অগ্রণী ব্যাংকের টাকা লোপাট করেছেন যারা

1099

এখন রিপোর্ট।।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ৬৮০ কোটি টাকা লোপাটে অভিনব কৌশল ব্যবহার করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। অর্থ জালিয়াতির এই চক্রে ব্যাংকের কর্মকর্তারাও জড়িত। যাদের মধ্যে শীর্ষ দু’জন হলেন অগ্রণীর অপসারিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আব্দুল হামিদ এবং উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মিজানুর রহমান। মিজানুর রহমান অবশ্য একদিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পেয়ে ওইদিন বিকেলেই দুদকের হাতে আটক হন। এ ঘটনা ঘটে গত জুলাই মাসের ১০ তারিখে।

জানা গেছে, মেসার্স ইলিয়াস ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেড নামের চট্টগ্রামের একটি ব্যবসায়ী প্রাতিষ্ঠানই ২২৫ কোটি টাকা জালিয়াতি করেছে, যা আর কোনোভাবেই আদায় করতে পারবে না ব্যাংকটি। অর্থাৎ পুরো টাকাই লোকসানের খাতায় চলে গেছে।

সহায়ক জামানত ছাড়াই অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানির জন্য বারবার নগদ লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) স্থাপনের সুযোগ দিয়েছে ব্যাংকটি।

সূত্র জানিয়েছে, মেসার্স রহমান হক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণের দায় পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে ১৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬১৯ টাকা।

মেসার্স এসকে জুট মিলস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির নেয়া ঋণের ২০ কোটি ১৭ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩০ টাকাও লোকসানের খাতায়। প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট আদায় না করে পুনঃতফসিলিকরণ ও ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পরও সময় বৃদ্ধি করায় ক্ষতি ১৭ কোটি ২৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা লোপাট করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি।

মাহী ফিশ প্রসেসিং লিমিটেড ১৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা লোপাট করেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ আদায় বাবদ ক্ষতি ১৩ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৬৮২ টাকা।

কোনোরকম জামানত ছাড়াই মেসার্স ওয়ানটেল কমিউনিকেশন লিমিটেড প্রকল্পে ঋণ বিতরণ এবং প্রকল্পের বাণিজ্যিক সফলতা না আসায় ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ১৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৩৫৫ টাকা।

পুনঃতফসিলিকরণ আদেশে অর্জিত সুদ ব্লকড হিসেবে প্রদর্শনের নির্দেশনা না থাকা সত্ত্বেও তা করায় ব্যাংক ৪৮ লাখ ৫৭ হাজার ৪৫৬ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত এবং নিয়মিত ঋণের দায় ব্লক হিসাবে স্থানান্তর করায় ব্যাংকের আরও ৩৫ কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৩ টাকা ক্ষতি হয়েছে। ব্যাংকের বন্ধকী সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য নিরূপণ না করে সুদ মওকুফ এবং মওকুফ অবশিষ্ট টাকা আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে আরও ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এসব অনিয়ম ছাড়াও ব্যাংকটি বারবার পুনঃতফসিলিকরণ ও অনিয়মিতভাবে কষ্ট অব ফান্ড কভার না করে সুদ মওকুফসহ পুনঃতফসিলিকরণের পরেও ঋণের টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৬৯ কোটি ১৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, ঋণ গ্রহীতার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিক্রয়ের ব্যবস্থা না করে এবং এককালীন মূল্য আদায় ছাড়া সম্পত্তি তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করায় ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ২২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। মেসার্স কওয়াটি ডিটারজেন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারণে এটি হয়েছে।

মেসার্স মাসাহা নিটিং অ্যান্ড ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের খেলাপি দায় থাকা সত্ত্বেও ব্যাক টু ব্যাক এলসি স্থাপন এবং মালামাল রফতানি করতে ব্যর্থ হওয়ায় সৃষ্ট ডিমান্ড লোন পুনঃতফসিলিকরণ ও পুনরায় ডিমান্ড সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ২১ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার ২৯৫ টাকা এবং ডেট কালেকশন খেলাপি ও অবলোপনকৃত ঋণের দায় চুক্তিপত্র অনুসারে আদায় না হওয়া সত্ত্বেও কমিশন প্রদান করায় ব্যাংকের আরও ৪৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর বাইরে ৯০ কোটি টাকা লুট হয়েছে কয়েকটি বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে। যাদের নাম ও পরিচয় বিস্তারিত জানা যায়নি।

জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, “ব্যাংকটি পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা ছিলো। তবে আমি নিয়ম নীতির মধ্যে সবকিছু করার চেষ্টা করছি।”

প্রসঙ্গত, ২০১০-১১ অর্থবছরে অগ্রণী ব্যাংকে ৬৬৮ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটে। পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদক তদন্তে নামে। তদন্তে অর্থ লোপাটসহ ১০ অভিযোগে দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলায় আটকের পর তারা জামিনে মুক্ত হন।