আগোরায় প্রতারণার ফাঁদ, বিভ্রান্ত ক্রেতারা

1040

এখন রিপোর্ট ।।

‘আগোরায় ২৭০ টাকায় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে’ —এমন বিজ্ঞাপন দেখে শান্তিনগরের আগোরায় এসেছেন এক বৃদ্ধা। ৮৫ বছর বয়স্কা মায়ের জন্য ইলিশ কিনতে এসেছেন তিনি। কিনতে গিয়ে ইলিশতো পেয়েছেন কিন্তু তা ২৭০ টাকায় নয় বরং ৪৬৯ টাকায়। মাথায় হাত এই প্রবীণার।

বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রবীণ এই নারীর সাথে শান্তিনগর শাখায় আগোরার ম্যানেজার আনোয়ারের কথা হচ্ছিল। ক্ষোভ জানিয়ে তিনি ম্যানেজারকে বলেন, ‘’বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন যে ২৭০ টাকায় ইলিশ বিক্রি করছেন। কিন্তু এখানে এসে এই দামের কোনো ইলিশই পেলাম না। ইলিশের দাম শুরুই হচ্ছে ৪৬৯ টাকায়। এগুলোর কোনো মানে হয়! শধু শুধু মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন আপনারা।’’
এ সময় ম্যানেজার আনোয়ার বলেন, ‘’ম্যাডাম আপনার মোবাইল নাম্বার রেখে যান। ঐ দামের ইলিশ এলে আপনাকে জানানো হবে।’’
প্রবীণা তখন হতাশ হয়ে বললেন, ‘’আপনি না হয় আমাকে কল করবেন। কিন্তু এই জ্যাম ঠেলেতো আমাকে আসতে হবে। যেই জিনিষ নেই তার বিজ্ঞাপন কেন দেন!’’
5739194904_a7329675b7_b
অন্যদিকে পটল কিনতে এসে শান্তিনগরের বাসিন্দা লিজা আহমেদের চোখ ছানাবড়া। পচা পটল সাজিয়ে রেখেছে আগোরা কর্তৃপক্ষ। পচা পটল কেন সাজিয়ে রাখা হয়েছে জানতে চাইলে আগোরার বিক্রেতা রূঢ়ভাবে বলেন, ‘পটল এমনই!’

লিজা আহমেদ বলেন, ‘মানুষ সুপার শপে এসে বাড়তি দাম দিয়ে জিনিস কেন কিনবে? কেবলমাত্র মান ভালো পাওয়ার জন্য। কিন্তু এখানে এসে দেখি পচা পটল সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। জিজ্ঞেস করতেই তাদের কাছ থেকে ব্যবহার পেলাম তা সত্যি দু:খজনক। শুধু তাই না সামনে গিয়ে দেখুন শুকিয়ে যাওয়া ফুল কপি সাজিয়ে রেখেছে।’’

২৭০ টাকায় ইলিশ না থাকা, পচা পটল, পচা সবজির কথা স্বীকার করেছেন খোদ আগোরার শান্তিনগর শাখার ম্যানেজার আনোয়ার।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের ২৭০ টাকায় যে ইলিশ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে তা সাতক্ষীরা থেকে আসার কথা। কিন্তু এখনো তা আসেনি। এলেই বিক্রি শুরু হবে। আর এতো এতো পটল বিক্রি হয় তাতে দু একটি পচা পটল থাকতেই পারে। পেয়াজও এমনই দু একটি নষ্ট। এতো সব জিনিস বিক্রি হয় তার মাঝে দু একটি পণ্য নষ্ট থাকা অস্বাভাবিক কিছু তো নয়।’’

অন্যদিকে বাটা মসলার কৌটায় যে ফাঙ্গাস পড়েছে সেটা দেখিয়ে দিতেই আগোরার লোকদের বক্তব্য: ‘‘স্টক থেকে ভুলে চলে এসছে।’’

প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া বাইন মাছ আগোরার শান্তিনগর শাখায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ কিনতে গিয়েও বিরক্ত ক্রেতারা। কারণ আধা নষ্ট পেয়াজ রাখা আছে ঝুড়িতে।
ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, মানুষ টাকা দিয়ে মানসম্মত পণ্য কিনতে আসে এখানে। এসেই প্রতারনার শিকার হয়। কারণ মাছ নষ্ট, সবজি নষ্ট, চাল ডালের মান না নয় নাই বললাম।

মেঝেতে ময়লা। মাছ মাংসের মতো পচনশীল খাদ্যপণ্য যেখানটায় রাখা হয়, ঠিত সামনের মেঝেতেই পাওয়া গেল রক্তের দাগ। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিক্রি হয় মাছ মাংসসহ অন্যসব পচনশীল খাদ্যপণ্য।
p1000529
শুধু মান নিয়েই প্রতারণা থেমে নেই আগোরার। স্বাভাবিক দামের তুলনায় বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে তারা। ৩০ টাকার পটল আগোরায় বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা কেজি দরে। ১৪০ টাকার চোষা আম বিক্রি করছে ২০০ টাকা কেজি দরে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে আগোরার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘’আমাদের এখানে পণ্যের দ্বিগুণ দামের ট্যাগ লাগানো হয়। তবে এতে কিছু আসে যায় না কর্তৃপক্ষের। এই তো দুই মাস আগে ১০ জুন দামে কারসাজি করার কারণে আমাদের একটি শাখাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল ভ্রাম্যমান আদালত। কিন্তু মালিকপক্ষ কোনো না কোনোভাবে সেটা ম্যানেজ করে। তাই এসবের কোনো প্রভাব পড়ে না।’’

‘‘মালিকপক্ষ কিভাবে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করছে?’’–জানতে চাইলে চুপ হয়ে যান আগোরার এই কর্মকর্তা।

এখন/এসএস