আইএসের যৌনদাসী থেকে শান্তিতে নোবেলজয়ী

620

যৌন সহিংসতা ও হয়রানিকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার বন্ধে লড়াই করে চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন কঙ্গোর ধাত্রীবিদ্যাবিশারদ ডেনিস মুকওয়েজি এবং জঙ্গিদের হাতে ধর্ষণের শিকার ইয়াজিদি নারী নাদিয়া।

শুক্রবার সুইডেনের স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে এই দুই কর্মীর নাম ঘোষণা করেছে। যুদ্ধের সময় অস্ত্র হিসেবে যৌন সহিংসতার ব্যবহারের অবসানের লক্ষ্যে কাজ করে আসছেন এ দুই নোবেলজয়ী।

পাকিস্তানের নারী শিক্ষা অধিকার কর্মী মালালা ইউসুফ জাইয়ের পর সবচেয়ে কমবয়সী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মানজনক এই পুরস্কার জিতলেন ইয়াজিদি এই তরুণী। পুরো নাম নাদিয়া মুরাদ। বয়স ২৫।

জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হাতে উত্তর ইরাকের ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের এই তরুণী তিন মাস জিম্মি ছিলেন। এই সময়ে আইএস জঙ্গিরা তাকে ব্যবহার করেছে যৌনদাসী হিসেবে। ভয়ংকর সেই সময়ে চোখের সামনে আইএস জঙ্গিরা তার ছয় ভাই ও মাকে খুন করেছে। পালিয়ে এসে কঠিনভাবে ঘুরে দাঁড়ান নিজেকে নিয়ে। অক্লান্তভাবে কাজ করেছেন নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে। ব্যাপক ইতিবাচক সাড়াও ফেলেছিলেন তিনি। আর এমন অবদানই এখন তাকে এনে দিয়েছে নোবেল।

এর আগে ২০১৪ সালের আগস্টে ২৫ বছর বয়সী ওই নারীকে উত্তর ইরাকের কোজো এলাকা থেকে ধরে নিয়ে আইএসের একটি পক্ষের কাছে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয় আরেকটি পক্ষ।

এরপর সিরিয়ান, ইরাকি, তিউনিসিয়ান ও ইউরোপিয়ান আইএসের লোকের নিষ্ঠুর লালসার শিকার হতে হয়েছে তাকে। যন্ত্রণায় কেটেছে তার প্রতিটি মুহূর্ত। একপর্যায়ে অনেক কষ্ট-সংগ্রাম-কৌশল করে তিন মাস পর নভেম্বরে পালিয়ে আসেন তিনি।

যৌন নিপীড়িত-নির্যাতিত এই নাদিয়া ঘুরে দাঁড়িয়ে কাজ শুরু করেন ইয়াজিদি সম্প্রদায়সহ যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকের শরণার্থীদের আইনজীবী হিসেবে। মানবাধিকার আদায়ে এই ভূমিকার জন্য তাকে একবার ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে সম্মানজনক শাখারভ পুরস্কারেও ভূষিত করা হয়েছিল।

বুকে সাহস সঞ্চয় করে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে নাদিয়া রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। আর বলছিলেন, আইএস আমাদের সম্মান নিতে চেয়েছিল, কিন্তু এখন তারা সম্মান হারিয়েছে।

২০১৫ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্যানেলের সামনে নিজের ভয়ানক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছিলেন নাদিয়া।

সেসময় তিনি বলেছিলেন, “আমাদের যখন বন্দি করা হলো, তখন ওদের যৌন নির্যাতনের বিষয়ে শোনা কথাগুলো স্মরণ করে মনে-প্রাণে চাইছিলাম, এমন পাশবিক লালসার শিকার হওয়ার আগে যেনো আমাদের মেরে ফেলা হয়। কিন্তু ওরা আমাদের যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দিলো তাদেরই আরেকটি পক্ষের কাছে। এরপর কী যে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে! প্রতিটা মুহূর্তে মনে হয়েছে, আমাদের মেরে ফেলা হয় না কেনো, কেনো আমাদের এভাবে তিলে তিলে নির্যাতন করা হচ্ছে?”

নাদিয়ার সেই বক্তব্য ছিল এমন- তিন হাজারেরও বেশি নারী আইএসের হাতে যৌনদাসী হিসেবে বন্দি রয়েছে। আইএস এই হতভাগ্যদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছে! ইচ্ছেমতো জায়গায় বিক্রি করছে নারীদের।