গাজীপুর বারে বোমা: ৬ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল

1044

এখন রিপোর্ট ।।

গাজীপুর আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে ১১ বছর আগে বোমা হামলা চালিয়ে আটজনকে হত্যার ঘটনায় দশ আসামির মধ্যে জেএমবির ছয় জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাই কোর্ট।

এছাড়া দুই আসামির সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। দুইজনকে দেওয়া হয়েছে খালাস।

আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের শুনানি করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দেয়।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালে ওই দশ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল।

হাই কোর্টের রায়

মৃত্যুদণ্ড ছয় জনের: এনায়েত উল্লাহ ওরফে ওয়ালিদ ওরফে জুয়েল, আরিফুর রহমান ওরফে আকাশ ওরফে হাসিব, সাইদুর মুন্সী ওরফে শহীদুল মুন্সী ওরফে ইমন ওরফে পলাশ, আবদুল্লাহ আল সোহাইন ওরফে যায়িদ ওরফে আকাশ, নিজাম উদ্দিন রেজা ওরফে রনি ওরফে কচি ও তৈয়বুর রহমান ওরফে হাসান।

দুই জনের যাবজ্জীবন: মসিদুল ইসলাম মাসুদ ওরফে ভুট্টো, আদনান সামী ওরফে আম্মার ওরফে জাহাঙ্গীর।

খালাস দুই জন: মো. আশরাফুল ইসলাম ওরফে আরসাদ ওরফে আব্বাস খান, মো. সফিউল্লাহ ওরফে তারেক ওরফে আবুল কালাম

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবীর রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “দুই জনের সাজা কমানো ও দুই জনকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিলে যাব।”

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর গাজীপুর অ্যাডভোকেট বার সমিতির দুই নম্বর হলে শক্তিশালী দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আইনজীবীদের দৈনন্দিন কার্যক্রম ও আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতির মধ্যে ওই হামলায় আত্মঘাতী জেএমবি সদস্য আজাদ ওরফে জিয়া ওরফে নাজির ওরফে নাহিদ ঘটনাস্থলেই মারা যান।

পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গাজীপুর বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন; আইনজীবী নুরুল হুদা, আনোয়ারুল আজম ও গোলাম ফারুক এবং চার বিচারপ্রার্থী।

এ ঘটনায় জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও আতাউর রহমান সানী, আত্মঘাতী হামলাকারী ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. আলমগীর হোসেন।

তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৪ জুলাই পুলিশ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। তবে জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, আতাউর রহমান সানি ও খালেদা সাইফুল্লাহর অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এবং হামলাকারী আজাদ ও তার সহযোগী জেএমবি সদস্য মোল্লা ওমর ওরফে শাকিলের মৃত্যু হওয়ায় তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

গাজীপুর প্রথম আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল দশ জেএমবি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। একই বছরের ৩ অক্টোবর সরকার মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ পাঠায়।

এরপর আট আসামির বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আলাদাভাবে সংশোধিত চার্জ গঠন হয়। আলোচিত এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৭০ জন এবং আসামিপক্ষে তিনজনের সাক্ষ্য শোনে আদালত।

শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২০ জুন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মো. মোতাহার হোসেন যে রায় ঘোষণা করেন, তাতে দশ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

নিম্ন আদালতের রায়ের পর ওই বছরই আসামিদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য হাই কোর্টে আসে। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে চার আসামি আপিল ও দশ আসামি জেল আপিল করেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৩ জুলাই শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ২০ জুলাই।

গত ১৩ জুলাই হাই কোর্টে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবীর ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শহীদুল ইসলাম খান। আসামিপক্ষে ছিলেন দেলোয়ার হোসেন, আফজাল এইচ খান ও মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা।

২০০৫ ও ২০০৬ সালের বিভিন্ন সময়ে ওই দশ জেএমবি সদস্য গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন বলে শহীদুল ইসলাম জানান।

এখন/এনআইএম