‘উপাচার্যের বাসভবনে পূর্বপরিকল্পিত হামলা’

684

চাকরির নিয়োগে কোটাপ্রথার সংস্কার দাবিতে আন্দোলনের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালানো হামলা ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে একটি ‘পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের’ অংশ বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সমিতির সদস্যরা।

আজ সোমবার দুপুর পৌনে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানায় শিক্ষক সমিতি।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘গুজব ছড়িয়ে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছে। আন্দোলনকে ধ্বংসাত্মক করতে, সরকারকে বিব্রত করতেই পূর্বপরিকল্পিত হামলা।’

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল আরো বলেন, ‘চাকরির নিয়োগে কোটাপ্রথার সংস্কার দাবিতে আন্দোলন চলাকালীন রাতে সরকারের পক্ষ থেকে কথা বলতে আসেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন, সোমবার সকালে বৈঠকের কথাও জানান। কিন্তু এরপরই শুরু হয় ভাঙচুর-তাণ্ডব। ঢাবি ভিসির বাসভবনে যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে, যেভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা হয়েছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।’

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনের নামে ভাঙচুর কেন? যারা তাণ্ডব-ভাঙচুর চালিয়েছে, তারা আমাদের ছাত্র কিংবা আন্দোলনকারী, তা বিশ্বাস করি না। বহিরাগতরা মুখোশ পরে হামলায় অংশ নেয়। তারা ঢাবি কেন্দ্রীয় সিসি ক্যামেরার কন্ট্রোল রুমেও হামলার চেষ্টা করেছে।’

উপাচার্যকে ‘হত্যার চেষ্টা চালানোর’ এমন ঘটনা এর আগে কখনো দেখেননি উল্লেখ করে অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। আমরা চেষ্টা করেছি, ছাত্রদের ওপর কোনো ধরনের হামলা-হয়রানি যাতে না ঘটে, বহিরাগতরা যেন ঢুকতে না পারে। কিন্তু বহিরাগতরা যখন মুখোশ পরে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে, উপাচার্যের বাসভবনে ঢুকে পড়ে, তখন পুলিশের সহযোগিতা জরুরি ছিল।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ এবং সরকারের কাছে দোষীদের শাস্তির দাবি জানায় শিক্ষক সমিতি।

একই দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। পরবর্তী সময়ের করণীয় ঠিক করতে আজ বিকেল ৪টায় ঢাবি শিক্ষক সমিতি জরুরি সভার আহ্বান করেছে বলে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মো. সামাদ, অধ্যাপক আক্তার হোসেন, অধ্যাপক ইমদাদুল হক, অধ্যাপক নেজামুল হক ভূঁইয়া, জিনাত হুদা, অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবিতে গতকাল রোববার থেকে সারা দেশে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বানে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে গতকাল বিকেল ৩টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগ এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।

রাত পৌনে ৮টায় শাহবাগে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা ঢাবি এলাকা। বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এরপর দফায় দফায় চলতে থাকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া আর সংঘর্ষ। বাড়তে থাকে আহতের সংখ্যা, যেখানে ছিল পুলিশ সদস্যও। গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর করা হয়।