ড. কামাল হোসেন ও ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যকে ‘জগাখিচুড়ির ঐক্য’ বলে অভিহিত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, “এটা আসলে এটা জগাখিচুড়ির জাতীয় ঐক্য। এই জগাখিচুড়ির ঐক্য শেষ পর্যন্ত টিকবে, এটা আমার বিশ্বাস হয় না “
সোমবার সকালে কক্সবাজারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে গত শনিবার সকালে ঢাকা থেকে রওয়ানা হওয়ার পর ফেনী হয়ে চট্টগ্রামে এসে প্রথম দিনের সড়কযাত্রা শেষ হয়। সেখানে রাত্রিযাপন শেষে রোববার সকালে শাহ আমানত (র.) এর মাজার জিয়ারত করে দ্বিতীয় দিনের সড়কযাত্রা শুরু করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। চট্টগ্রাম হয়ে তারা কক্সবাজারে গিয়ে সড়কযাত্রা শেষ করেন।
রাত্রিযাপনের পর সকালে কলাতলী সৈকতের পাশে পুষ্পদম রেস্টুরেন্ট পরিদর্শন শেষে কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের পথসভায় লাখ লাখ লোক, এর সমপরিমাণ সমাগম তারা ঢাকায় করে দেখাতে পারবে? পারবে না। এখানেই তাদের গায়ের জ্বালা, অন্তর্জ্বালা, এখানেই তাদের হতাশা এবং হতাশা থেকেই আবোল-তাবোল বকছে।”
নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের সড়কযাত্রার বিষয়ে বিএনপির নেতারা সম্প্রতি বলেছেন, ট্রেনযাত্রায় ব্যর্থ হয়ে এখন রোডমার্চ করছে আওয়ামী লীগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেতুমন্ত্রী বলেন, “আওয়ামী লীগের পক্ষে, নৌকার পক্ষে ট্রেনযাত্রা ও সড়কযাত্রায় অচিন্তনীয়, অবিশ্বাস্য জনস্রোত দেখে বিএনপি একেবারেই হতাশ হয়ে পড়েছে। তারা হতাশা থেকে বকছে । এ নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।”
আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনী ট্রেন যাত্রা, সড়কযাত্রা সফল দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমাদের সবকিছুর কেন্দ্রাতিক শক্তি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তার উন্নয়ন, তার ব্যক্তিত্ব, তার অর্জন, তার সরকারের অর্জন, তার সরকারে উন্নয়ন এবং তার সততার প্রতি এ দেশের জনগণের গভীর আস্থা আছে। আজ দেশে-বিদেশে সততার জন্য তিনি সমাদৃত-প্রশংসিত। এই উন্নয়ন, তার প্রতিশ্রুতি, ব্যক্তিত্ব, তার সৎ সাহস, সততার জন্য দেশের মানুষ আস্থার সঙ্গে এই ট্রেনযাত্রা-সড়কযাত্রায় যোগ দিয়েছে। যে কারণে পথসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এটা শেখ হাসিনার ম্যাজিক লিডারশিপের সোনালী ফসল।”
বেসরকারি পুষ্পদম রেস্টুরেন্ট পরিদর্শন সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, “এখানে আমার আসার উদ্দেশ্যে হোয়াইটস্যান্ডস বেসরকারি উদ্যোগ পর্যটনের বিকাশে কাজ করছে। আমি ঢাকায় তাদের একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। তখন তারা আমাকে বলেছিল কক্সবাজারে কী কী করছে। আমি তাদের বলেছিলাম আমি যখন সময় পাই, কক্সবাজার গেলে আপনাদের পরিকল্পনা কোন কোন এলাকায় ঘুরে আমি দেখবো।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু সরকারি উদ্যোগই পর্যটন বিকাশে যথেষ্ট নয়। বেসরকারি উদ্যোগ লাগবে। আমি তাদের কাজ দেখে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি, পৃথিবীর সবচেয়ে আনব্রোকেন সি বিচ কক্সবাজার । অথচ এখানে সন্ধ্যার পর কোনো বিনোদন নেই। সন্ধ্যার পর রাতের কক্সবাজার যেন একেবারেই ফাঁকা ফাঁকা একটা ভুতুড়ে পরিবেশ। আমি রোহিঙ্গা সংকটের সময় কক্সবাজার এসেছি। তখন সবমিলিয়ে ৩৫ দিন থেকেছি। তখন আমার অভিজ্ঞতা দেখেছি সন্ধ্যার পর এখানে কোনো ফ্যাসিলিটিস নেই। বড়দের জন্যও নেই, ছোটদের জন্যও নেই, পর্যটকদের জন্যও নেই। এই রেস্টুরেন্ট নির্মাতারা বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।”
সমুদ্র সৈকতঘেঁষা মেরিন ড্রাইভকে আরও প্রশস্ত করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “যেন রাতের সমুদ্র মানুষ উপভোগ করতে পারে। পরিবেশটাকে আরও নান্দনিক করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাগর যেন দৃশ্যমান হয় সেজন্য রাতের বেলা লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করবো। আমি বেসরকারি উদ্যোগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে এসেছি। তবে অতীতে দেখেছি এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে অনেক প্রতারণা হয়েছে। এই উদ্যোগ নিয়ে যেন প্রতারণা না হয়, এটা তাদের প্রতি আমার আহ্বান।”
মন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেকুল্লাহ রফিক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।