এবার হজে যাবে না ইরান

1093

গতবার মিনায় পদদলনে প্রায় হাজার হজযাত্রীর মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে ‘নিরাপত্তা এবং নাশকতার’ প্রশ্ন তুলে এবছর হজ বর্জন করতে যাচ্ছে ইরান।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত দেশটির হজ ও তীর্থযাত্রা সংস্থার এক বিবৃতি উদ্ধৃত করে রোববার রয়টার্স এই খবর দিয়েছে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “সৌদি সরকারের চলমান নাশকতার কারণে আমরা ঘোষণা করছি… ইরানের হজযাত্রীরা এবছর হজে যাচ্ছেন না। এর জন্য সৌদি আরব সরকার দায়ী।”

ইরানের সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আলি জান্নাতি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, “গত বছর সৌদি সরকারের হজ ব্যবস্থাপনা এবং ইরান ও অন্যান্য দেশের নিহত হজযাত্রীদের যন্ত্রণার কথা বিবেচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের কাছে হজযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে প্রতিবেশী এই দুই দেশের সম্পর্কে বৈরিতা দীর্ঘদিনের। ধর্মীয় মতাদর্শিক অবস্থান নিয়েও রয়েছে দ্বন্দ্ব।

বার্ষিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান হজ পালনে প্রতিবছরই সারা বিশ্ব থেকে ২৫ লাখ মুসলিম সমবেত হন মক্কা তথা সৌদি আরবে।

গত বছর হজ চলাকালে মিনায় পদদলনে সৌদি সরকারের হিসাবেই সাত শতাধিক হজযাত্রীর মৃত্যু ঘটে, যাদের বেশিরভাগই ইরানি। ইরান তখন দাবি তোলে, নিহতের সংখ্যা অন্তত ২ হাজার, যা লুকাচ্ছে সৌদি সরকার।

ওই ঘটনার জন্য হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সৌদি কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে দায়ী করে ইরান সরকার। অন্যদিকে সৌদি কর্মকর্তারা দায়ী করেন ইরানি হজযাত্রীদের নির্দেশনা না মেনে চলাকে।

গত বছরের ওই ঘটনার পর ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্কে নতুন করে টানাপড়েন দেখা দেয়। হজের মতো সারাবিশ্বের মুসলিমদের অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব এককভাবে সৌদি আরবের হাতে থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইরানি বিভিন্ন কর্মকর্তা।

আরব নিউজের তথ্য অনুযায়ী, হজ আর ওমরাহ মিলিয়ে বছরে গড়ে সাড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার আয় করে সৌদি আরব, যা দেশটির জিডিপির ৩ শতাংশ।

মিনায় পদদলনে নিহত হজযাত্রীরা মিনায় পদদলনে নিহত হজযাত্রীরা
হজের ঘটনায় টানাপড়েনের মধ্যে এই বছরের শুরুতে সৌদি সরকার একজন নেতৃস্থানীয় শিয়া ধর্মীয় নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দিলে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। ইরানের শিয়ারা তেহরানে সৌদি আরবের দূতাবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ইরান সরকারও সৌদি আরবের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে। সৌদি সরকার তার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।

সিরিয়া সঙ্কটসহ মধ্যপ্রাচ্যের নানা বিষয়েও দেশ দুটিকে পরস্পরবিরোধী ভূমিকায় অবস্থান নেয়।

এর মধ্যেই হজের বিষয়ে একমত হতে ইরানের হজ ও তীর্থযাত্রা সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে রিয়াদে যায়।

তবে ইরানের কূটনীতিকরা হজের বিষয়ে সমঝোতায় উপনীত হতে ব্যর্থ হয়ে গত শুক্রবার দেশে ফিরে যায় বলে সৌদি আরবের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়। এরপর দুদিন বাদেই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এল।

ইরানের সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেছেন, ইরানিরা যাতে এবার হজে না যায়, সেজন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবেই সব কাজ করেছে সৌদি আরব।

অন্যদিকে ইরানের নেওয়া এই সিদ্ধান্তের দায় অস্বীকার করেছে সৌদি আরব।

মিনায় হজযাত্রীদের সম্মিলন মিনায় হজযাত্রীদের সম্মিলন
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবাইর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “ধর্মীয় আচার পালনে কারও জন্য কোনো বাধা সৌদি আরব দেয় না।

“ইরান সমঝোতায় আসতে চায়নি, তারা হজের সময় বিক্ষোভের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিল।। কিন্তু এটা হজে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, যা কোনোভাবে অনুমোদনযোগ্য নয়।”

ইরানের হজ বর্জনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও দেশটি তিন বছর হজ বর্জন করেছিল।

১৯৮৭ সালে মক্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী মিছিলে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ৪০২ জন হজযাত্রী প্রাণ হারালে পরবর্তী তিন বছর ইরানিরা হজে যায়নি। তখন নিহত অধিকাংশই ছিলেন ইরানের নাগরিক।

এদিকে গত বছর হজে পদদলনের আট মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করেনি সৌদি সরকার।