, “কিষাণগঞ্জে জাকির নাইকের সঙ্গে সাজিদ, ইউসুফ গাজিসহ জেএমবির হোতারা একাধিক গোপন বৈঠক করে। না-হলে জাকিরের প্রকাশ্য সভায় ভিড় জমানোর জন্য বাধ্যতামূলক উপস্থিতির নির্দেশ জারি করার কী দায় ছিল?”

এ সম্পর্কে জাকির নাইক বলে আসছেন, তার অসংখ্য ভক্ত গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে আর তাদের মধ্যে কেউ যদি তার বক্তৃতা থেকে জঙ্গি কাজকর্মের অনুপ্রেরণা পায়, সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, জাকির নাইকের সব বক্তৃতা যে প্রকাশ্য, তা নয়। তার কিছু বক্তৃতার ভিডিও রেকর্ডিং করে সিডি ও পেন ড্রাইভের মাধ্যমে গোপনে প্রচার করা হয়। সেই সব বক্তৃতার ভাষা যথেষ্ট উসকানিমূলক।

তারা বলছেন, নদিয়া-মুর্শিদাবাদে এমন প্রচারে বড় ভূমিকা নিয়েছিল খাগড়াগড় বিস্ফোরণে গ্রেফতার গিয়াসউদ্দিন মুন্সি। তার তত্ত্বাবধানেই ২০১০ সালে নদিয়ার কালীগঞ্জের মির্জাপুর গ্রামে একটি আস্তানা তৈরি করেছিল জেএমবি। কিন্তু গ্রামের মানুষ সেই আস্তানা ভেঙে দেয়।

পরে গিয়াসউদ্দিন ওই এলাকায় গোপনে জাকিরের বক্তৃতার ভিডিও রেকর্ডিং প্রচার করেছিল। এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, “গিয়াস বলত, আমরা না হয় খারাপ। উনি তো পণ্ডিত মানুষ। উনি যা বলছেন, আমরাও কিন্তু সেই কথা বলছি।”

এক তদন্তকারী কর্মকর্তার, “গণ্ডগোল কিছু না থাকলে বক্তৃতার ভিডিও রেকর্ডিং সিডিতে বা পেন ড্রাইভে নিয়ে ল্যাপটপে জুড়ে গোপনে প্রচার করা হবে কেন?”